নিজস্ব প্রতিবেদক: মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানা এলাকায় খুনের ঘটনার মতো পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চুরির ঘটনা । গত তিন মাসে ৩০টির অধিক চুরির ঘটনা ঘটলেও থানায় মামলা হয়েছে মাত্র দুইটি। চুরি বেড়ে যাওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক স্থানে গ্রামবাসীদের বাধ্য হয়ে রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে।
এদিকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর দাবী অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। সংঘটিত অপরাধের সাথে জড়িতদের তাৎক্ষনিকভাবে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
থানা পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুর দেড় টার দিকে জামসা ইউনিয়নের উত্তর বাস্তা গ্রামে সমর আলীর বাড়ি থেকে তার মেয়ে জান্নাতের স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল চুরি হয়। পাশের বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চোর সনাক্ত করা হয়। এলাকার লোকজন চুরির সাথে জড়িত জাহিদুল, নাজমুল ও শাকিলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। ৪ জানুয়ারি শায়েস্তা ইউনিয়নের নীলটেক গ্রামের আব্দুল জলিলের বাড়ির টিনের ঘরের বেড়া কেটে মালামাল নিয়ে যায়। গত ২ জানুয়ারি ধল্লা ইউনিয়নের গাজিন্দা পশ্চিম পাড়া জোনাব আলীর বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। সিন্দুকের তালা ভেঙ্গে নগদ ৩ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়।
২৫ ডিসেম্বর রাতে ফোর্ডনগর কমিউনিটি ক্লিনিকের লক্ষাধিক টাকা মূল্যের সোলার ব্যাটারী চুরি যায়। একই রাতে পার্শ্ববর্তী সাইদুর রহমানের মুদি দোকানের মালমালও চুরি হয়। ২৩ ডিসেম্বর মেদুলিয়া রহিম খাঁর বাড়িতে তালা ভেঙ্গে নগদ ১ লাখ টাকা ও রোপার অলংকার নিয়ে যায়। ১৫ ডিসেম্বর পৌর এলাকার বিনোদপুর মহল্লার গৈজুদ্দিনের বাড়ি থেকে ২ টি ষাঁড় গরু চুরি যায়। ৪ ডিসেম্বর পশ্চিম জামির্ত্তা ছালামের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় ৪ ভরি স্বর্ন, ৭০ ভরি রোপা ও নগদ চার লাখ টাকাসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট হয়। ওই রাতে গাড়াদিয়া উত্তর পাড়া গ্রামে রিপনের বাড়িতে চুরি করতে গেলে নিজাম উদ্দিন নামের এক চোরকে ধরে পুলিশে দেয় এলাকাবাসী। একই রাতে ওই গ্রামের এরশাদ আলীর বাড়িতে চুরির ঘটনায় স্বর্নলংকার ও একাধিক কম্বলসহ ৭ লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়। ২৫ নভেম্বর চাড়াভাঙ্গা আব্দুল মান্নানের বাড়িতে গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে ৬ লাখ টাকা ও স্বর্নলংকার নিয়ে যায়। ৯ নভেম্বর গোলাইডাঙ্গা গ্রামের ওহাব আলী,আব্দুল লতিফ ও জাহিদুলের বাড়িতে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে টিন ও গ্রিল কেটে স্বর্নালংকার, নগদ টাকা ও বিভিন্ন মালামাল চুরি করে।
৬ নভেম্বর সারারিয়া গ্রামে আসমত মাষ্টারের বাড়ি থেকে চোরেরা গ্রিল কেটে তালা ভেঙ্গে ক্যামেরা ও রোপার অলংকারসহ মালামাল চুরি হয়। ৫ নভেম্বর একই গ্রামের মাসুদ মাষ্টার ও তারা মেম্বারের বাড়িতে চুরি হয়। ৩ নভেম্বর রাতে চর নয়াবাড়ি আবুল কাশেমের বাড়িতে দুইজনকে হাত-পা বেঁধে জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামবাসী একজনকে গণধোলাই দিলেও অপর ৩ জন পালিয়ে যায়। ৩০ অক্টোবর দিবাগত রাতে থানা সংলগ্ন সিংগাইর পৌর বাজারের ব্যবসায়ী ইউনুসের দোকানের ক্যাশ বাক্স ভেঙে ৫০ হাজার,মাহতাবের ৩৫ হাজার ও আমজাদের ১৬ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। একই রাতে আজিমপুর মহল্লার বদর উদ্দিনের গোয়াল ঘর থেকে ৩ লাখ টাকা দামের দুটি গরু চুরি যায়। ওই রাতেই জয়মন্টপ নয়ানী গ্রামের আলাল মাঝির ৭ লাখ টাকা মূল্যের তিনটি গরু চুরি হয়।
গত ২৮ অক্টোবর তালেবপুর এলাকায় অটোরিকশার ব্যাটারী চুরির ঘটনা ঘটে। একই রাতে চর নয়াবাড়ি গ্রামে রনির বাড়ির ৭ জন,রৌশন আলীর ৪ জন, বরকতের ৫ জন, ছাত্তার আলীর ৫ জন ও ইস্রাফিলের বাড়ির ৪ জনকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে মালামাল লুটে নেয়। ২৬ অক্টোবর বলধারা ইউনিয়নের খোলাপাড়া গ্রামের উসমান আলীর দুটি গরু চুরি যায়। একই রাতে পার্শ্ববর্তী স্বরুপপুর গ্রামের তাপস সরকারের বাড়ি থেকে দুটি ও বিনোদপুর মহল্লার মিনহাজ উদ্দিনের বাড়ি থেকে একটি গরু চুরি যায়। ১৭ অক্টোবর ধল্লা ইউনিয়নের ভূমদক্ষিণ গ্রামে মুদি দোকানের মালামাল চুরি হয়। ১৫ অক্টোবর পৌর এলাকার নয়াডাঙ্গী মহল্লার রেজাউলের বাড়ি থেকে ৪ ভরি ওজনের স্বর্নালংকার ও সিরাজুলের বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়।
৯ অক্টোবর খোলাপাড়া সিরাজুল ইসলামের বাড়ি থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও আড়াই ভরি স্বর্নালংকার চুরি হয়। ৭ অক্টোবর বড় বাঁকা মজিদ আলীর বাড়ি থেকে ২ ভরি স্বর্নালংকার, ১০ ভরি রোপা ও ৫০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। ৬ অক্টোবর গোবিন্দলের ডুবাইল গ্রামের শামছুল হকের বাড়িতে চুরি হয়। চোরেরা ১০ ভরি স্বর্নালংকার ও ৫০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এসব সংঘটিত চুরি ঠেকাতে আইন-শংখলা বাহিনীর তৎপরতার জোর দাবী জানান সিংগাইর উপজেলাবাসী।
এ ব্যাপারে সিংগাইর থানার ওসি মো. জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, থানার রেকর্ড অনুযায়ী অতীতের চেয়ে বর্তমানে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ভালো। অপরাধ প্রতিরোধ ও নির্মূলে থানা পুলিশ তৎপর রয়েছে। চুরি ও ডাকাতি সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তাৎক্ষনিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।