December 15, 2025 - 5:12 am
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeকর্পোরেট-অর্থ ও বাণিজ্যঅর্থ-বাণিজ্যবৃষ্টির পানিতে আবারও ভাসছে বেনাপোল স্থলবন্দর: দুই বছর লাগবে স্থায়ী সমাধানে

বৃষ্টির পানিতে আবারও ভাসছে বেনাপোল স্থলবন্দর: দুই বছর লাগবে স্থায়ী সমাধানে

spot_img

মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি : বৈরী আবহাওয়ার কারণে রবিবার রাতে ও সোমবার সারাদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে আবারও বেনাপোল স্থলবন্দরের শেডের (গুদাম) কানায় কানায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পানি নিস্কাশন না হলে এবং বৃষ্টির মাত্রা বাড়লে আবারো শেডের মধ্যে পানি ঢুকে ক্ষতি হতে পারে কোটি কোটি টাকার আমদানিকৃত পণ্য।

বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, বেনাপোল স্থলবন্দরের ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭, ও ১৮ নং শেডের কানায় কানায় বৃষ্টির পানি থৈ থৈ করছে। খোলা আকাশের নীচে যে সব মালামাল রাখা আছে সেগুলো বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। গত ৫ দিন আগের বৃষ্টির পানি রেলওয়ে মাটি কেটে বের করে দেয়া হলেও সেখান থেকে আস্তে আস্তে পানি বের হচ্ছে। গোটা বন্দরের পানি নিচু জায়গায় জমা হওয়ায় বন্দরের মধ্যে জমে থাকা পানি দ্রুত নিস্কাশন হতে পারছে না। বন্দরের পানি নিষ্কাশনের জন্য গত ৯ জুলাই ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হলেও তাতেও কোন সমাধান আসেনি। তাদের বক্তব্য জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ীভাবে পানি নিষ্কাশন সম্ভব নয়।

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে। জলবদ্ধতায় বেনাপোল স্থলবন্দরে অনেক স্থানে পানি জমায় মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানিতে কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নেই বন্দর কর্তৃপক্ষের।

তারা বলছেন, বেনাপোল বন্দরে বছরে ২২ থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে। এসব পণ্য রক্ষনাবেক্ষনে বন্দরে ৩৩টি শেড ও ৩টি ওপেন ইয়ার্ড ও একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড আছে। আকারে ছোট পণ্যগুলো রাখা হয় শেডের এবং বড় আকারের পণ্য রাখা হয় ওপেন ইয়ার্ডে। তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাশনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়ার্ডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটে। বিভিন্ন সময় এ অবস্থা থেকে উত্তরনে ব্যবসায়ীরা বন্দরের স্বরনাপন্ন হলেও গুরুত্ব নেই তাদের।

বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ আলী জানান, একটু বৃষ্টি হলেই বেনাপোল স্থলবন্দরের বিভিন্ন স্থানে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে আমার সাধারণ শ্রমিকরা কাজ করতে পারছি না, সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আমরাও কাজ করতে না পেরে বসে থাকতে হয়। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

সাধারণ শ্রমিকরা বলেন, আমরা জীবন জীবিকার জন্য এই বন্দরে কাজের জন্য আসি। কিন্তু অবিরাম বৃষ্টির কারণে কোন কাজ করতে পারছি না। এখন আমরা সবাই অলস সময় পার করছি। একদিন বৃষ্টি হলে তিন দিন ধরে জলাবদ্ধতা থাকে।

বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, বন্দরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। এর আগে কয়েকটি শেডে পানি ঢুকে অনেক আমদানিকারকের লাখ লাখ টাকার মালামাল পানিতে ভিজে নস্ট হয়ে গেছে। বন্দরের ভাড়া প্রতিবছর বাড়লেও তারা বন্দরের উন্নয়নে কোন ভূমিকা নিচ্ছে না। অধিকাংশ অবকাঠামোয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া তৈরি হওয়ায় বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। বারবার আশ্বাস দিলেও স্থায়ী সমাধান করা হচ্ছে না।

বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর হলো বেনাপোল। সরকার এই বন্দর থেকে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা একাধিকবার বন্দরের কাছে অভিযোগ করলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। এত বড় বাণিজ্যিক স্থাপনায় বছরের পর বছর এই দুর্দশা চললেও সরকার কোন পদক্ষেপ না নেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বৃষ্টির পানি পণ্যাগারে ঢুকে মালামাল ভিজে নস্ট হলে লোকসানের শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, একটানা ভারী বৃষ্টির কারণে স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে জমে থাকছে। গত ৯ জুলাই মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। রবিবার রাত থেকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত একটানা ভারি বৃষ্টিতে আবারে পানি জমে গেছে। সেটা দ্রুত নিস্কাশনের ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, স্থায়ীভাবে সমাধান করতে হলে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে। এর সাথে কয়েকটি সরকারি সংস্থা জড়িত। যার যার প্রতিষ্ঠান থেকে আপাতত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে যেমন, রেলওয়ে তাদের নিজস্ব তাদারকিতে পানি নিষ্কাশন করবে, সাথে কাস্টমসও তাদের মত পানি নিষ্কাশন করবে এবং স্থায়ী কোনো প্রকল্প হাতে না নেওয়া পর্যন্ত এ পানি নিষ্কাশনের সঠিক সমাধান হওয়া সম্ভব নয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

ওসমান হাদির অবস্থা অপরিবর্তিত : মেডিকেল বোর্ড

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ মো. ওসমান...

এমবিবিএস ভর্তির পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬৬.৫৭

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এবার পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। রোববার...

হাদির ওপর হামলাকারী মূল আসামি দেশেই আছে: ডিএমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকারী মূল আসামি দেশেই আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা...

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ৩৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে...

নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে পুলিশ

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়া হবে। এই প্রটোকলে রাজনৈতিক...

সূচকের পতনে লেনদেন শেষ

পুঁজিবাজার ডেস্ক: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার...

এন্টারপ্রাইজ কানেক্টিভিটি ও ডিজিটাল সল্যুশনে পিটিসি-এক্সেনটেকের কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি

কর্পোরেট ডেস্ক: পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি (পিটিসি)-এর সাথে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এক্সেনটেক পিএলসি। করপোরেট সার্ভিস, সিম-ভিত্তিক এন্টারপ্রাইজ সল্যুশন এবং ডিজিটাল সক্ষমতা...

গ্রাহক সন্তুষ্টির প্রত্যয় নিয়ে দেশের ১৬ অঞ্চলে ইউসিবির টাউনহল

কর্পোরেট ডেস্ক: একই দিনে, একই সময়—দেশের ১৬টি অঞ্চলে একসাথে টাউনহল। কোথাও ব্যাংকের চেয়ারম্যান, কোথাও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোথাও এএমডি, ডিমডি কিংবা সিনিয়র কর্মকর্তারা। পুরো দেশের...