বিনোদন ডেস্ক: লালন-সম্রাজ্ঞী লোকসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে তিন দিন আগে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুরুতে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। পরে কিছুটা উন্নতি হলে রোববার (৬ জুলাই) থেকে তাকে সাধারণ কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
এরইমধ্যে নেটদুনিয়ায় সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না জনপ্রিয় এ সংগীতশিল্পী।
সত্যি কী অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন ফরিদা পারভীন? এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক পোস্ট ও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন এই শিল্পীর ছেলে ইমাম জাফর নোমানী।
অর্থ সংকটে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না ফরিদা পারভীন, এ খবর জানতে পেরে কষ্ট পেয়েছেন শিল্পী। তা জানিয়ে ইমাম জাফর নোমানী বলেন, “যারা বিভিন্ন কথা ছড়াচ্ছেন তারা আম্মাকে কতটা সম্মান ও ভালোবাসেন তা আমার জানা নেই। তারা যদি সত্যি আম্মাকে সম্মান করতেন তাহলে এভাবে সম্মান নষ্ট করতেন না। বিভ্রান্তিকর নিউজগুলো যখন তার সামনে আসে তখন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সংবাদগুলোর প্রভাব সরাসরি আম্মার ওপরেও পড়ছে। সে তো এগুলো নিতে পারছেন না। তার আত্মসম্মানের জায়গাটা তিনি খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেন। অসুস্থ অবস্থায় পরিচিত কারো থেকে এ ধরণের কথা জানতে পারলে বেশি অসুস্থ হয়ে যান।”
ফরিদা পারভীন অসুস্থ হওয়ার পর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করেছে। তা স্মরণ করে ইমাম জাফর নোমানী বলেন, “২০১৯ সাল থেকে ওনার (ফরিদা পারভিন) কিডনির সমস্যা। অনেকদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডায়ালাইসিস শুরু হওয়ার পর থেকে তার শরীরটা খারাপ। এখন সবরকম চিকিৎসা চলছে। ওনার অসুস্থতার কথা জানার পর উপদেষ্টারা অনেকেই যোগাযোগ করেছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের বলা হয়েছে, আর্থিক সহায়তা লাগবে কিনা? মন্ত্রণালয় থেকে সাহায্য করতে চাওয়ার বিষয় জানতে পারলে আমার আম্মা (ফরিদা পারভীন) কোনো অনুদান নিতে রাজি হননি।”
সরকার যে অনুদান দিতে চেয়েছেন, তা দুস্ত শিল্পীদের দেওয়ার কথা বলেছেন ফরিদা পারভীন। এ তথ্য উল্লেখ করে ইমাম জাফর নোমানী বলেন, “আম্মা জানিয়েছেন চিকিৎসার খরচ বহন করার মতো সক্ষমতা আমার পরিবারের আছে। তিনি (ফরিদা পারভীন) প্রস্তাব দিয়েছেন, সরকার যে অনুদানটা তাকে দিতেন সেটা অসহায় ও দুস্ত শিল্পী যারা আছেন তাদেরকে দেওয়ার জন্য বলেছেন। আর্থিক অনুদান না নেওয়ার বিষয়টা খুব সম্মানের সঙ্গে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।”
অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কথা জানিয়ে ইমাম জাফর নোমানী বলেন, “আমাদের জায়গা থেকে আম্মার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার জন্য যথেষ্ট সামর্থ্য আছে। তাছাড়া আমরা যদি ব্যয়ভার বহন নাও করি, আম্মা তার নিজের অর্থ দিয়ে নিজের চিকিৎসা করার সামর্থ্য রাখেন।”
এরই মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফরিদা পারভীনের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজ করছে— এ খবরও পেয়েছে ইমাম জাফর নোমানী। এ বিষয়ে তার পরিষ্কার বক্তব্য—“আম্মার চিকিৎসার জন্য কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। এ ধরনের কোনো আবেদন আম্মা বা আমাদের পক্ষ থেকে করা হয়নি।”
প্রসঙ্গত, ফরিদা পারভীন ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারে নজরুলসংগীতের মাধ্যমে সংগীতজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৭৩ সালে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে তিনি সবার মন জয় করেন। লালনসংগীতে তার সরাসরি তালিম সাধক মোকসেদ আলী শাহর কাছ থেকে নেয়া। পরবর্তীতে এই ধারার এক অনন্য কণ্ঠ হয়ে উঠেন তিনি।
১৯৮৭ সালে সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ফরিদা পারভীনকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে সম্মাননা পান। এরপর ২০০৮ সালে জাপান সরকারের পক্ষ থেকে ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার পুরস্কার পান।


