চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি, হামলা-পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

Posted on January 12, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ ও মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদকে অবরুদ্ধ করে হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত ‘ডট গ্যাং’ সদস্যদের বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের আরেক গ্রুপ অভিযোগ করেছে যে রাসেল আহমেদের নেতৃত্বে ছাত্রী লিজাসহ কয়েকজনকে আহত করা হয়েছে।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) বিকাল ৫ টার দিকে নগরীর ওয়াসা মোড়ের একটি অফিসে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তবে সেখানেও উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়, যখন আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির উপস্থিতি দেখে ছাত্রদের একটি পক্ষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

সংবাদ সম্মেলনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, "হামলার ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি আমার বিরুদ্ধেও যদি অভিযোগ থাকে, আমি আইনের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।"

তবে তার বক্তব্যের পরই সম্মেলনে উপস্থিত ছাত্রদের একটি গ্রুপ চিৎকার করতে শুরু করে এবং স্লোগান তোলে, "চাঁদাবাজদের ঠিকানা চট্টগ্রামে হবে না।" উত্তেজিত ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে কয়েকজন মানব দেয়াল তৈরি করে রাফিকে দ্রুত সেখান থেকে বের করে নিয়ে যান।

আহত ছাত্ররা দাবি করেছেন, ডট গ্যাংয়ের নেতৃত্বে একটি দল লাঠি, রড ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ওয়াসার মোড়ে হামলা চালায়। এতে তাওহীদ, মাহমুদ, আরিফ, মঈন উদ্দিন, নাছির, শরীফ, খলিল, তানভীর ও ওমর ফারুকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তারা জানান, হামলাকারীরা সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরমান সাদিকের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটায়।

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, "আমরা চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ কার্যক্রম চালাচ্ছিলাম। তখন ডট গ্যাং আমাদের অফিস অবরোধ করে এবং পরিকল্পিত হামলা চালায়।"

তবে ছাত্র আন্দোলনের আরেক পক্ষ অভিযোগ করেছে, রাসেল আহমেদ ও তার সমর্থকরা ছাত্রী লিজাসহ তাদের কয়েকজনকে আঘাত করেছে এবং লিফলেট বিতরণের বিষয়ে ছাত্রদের কিছুই জানানো হয়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ও সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ জানান, "জুলাই ঘোষণাপত্র" দেশের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তারা দাবি করেন, সরকারকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এটি প্রকাশ করতে হবে। তবে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই উদ্যোগ ব্যাহত করার চেষ্টা চলছে।

আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এর আগে জুলাই ঘোষণাপত্রের পক্ষে নগরের বিপ্লব উদ্যানে পথসভা এবং লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম চালানো হয়। বিকাল ৩টায় শুরু হওয়া পথসভায় সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, "আমাদের এই আন্দোলন বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।"

সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, "ষড়যন্ত্র যতই হোক, আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। ইনশাআল্লাহ, জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়িত হবেই।"

সংঘর্ষে আহত ছাত্ররা প্রশাসনের প্রতি দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছাত্রদের পক্ষে উপদেষ্টাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয় যেন ভবিষ্যতে এমন হামলা ও বিভেদ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন চট্টগ্রামে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

যদিও সিএমপি দক্ষিণ জোনের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেন, প্রেস ক্লাবে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সব সময় সজাগ।