December 5, 2025 - 12:31 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসম্পাদকীয়দেশে মব ভায়োলেন্স-জননিরাপত্তার অবনতি, অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্র-জনতা কী ব্যর্থ?

দেশে মব ভায়োলেন্স-জননিরাপত্তার অবনতি, অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্র-জনতা কী ব্যর্থ?

spot_img

‘মানুষ নিরাপত্তাহীন ও আতঙ্কিত বোধ করছে, সবাই নিরাপদে থাকার জায়গা খুঁজছে। ভাবছি, লেখক-সাংবাদিকদের কী হয়েছে? কোথায় মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীরা? কোথায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা?

আইনের প্রতি অনুগত মানুষ একত্র হলে আমরা তাদের জনতা বলি। কিন্তু গুজব ছড়িয়ে যখন কিছু ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে অপরাধ সংঘটিত করে, ব্যক্তি বা স্থাপনায় হামলা করে, তখন তারা জনতা থাকে না, অপরাধী হয়। যেকোনো সমাজ বা রাষ্ট্র টিকে থাকে কতগুলো মৌলিক নীতি ও আদর্শের ওপর। সেখানে কেউ কারও ওপর হস্তক্ষেপ করবে না, একজন অপরজনের ওপর মত চাপিয়ে দেবে না। দিলে সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। যদি সরকার ব্যর্থ হয়, নৈরাজ্য তৈরি হয়। মানুষ আতঙ্কিত বোধ করে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে দেশে মব ভায়োলেন্সে অন্তত ১১৪টি ঘটনায় ১১৯ জন নিহত এবং ৩৭৪ জন আহত হয়েছেন। আইনের শাসন থাকলে এটি হওয়ার কথা নয়। আওয়ামী লীগের আমলে যখন মব ভায়োলেন্স বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে কথা উঠত, তখন ক্ষমতাসীনেরা সাড়া দিতেন না। বলতেন, ‘সাংবাদিকদের চোখ খারাপ’ বলে ভালো কিছু দেখতে পায় না। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও কেউ কেউ এ রকম দোহাই দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁরা বলেন, গত ১৫ বছর নিশ্চুপ ছিলেন কেন? এটাও নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার কৌশল। চেয়ারের মানুষ বদলায় কিন্তু চরিত্র বদলায় না।

সাম্প্রতিক কালের কয়েকটি উদাহরণ দিলেই মব ভায়োলেন্স কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটা বোঝা যাবে। গত সপ্তাহে গুলশানে ৮৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র, কোটি কোটি টাকা ও আওয়ামী লীগের দোসররা পালিয়ে আছেন বলে গুজব ছড়িয়ে মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা অভিযান চালাল; এর আগে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাত পড়েছে বলে দুই ব্যক্তিকে হত্যা করা হলো; লালমাটিয়ায় ধূমপানকে কেন্দ্র করে বাগবিতণ্ডায় দুই নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হলো। কিন্তু এসব ঘটনায় সরকার, ছাত্র-জনতা ও কোন রাজনৈতিক দলকে তেমন উদ্বিগ্ন হতে দেখছি না।

অপারেশন ডেভিল হান্টের বিশেষ অভিযানে সারা দেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১০ সহস্রাধিক। এরপরও অপরাধীরা কেন বেপরোয়া, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। মব ভায়োলেন্সের ক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিও পরিষ্কার নয়। আইনের ভাষায় যারা অপরাধ করবে, তারাই ডেভিল। কিন্তু সরকার কোনো কোনো ডেভিলকে ধরেছে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখেও না দেখার ভান করছে। বিভিন্ন স্থানে যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, যারা অন্যের বাড়ি-ঘর, দোকান-অফিস, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ঘাট ইত্যাদি দখল করে আছে, তাদের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এর সঙ্গে পেশাদার অপরাধীরাও যুক্ত হয়েছে কিংবা কারও রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

