স্পোর্টস ডেস্ক: পাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানের ৩ স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট দল।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) জানায়, পাকিস্তান তাদের পাকতিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে প্রদেশের রাজধানী শারানায় স্থানীয় একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তিন ক্রিকেটার প্রাণ হারান।
এসিবি এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে জানায়, তিন ক্রিকেটারের মৃত্যু আমাদের ক্রীড়া সম্প্রদায়ের জন্য গভীর শোকের বিষয়। আমরা নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে পাকিস্তানের সঙ্গে নির্ধারিত ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
নিহত তিন ক্রিকেটার শরানা শহরে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে বাড়ি ফেরার পথে সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় এক সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানেই হামলার শিকার হন তারা। তারা হলেন- কবির, সিবগাতুল্লাহ আতাল ও হারুন খান।
কারা ছিলেন এই তিন ক্রিকেটার?
আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের উরগুন জেলা থেকে উঠে আসা তিন তরুণ ক্রিকেটার সম্প্রতি ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এই তিন ক্রিকেটারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো।
কাবীর (কাবীর আগা)
পরিচিতি: কাবীর, যিনি স্থানীয়ভাবে কাবীর আগা নামেও পরিচিত, তিনি পাকতিকার উরগুন জেলার একজন উদীয়মান প্রতিভা।
খেলার ধরণ: তিনি একজন আক্রমণাত্মক টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত।
সাফল্য: ঘরোয়া কাঠামোয় আঞ্চলিক ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং সম্প্রতি এসিবি’র সাউদার্ন ক্রিকেট কমিটির আয়োজিত যুব টুর্নামেন্টগুলোতে নিয়মিত খেলেছেন।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: জেলা লিগগুলিতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে তাকে ২০২৬ সালে আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-২৩ প্রাদেশিক ক্যাম্পে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্তির সম্ভাবনা ছিল।
সিবগাতুল্লাহ
পরিচিতি: সিবগাতুল্লাহ ছিলেন পাকতিকার একজন তরুণ মিডিয়াম-ফাস্ট বোলার, যিনি স্থানীয় এসিবি-স্বীকৃত টুর্নামেন্টগুলিতে অংশগ্রহণকারী উরগুন ওয়ারিয়র্স ক্লাবের হয়ে খেলতেন।
খেলার ধরণ: তিনি তার ধারালো তীক্ষ্ণ ইনসুই ও নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং নেতৃত্বগুণের জন্য সবার নজর কেড়েছিলেন।
নেতৃত্বের গুণ: তাকে গত বছরের পাকতিকা প্রিমিয়ার লিগে অধিনায়কত্বের অন্যতম দাবিদার হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।
কোচিং মন্তব্য: কোচেরা তাকে একজন সুশৃঙ্খল ক্রিকেটার এবং শক্তিশালী নেতৃত্বের অধিকারী হিসেবে বর্ণনা করতেন। তিনি অঞ্চলের ক্রিকেট একাডেমিতে জুনিয়র বোলারদের মেন্টরিং করার প্রতিও অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন।
হারুন
পরিচিতি: হারুন ছিলেন একজন প্রতিশ্রুতিশীল অল-রাউন্ডার।
খেলার ধরণ: তিনি একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবং অফ-স্পিনার হিসেবে স্থানীয় টি-২০ এবং টেপ-বল লিগগুলিতে নাম করেছিলেন।
শিক্ষা ও ক্রিকেট: তিনি ক্রিকেটকে পূর্ণকালীন পেশা হিসেবে অনুসরণ করার পাশাপাশি একটি স্থানীয় কলেজে পড়াশোনাও করছিলেন।
বিশেষত্ব: সম্প্রতি তিনি একটি প্রাদেশিক উন্নয়ন ক্যাম্পে যোগ দেন এবং উরগুন জেলার অন্যতম বহুমুখী তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হতেন।
এদিকে, ক্রীড়া বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো জানিয়েছে, আগামী ১৭ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার অংশগ্রহণে এই সিরিজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
গত দুই সপ্তাহ ধরে দুই দেশের সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা চলছে। পাকিস্তানের একাধিক বিমান হামলায় আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির খবরও পাওয়া গেছে। এই সংঘাতের মধ্যেই ত্রিদেশীয় সিরিজের আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল শুরু থেকেই।


