কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫৪তম এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এই প্রথম বাজেটটি দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি)’র ১২.৭ শতাংশের সমতুল্য।
সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তব্য সম্প্রচার শুরু হয়। একই সঙ্গে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও বেতারেও প্রচার করা হয়েছে।
মোট বাজেটের মধ্যে পরিচালন ব্যয় ও অন্যান্য খাতে ৫,৬০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাবদ ২,৩০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বাজেট উপস্থাপন বক্ততৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুতের মূল্য আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতি আগামী মাসে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। চলতি বছর অতিরিক্ত ৬৪৮ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রেডে যুক্ত হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি। বাকি ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই বাজেটের আকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় কম।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রস্তাবিত সর্বশেষ বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী উপস্থাপন করেন। তবে চলতি অর্থবছরের মাঝপথে কাটছাটের ফলে সেই বাজেটের বাস্তবায়নযোগ্য আকার দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা।
জানা যায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় কিছু কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগী বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রামীণ পর্যায়ে কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরির উদ্যোগ থাকছে। এজন্য উজ্জীবিত করা হবে রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কারসহ গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের কর্মযজ্ঞকে।
জাতীয় সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট এবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয়। সংসদ না থাকায় আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না এবারের বাজেট নিয়ে। তবে বাজেট ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে অর্থ মন্ত্রণালয়। মতামতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আগামী ২৩ জুনের পর যেকোনো একদিন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হবে। পরে রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করবেন। এক জুলাই থেকে কার্যকর হবে নতুন বাজেট।
বিগত বছরগুলোতে বাজেট দেওয়া হতো জুনের প্রথম দিকে যেকোনো বৃহস্পতিবার। পবিত্র ঈদুল আজহা আগামী ৭ জুন পড়ে যাওয়ায় ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থ উপদেষ্টা। বাজেট–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে আগামীকাল মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায়। বরাবরের মতো এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন।
আরও পড়ুন:


