মোঃ বাদল হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি।। পটুয়াখালীর গলাচিপায় ভূমি অফিসের সহযোগিতায় খালের ও নদীর চর সহ বিভিন্ন স্থানের খাস জমি বরাদ্দ নিয়ে কৌশলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নেয়ার মহোৎসব চলছে। এতে উজার হচ্ছে এ উপজেলার বনজসম্পদ। এছাড়া বন্দোবস্তের নামে খাস জমির মাটি কেটে বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গলাচিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া ইউনিয়নের কলাগাছিয়া ব্রিজ সংলগ্ন চরের ৯ একর খাস জমির বিশালকৃতির ৫ শতাধিক ছৈলাগাছ কেটে নেয়া হয়েছে। ্আলামত নষ্ট করার উদ্দেশ্যে ভেকু দিয়ে গোড়ার মাটি সহ এ গাছ তুলে নেওয়া হয়। এছাড়া চর কেটে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এতে কলাগাছিয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার খালের পাড় ভেঙ্গে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। এতে জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চিত্তরঞ্জন হালদার, পিপুল চন্দ্র বিশ্বাস, খোকা হালদার, পটুয়াখালী হর্টিকালচার বিভাগের সুপারেন্টেট সুশীল বিশ্বাস গং এ কাজ করেছেন বলে তারা স্বীকার করেছেন।
চিত্তরঞ্জন হালদার, পিপুল চন্দ্র বিশ্বাস, খোকা হালদার গংরা জানান, ‘কলাগাছিয়া ব্রিজ সংলগ্ন চরের ৯ একর খাস জমি এক বছরের জন্য বন্দোবস্ত নিয়েছেন। ভূমিহীন সাজিয়ে তাদের নামে এ বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। পাতাবুনিয়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি অফিসার তানিয়া আক্তার মুক্তা বিশ্বাস সরেজমিনে গিয়ে গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে পাতাবুনিয়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়- ‘তানিয়া আক্তার মুক্তা বিশ্বাস সেখান থেকে বদলী হয়ে গেছেন।’
বর্তমানে কর্মরত ইউনিয়ন সহকারী ভূমি অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ‘তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। এছাড়া যিনি এই কাজের সাথে জড়িত তিনি বদলী হয়ে বর্তমানে আমখোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত রয়েছেন। আরেক জায়গায় কর্মরত থেকে কিভাবে অন্য এলাকার কর্মকা- নিয়ন্ত্রন করেন, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।’
পরে তানিয়া আক্তার মুক্তা বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে প্রথমে বলেন- ‘ওই জমিতে কোন গাছ নেই।’ পরে ভিডিও চিত্রে গাছ এবং কাটার দৃশ্য দেখে বলেন, ‘কৃষি কাজ করার জন্য তিনি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে।’ গাছ কাটার অনুমতিদানের বিষয়টি বৈধ কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পটুয়াখালী হর্টিকালচার বিভাগে কর্মরত সুশীল বিশ্বাস তার সাথে ঐদ্ধ্যর্তপূর্ণ আচরণ করেছেন। এছাড়া ‘ওই হিন্দুগুলো অনুমতি ছাড়াই এই কাজ করেছেন’ এরকম নানা ধরণের অসংলগ্ন কথা বলেন ইউনিয়ন সহকারী ভূমি অফিসার তানিয়া আক্তার মুক্তা বিশ্বাস।
অপরদিকে, কলাগাছিয়া মৌজার ১নং খতিয়ানের ১৯১ নং দাগের প্রায় ২ একর খাস জমিজুড়ে পুকুর খনন করা হয়েছে। এ খনন কাজের সময় রেইন্ট্রি, চাম্বল, শিশু ও মেহগণি সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নেয়া হয়। আশ্রাফ খান ও ইলিয়াশ খান গং একাজে জড়িত বলে স্থানীয়রা জানান। এছাড়া এর আশপাশের প্রায় ৩০ একর জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। পলাশ এন্টারপ্রাজের সত্ত্ত্ত্বাধিকারী নামক এক যুবকের ইট ভাটায় এ মাটি ব্যবহার করা হয়।
জানা গেছে, পলাশ বছরে সরকারি জমির মাটি কেটে অর্ধ কোটি টাকা আয় করছেন। এভাবে বছরের পর বছর ধরে সরকারি জমির মাটি বিক্রি করে নির্ভিঘ্নে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন।
এ বিষয়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম সিকদার বলেন, ‘যাদের খাস জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ভূমিহীন নেই বললেই চলে। তারা কিভাবে ভূমিহীনের প্রত্যয়ন পেয়েছেন তা তিনি জানেন না বলেও দাবী করেন।
গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছিম রেজা বলেন, ‘খাস জমি মূলত চাষাবাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারি জমির মাটি কিংবা গাছ কাটার কোনো নিয়ম নেই। যদি কারো বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বরাদ্দ বাতিল করা সহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি। এছাড়া তিনি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন সহকারী ভূমি অফিসার কে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করার কথা জানান।’