অপরাধ দমনে সরকারের ভূমিকা প্রধান হলেও নাগরিকদেরও দায় আছে। সরকার তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। কিন্তু আমরা নাগরিকেরাই কি দায়িত্ব পালন করছি? যখন কোথাও মব হয়, নারীকে হেনস্তা করা হয়, নাগরিকদের দায়িত্ব আক্রান্তের পাশে দাঁড়ানো ও আক্রমণকারীকে আইনের হাতে সোপর্দ করা। কিন্তু অনেক ঘটনায় নাগরিকেরাই আইন নিজের হাতে তুলে নেন।

লালমাটিয়ার ঘটনাটি উল্লেখ করা যায়। দুই তরুণীকে নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যে মন্তব্য করেছেন, তা অত্যন্ত আপত্তিকর। একদিকে তিনি দুই তরুণীর প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়া নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁদের যাঁরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করলেন, তাঁদের সম্পর্কে কিছু বললেন না। আরেক উপদেষ্টা বলেছেন, সেখানে আপসরফা হয়ে গেছে। কিসের আপসরফা?

দুই তরুণী যেভাবে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন, সে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এভাবে নারী হেনস্তাকারীকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যায় না। ওই নারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে বিধি মোতাবেক সেটিরও ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তা নিশ্চিত করাই তো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব, আপসরফা করা তো তাঁর কাজ নয়।

যে সমাজে সাংবাদিকেরা নিশ্চুপ থাকেন, মানবাধিকারকর্মীরা অন্যায়কে মুখ বুজে মেনে নেন, সে সমাজে মব সংস্কৃতিই জোরালো হয়। কেবল সাধারণ মানুষ নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এর সংস্কৃতির শিকার হন।

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকে জানা যায়, গত ছয় মাসে পুলিশের ওপর ২২৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা এলাকার আউটার রিং রোডে এক পুলিশ সদস্যের পোশাক ছিড়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে দেখা যায়, হামলা করে এসআই ইউসুফ আলীর পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। অসহায় অবস্থায় অঝোরে কাঁদছেন তিনি। যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মব থেকে রেহাই পান না, তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে, কার কাছে প্রতিকার চাইবে? সার্বিক যে পরিস্থিতি তাতে দেশে মব ভায়োলেন্স-জননিরাপত্তার অবনতি, সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা কী ব্যর্থ?

অতএব দেশে যে মব ভায়োলেন্স-জননিরাপত্তার অবনতি হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণে কঠোর প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকার, ছাত্র-জনতা, সাংবাদিক-মিডিয়া ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

কক্সবাজারে এসএমসি এন্টারপ্রাইজের বার্ষিক বিক্রয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত

কর্পোরেট ডেস্ক: এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বার্ষিক বিক্রয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) কক্সবাজারে হোটেল সি প্যালেসে এই সেলস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এই...

রাজনীতির ধ্রুবতারা খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে উঠুন

এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এমন এক নাম, যিনি দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র, আন্দোলন ও সংগ্রামের প্রতীক...

ডিএমপির ৫০ থানার ওসির রদবদল

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৫০ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদে রদবদল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত...

আগুনে দগ্ধ আরিফিন শুভ, তবুও চালিয়ে যান শুটিং

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা আরিফিন শুভ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তার নতুন সিনেমা ‘মালিক’-এর শুটিং চলাকালীন অ্যাকশন দৃশ্যের সময় শরীরে আগুন লেগে যায়।...

সূচকের পতনে লেনদেন শেষ

পুঁজিবাজার ডেস্ক: সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেন...

আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের ৬ পদক জয়

কর্পোরেট ডেস্ক: ২২তম আর্ন্তজাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড-এ (আইজেএসও-২০২৫) বাংলাদেশ দল ৬টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের বাংলাদেশ দলের টাইটেল স্পন্সর আল-আরাফাহ্...

আরও ৩৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরও ৩৬ আসনে দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) গুলশানে...