বিনোদন ডেস্ক : ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বাংলা লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে তিনি মারা গেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় ঢাকার তেজকুনি পাড়া মসজিদে ফরিদা পারভীনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তার মরদেহ নেয়া হবে ‘অচিন পাখি’ গানের স্কুলে। সকাল সাড়ে ১০টায় মরদেহ রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, যেখানে শিল্পী, কলাকুশলীসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাবেন।
পরে সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মরদেহ নেয়া হবে কুষ্টিয়ায়। সেখানে পৌর কবরস্থানে মা–বাবার কবরের পাশে দাফন করা হবে ফরিদা পারভীনকে।
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী জানান, শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী ও ৪ সন্তান রেখে গেছেন।
ডা. আশীষ জানান, দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ফরিদা পারভীন। তাকে সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করাতে হতো। নিয়মিত ডায়ালাইসিসের অংশ হিসেবে ২ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। তখন ডায়ালাইসিসের পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তখন চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। এর পর থেকে তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শিল্পীর স্বামী প্রখ্যাত বংশীবাদক ওস্তাদ গাজী আব্দুল হাকিম সাংবাদিকদের জানান, সকালে প্রথমে ‘অচিন পাখি’ নামে গানের স্কুলে শিল্পীকে নেওয়া হবে। এরপর সকাল ৯টায় তেজকুনি পাড়া মসজিদে শিল্পীর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, শিল্পী, কলাকুশলীসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শিল্পীর মরদেহ সকাল সাড়ে ১০টায় নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় শিল্পীর মরদেহ নেওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে।
সেখানে আরেকটি নামাজে জানাজা হবে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ নেওয়া হবে কুষ্টিয়াতে। সেখানকার পৌর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরে দাফন করা হবে ফরিদা পারভীনকে।
প্রসঙ্গত, নজরুলসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান দিয়ে সংগীতজীবন শুরু করলেও পরে সম্পূর্ণভাবে লালনগীতিতে মনোনিবেশ করেন ফরিদা পারভীন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে তিনি লালনের গানকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। ২০০৮ সালে জাপান সরকারের ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কারেও ভূষিত হন। চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি ১৯৯৩ সালে সেরা প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্ম নেওয়া ফরিদা পারভীন গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে ফরিদা পারভীনের পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়। বাবার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়েছে তাকে।
সংগীত জীবনে তাকে পার হতে হয় অনেক চড়াই-উতরাই। নানা ধরনের গান করলেও শিল্পীজীবনে পরিচিতি, জনপ্রিয়তা, অগণিত মানুষের ভালোবাসা মূলত লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে। যখন থেকে লালনের গান গাওয়া শুরু হয়েছিল, তারপর আর থেমে থাকেননি।


