কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল বলে জানিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ব্রিফিং করে তিনি এ কথা জানান।
আজম খান বলেন, বেগম জিয়ার অবস্থা আবারও ক্রিটিক্যাল, গতকাল রাত থেকে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়েছে। ফাইট করছেন তিনি আমাদের মাঝে ফিরে আসার জন্য। এখনো অবস্থা ক্রিটিক্যাল আছে। বলবার মতো কোনো কন্ডিশনে এখনো তিনি আসেন নাই। সারা জাতির কাছে দোয়া চাওয়া ছাড়া আর কিছু বলা নেই।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে খালেদা জিয়া ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছেন। সিসিউ থেকে আইসিউ, এরপরে ভেন্টিলেশন বা লাইফ সাপোর্ট – যাই বলেন। আমি এগুলোর বাইরে বলব যে, ম্যাডাম খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন।
এর আগে সকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন অত্যন্ত অসুস্থ৷ হাসপাতালে আছেন তিনি। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্যের সবশেষ অবস্থা জানাবেন। তার জন্য সবাই দোয়া করবেন, দ্রুত যেন তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন।
গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। শুক্রবার গভীর রাতে তার অবস্থার অবনতি শুরু হয়। তিনি কয়েক বছর ধরে এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন। মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, খালেদা জিয়ার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। তার শরীর ক্রিয়াশীল আছে। হাত-পা কিছুটা নাড়াচাড়া করতে পারছেন। দুয়েকটি কথাও বলেছেন গতকাল।
পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার আলোচনা আছে। গতকাল বিকেলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য যে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো রয়েছে তার মধ্যে ভিসা, সম্ভাব্য একাধিক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ঠিক করা নিয়ে আলোচনা ও কাজ চলছে। যদি প্রয়োজন হয় এবং তিনি বিমানে যাতায়াতের জন্য উপযুক্ত হন; তাহলে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া ‘সংকটাপন্ন’ অবস্থাতেই আছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা চলছে। বিদেশের মধ্যে আমেরিকার জনস হপকিনস এবং লন্ডনের লন্ডন ক্লিনিকের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা তার চিকিৎসায় যুক্ত আছেন।
গতকাল রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা দেওয়ার দায়িত্ব হাসপাতালের, চিকিৎসাকর্মীর, স্বাস্থ্যকর্মীর। সারা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো যে চিকিৎসা ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেটি এখানে করার আয়োজন করা হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থার বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ওনার অবস্থা গত তিন দিন ধরে একই পর্যায়ে আছে।
জাহিদ বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার চিকিৎসা কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে তদারক করছেন। তিনি সার্বক্ষণিকভাবে চিকিৎসকদের সঙ্গে, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসা কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়, সেজন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ফুসফুসে সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর পর দেখা দেয় নিউমোনিয়া। তার কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের সমস্যা ছিল। ফলে একটির চিকিৎসা দিতে গেলে আরেকটির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
৮০ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।
আরও পড়ুন:
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে দলগতভাবে জড়িত আ.লীগ, মূল সমন্বয়কারী তাপস: কমিশন
প্লট বরাদ্দে জালিয়াতি: শেখ হাসিনার ৫, রেহানার ৭ ও টিউলিপের ২ বছরের কারাদণ্ড


