বিনোদন ডেস্ক : বাংলা চলচ্চিত্রের অমর চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর এবার তা হত্যা মামলার রূপ নিয়েছে। এ মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে সালমানের সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। আর অন্যতম আসামি (৪ নম্বর) খল অভিনেতা আশরাফুল হক ডন। এছাড়া এ মামলায় সামিরা হকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে সালমান শাহ হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে রমনা থানা পুলিশ।
জানা যায়, মামলাটি আদালতের নির্দেশে পুনরায় তদন্তাধীন থাকায় অভিযুক্তরা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে, সে জন্য রমনা থানা থেকে সংশ্লিষ্ট সব বিমান ও স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে দু–এক দিনের মধ্যেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন ডন। দেশের একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘সবাই বলছে আমি নাকি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ৩০ বছর পালাইনি, এখন পালাব কেন? আমি বাসাতেই আছি। ভাবছি, দু-এক দিনের মধ্যেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করব। কারণ ৩০ বছর ধরে যন্ত্রণা ভোগ করছি। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার।’
ডন আরও বলেন, ‘যে চলচ্চিত্র ভালোবেসে ঘর ছেড়েছি, অভিনয়ের ভালো সুযোগ পাওয়ার আশায় হার্টথ্রব সালমান শাহর সঙ্গে জুটি গড়েছিলাম। মা-বউয়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত মানুষটির সুখ-দুঃখের সাথী হয়েছি। তাকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সালমানকে ভালোবেসে আমার ক্যারিয়ারের বারোটা বেজেছে। আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। সালমানকে ভালোবেসেছি বলেই জীবনের প্রচণ্ড ঝড় মেনে নিয়েছি।’
সালমানকে ঘিরে দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সালমানকে ভালোবাসার যন্ত্রণা আর সইতে পারছি না। আমিও তো মানুষ, আমারও তো বাঁচতে ইচ্ছে করে। সালমানকে ভালোবেসে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে, আমি করিনি—এটাই কি আমার অপরাধ? আমি আত্মহত্যা করলেই কি সবাই খুশি হতো? ওপরে একজন আছেন, তিনি সব দেখেন। একদিন সত্য প্রকাশ হবেই, তবে আমি সেদিন দেখে যেতে পারব কি না জানি না।’
মৃত্যুর আগে সালমান শাহর সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের স্মৃতিও শেয়ার করেন ডন, ‘৩০ আগস্ট আমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসি। সালমান বলেছিল, পরিচালক শিবলী সাদিক ভাইকে জানাতে যে সে ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসে ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নেবে। আমি খবরটা পৌঁছে দিই। দুই দিনের ফাঁকে ভাবলাম বগুড়ায় ঘুরে আসি, কিন্তু বাস ধর্মঘটের কারণে ঢাকায় ফিরতে পারিনি। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর ঝড়ের মতো খবর—সালমান শাহ আর নেই।’
উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এ মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেন অভিনেতার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। তবে এতে দ্বিমত পোষণ করেন সালমান শাহর পরিবার। তাদের দাবি, সালমান শাহকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অপমৃত্যু মামলার তদন্তে তদন্তকারীরা বারবার প্রতিবেদন দাখিল করেন নায়ক আত্মহত্যা কিরেছেন। এতে না রাজি জানিয়ে রিভিশন দাবি করেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী।
গত ২০ অক্টোবর সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলাকে হত্যা মামলায় রূপান্তরের নির্দেশ দেন আদালত। মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেয়া নির্দেশের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম। এরপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত। তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, পুনঃতদন্তে নতুন তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণ যাচাইয়ের কাজ চলছে।
সালমান শাহ হত্যা মামলায় সর্বমোট ১১ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হত্যা মামলায় প্রধান আসামি নায়কের সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। অন্য ১০ আসামিরা হলেন প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মেফিয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও রিজভী আহমেদ ফরহাদ।
আরও পড়ুন:
আমার স্ট্যাটাসের সাথে পারিবারিক জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই: পূর্ণিমা


