কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত সামিটে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার একশ’ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
রোববার (১৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের খরচ হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘সম্মেলন থেকে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা।’ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘খরচের হিসাব দিয়ে সামিটকে মূল্যায়ন করা যাবে না। বিনিয়োগের সব ক্রেডিট এই সামিটের নয়, এটা আগে থেকে চলতে থাকা আলোচনার ভিত্তিতে হয়েছে।
সামিটে এসেই বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়ে দেবেন, বিষয়টি এমন নয়। তাই এটাকে সামিটের সফলতা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। সামিটের খরচ দিয়ে বিনিয়োগের পরিমাণ বিচার করলে হবে না।’ এ ছাড়া ৬টি কম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের তথ্যও জানান তিনি।
এবারের সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেশি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি এবার ৫০টি দেশ থেকে ৪১৫ জন বিদেশি ডেলিগেট অংশ নিয়েছেন। সংখ্যার দিক থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ৫৮ শতাংশ।’
এছাড়া সরকার দেশের ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ১০০টির মধ্য থেকে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে চূড়ান্তভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
বাতিল করা অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সরকারিগুলো হলো-
সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক (কক্সবাজার), সুন্দরবন ট্যুরিজম পার্ক (বাগেরহাট), গজারিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (মুন্সীগঞ্জ), শ্রীপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল (গাজীপুর) এবং ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ময়মনসিংহ)।
বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হলো-
বিজিএমইএ গার্মেন্টস শিল্প পার্ক (মুন্সিগঞ্জ), ছাতক ইকোনমিক জোন (সুনামগঞ্জ), ফমকম ইকোনমিক জোন (বাগেরহাট), সিটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন (ঢাকা) এবং সোনারগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চল (নারায়ণগঞ্জ)।
বিডার চেয়ারম্যান জানান, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে সমুদ্রবন্দর বা বে টার্মিনাল স্থাপনের জন্য বিদেশি কোম্পানি চূড়ান্ত করা হবে। ওয়ান স্টপ সার্ভিসের সকল সেবা অনলাইন করা হবে। লাইসেন্সের ক্ষেত্রে সব সেবা একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আশিক চৌধুরী বলেন, ট্রানশিপমেন্ট বাতিলে দেশের অভ্যন্তরীণ এয়ারপোর্টগুলোকে আপগ্রেড করার সুযোগ তৈরি হবে।
এ সময় বিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘দেশের মানুষের সহনশীলতা, বিনিয়োগ সম্ভাবনার অবস্থা স্বচক্ষে দেখে বিদেশিরা উচ্ছ্বসিত। সামিটের সফলতা নিয়ে বিডা চিন্তিত নয়, বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরাই ছিল সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য।’ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমও উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ থেকে ১০ এপ্রিল রাজধানী ঢাকায় হয়ে গেলো বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫। দেশি-বিদেশি কমপক্ষে সাড়ে চারশোর মতো বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছিলেন এই আয়োজনে। চারদিনের এই সম্মেলনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের অমিত সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন আয়োজকরা, তরুণ প্রজন্মকে সামনে রেখে ২০৩৫ সালের রূপরেখা তুলে ধরেন তারা। ফলশ্রুতিতে অধীর আগ্রহ দেখিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে সম্মেলনে।