নিজস্ব প্রতিবেদক: মাগুরায় বোনের বাড়িতে ধর্ষণের শিকার ৮ বছরের শিশুকে লাইফসাপোর্টে নেয়া হয়েছে। শুক্রবার (৭ মার্চ) রাত ৯টার দিকে ওই শিশুকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শিশুর মামা ইউসুফ শেখ বলেন, রাত ৯টার দিকে চিকিৎসকরা ডেকে নিয়ে বলে শিশুটির অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হবে, রাজি থাকলে একটি কাগজে সাক্ষর দিতে বলে। পরে আমরা রাজি হই।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাত ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওই শিশুকে। বুধবার (৫ মার্চ) রাত ২টার দিকে মাগুরা সদর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে এই ঘটনার শিকার হয়।
শুক্রবার দুপুরে শিশুর ফুফাতো ভাই সুজন বিশ্বাস বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন, এখনো জ্ঞান নেই শিশুটির।
তিনি আরও জানান, শিশুটির বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার জারিয়া গ্রামে। বড় বোনের শ্বশুর বাড়ি মাগুরা সদর নিজনান্দুয়ালি গ্রামে। গত শনিবার বড় বোনের বাসায় বেড়াতে যায় শিশুটি। বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে শিশুটির বোন জামাই সজিব হোসেন (১৮) ও তার বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৫০) শিশুটিকে ধর্ষণ করে। বড় বোন টের পেয়ে গেলে তাকে আলাদা রুমে আটকিয়ে রাখে। সকালে বড় বোনের শাশুরি শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং প্রতিবেশীরা তাদের ফোন করে জানায় বিষয়টি। এর মধ্যে পুলিশ সজিব ও তার বাবা হিটু শেখকে আটক করে।
তিনি বলেন, শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ফদিরপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির অবস্থা ভালো না। এখন পর্যন্ত অচেতন অবস্থায় আছে। তার গলায় আঘাত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তার গলা টিপে ধরা হয়েছিল। বর্তমানে শিশুটি ঢামেক হাসপাতালের পিআইসিইউতে ভর্তি আছে।
এ ঘটনায় শিশুটির বড় বোনের স্বামী ভগ্নিপতি সজিব হোসেন (১৮) ও শ্বশুর হিটু শেখকে (৫০) আটক করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামের ৩য় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে শিশুটি রমজান ও ঈদের ছুটিতে স্কুল বন্ধ থাকায় কয়েক দিন আগে আপন বোনের বাড়ি মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালি মাঠপাড়া গ্রামে বেড়াতে আসে।
এদিকে, ধর্ষকের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের কর্মীরা।
শিশুটির ছোট চাচা ইব্রাহিম শেখ বলেন, চার-পাঁচ মাস আগে বড় ভাতিজিকে বিয়ে দেওয়া হয়। সুযোগ পেলে তার শ্বশুর হিটু শেখ তাকেও বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতেন বলে শুনেছি। যার কারণে বড় ভাতিজি বাপের বাড়িতে চলে এসেছিল। পরে তাকে বুঝিয়ে আবার শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
শিশুটির ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে বড় বোনের শ্বশুর জড়িত বলে দাবি করছে শিশুটির পরিবার। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে হিটু শেখকে আটক করেছে।
মাগুরা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি ওয়ার্ডের ডা. শিরিন সুলতানা বলেন, শিশুটির অবস্থা ভালো নয়। তার শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে মাগুরা সদর থানার ওসি মো. আইয়ুব আলী বলেন, ইতোমধ্যে সদর থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল এবং হাসপাতালে গিয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে। অভিযুক্ত হিটু শেখকে আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: