আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ও সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেনারেশন জেড-সদস্যদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
পদত্যাগপত্রে রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে তিনি লেখেন- ‘২০২৪ সালের ১৫ জুলাই সংবিধানের ধারা ৭৬ (২)-এর ভিত্তিতে আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। দেশের বর্তমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে—সংবিধানসম্মত রাজনৈতিক সমাধান ও সমস্যার উত্তরের উদ্যোগ প্রদানে—আমি সংবিধানের ধারা ৭৭ (১)-এর ভিত্তিতে আজকের তারিখ থেকে কার্যকর হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করছি।’
এর আগে সোমবার দেশটিতে বিক্ষোভ দমন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিবর্ষণে ১৯ জন নিহতের ঘটনার পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। কারফিউ ভেঙে অনেক নেতা ও মন্ত্রীর বাসভবনে ভাংচুর চালায় ও আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।
এমন উত্তাল পরিস্থিতিতে এক এক করে পদত্যাগ করতে থাকেন দেশটির সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও পানি সরবরাহ মন্ত্রী। আন্দোলনরত জেনারেশন জিদের পক্ষ থেকে দাবি আসে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের। এরপরই কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের খবর আসলো।
এর আগে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী কে. পি. শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন সরকার নতুন নিয়মনীতি না মানার অভিযোগে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্সসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয়। তবে নিয়ম মেনে চলায় টিকটকসহ পাঁচটি অ্যাপ এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে ছিল।
এই সিদ্ধান্তে ব্যবসা ও পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রবাসে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সাধারণ নাগরিকদের। এর প্রতিবাদে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ সাতটি শহরে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে আসেন। সোমবার কাঠমান্ডুতে পুলিশের বাধা ভেঙে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করে।
একপর্যায়ে গুলি চালানো হলে অন্তত ১৯ জন নিহত হন, যার মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয় রাজধানীতে। অবশ্য অবশ্য মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সরকার।
তবে ব্যাপক হতাহতের কারণে এই বিক্ষোভ রূপ নেয় অনেকটা সরকারবিরোধী আন্দোলনে। এছাড়া শুরু থেকে বিক্ষোভকারীরা শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদই নয়, বরং দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের স্লোগানও তোলেন, যা সরকারের টিকে থাকার ক্ষেত্রে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে নেপালে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হলেও একপর্যায়ে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে পার্লামেন্টের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে শুরু হয় সংঘাত।
এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। এই আন্দোলনকে ‘জেন-জি রেভল্যুশন’ নাম দেন বিক্ষোভকারীরা।
দেশটিতে দুদিনের সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১৯ জন। আহত হয়েছেন অনেকে। হতাহতের দায় নিয়ে আগেই পদত্যাগ করেন নেপালের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। আর অবশেষে চাপের মুখে পদত্যাগ করলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রীও।


