শেখ হাসিনা চেয়েছে একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে: গোলাম পরওয়ার

Posted on December 12, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক: জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ সহ দেশের ইসলামী দলগুলোকে নিঃশেষ করে শেখ হাসিনা চেয়েছে একক কর্তৃত্ব কায়েম করতে চেয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এজন্য শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নামে দলীয় বিচারক, দলীয় প্রসিকিউটর দিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। সেই ট্রাইব্যুনালে দলীয় সাক্ষী দিয়ে সাজানো মামলায় শহীদ মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী, কামরুজ্জামান, কাদের মোল্লা, গোলাম আযম, আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, বিএনপি নেতা সালা উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বিচারিক হত্যা করা হয়েছে। হাসিনার গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা সাজানো মামলায় ফাঁসির আদেশ দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। তিনি সেই ট্রাইব্যুনালের বিচারক, প্রসিকিউটর, সাক্ষীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর পল্টন কলেজ মাঠে পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়ো করছে না, তবে কালক্ষেপণও চায় না। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন হবে না। আবার নির্বাচনে কালক্ষেপণ হলেও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে। তাই অন্তবর্তী সরকারের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করা।

পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এছাড়াও পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চায়। জামায়াতে ইসলামী দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে চায়। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগ মানুষকে সাপের মত পিটিয়ে হত্যা করেছে।

জামায়াত-শিবির জীবন ও রক্ত দিয়েছে কিন্তু রাজপথ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগের সাথে আপোষ করেনি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে আপোষ করেনি! জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন ও রক্ত দিয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ১৫ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে রেখেও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এক মিনিটও টিকতে পারেনি। ল²ন সেনের মত শেখ হাসিনা পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছে। পালিয়ে গিয়ে ভারতে বসে এখন দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আনসার লীগ, রিকশা লীগ, এই লীগ সেই লীগ সবশেষ ইসকন ইস্যুকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা দেশে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগাতে চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ ব্যতিত এদেশে কেউ হিন্দুদের সম্পদ দখল করেনি, হিন্দুদের মন্দির ভাংচুর করেনি। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক স্বার্থহাসিল করতে হিন্দুদের কে বারবার ব্যবহার করতে চেয়েছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেশ এখানে দাঙ্গা লাগানো যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অথচ ভারতে মুসলিমদের উপর সেখানকার হিন্দু জনগোষ্ঠী ও রাষ্ট্র জুলুম-নির্যাতন করছে। মসজিদ ভেঙ্গে দিচ্ছে। সেই ভারত থেকে আমাদেরকে সম্প্রীতি শিখতে হবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকবো।

এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠার তান্ডব চালিয়ে ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু করেছে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে ফ্যাসিবাদের চর্চা করেছে। গত ১৫ বছর যারাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছে, তাদেরকেই আওয়ামী লীগ নিঃশেষ করার মিশনে লিপ্ত হয়েছে। সেই মিশন থেকে রক্ষা পায়নি জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলামী, বিএনপি সহ বিরোধী দল ও মতের লোকজন। তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা থাকতে চেয়েছে। কিন্তু জনগণ তাদের জুলুম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। ঐ আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিজয় আসে। আওয়ামী পরাজিত হয়ে তাদের প্রভুদের কাছে ভারতে চলে গেছে।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, গণহত্যার দায়ে খুনি হাসিনার গ্রেফতার পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও ভারত তাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত প্রমান করেছে তারা বাংলাদেশের জনগণের সাথে বন্ধুত্ব করেনি এবং চায় না। তাদের বন্ধুত্ব শুধুই আওয়ামী লীগের সাথে। ভারত যদি এদেশের জনগণের সাথে বন্ধুত্ব চায়, তবে খুনি হাসিনার বক্তব্য প্রচার করতে দিতে পারে না, হাসিনার বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রে সমর্থন ও সহযোগিতা থাকতে পারে না এবং পারবে না। জুলাই- আগস্টের আন্দোলনের অর্জিত বিপ্লব বিশ^বাসী অনুসরণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিরিয়া আমাদের অনুসরণ করে সেখান থেকে স্বেরাচার বিতাড়িত করেছে। একে-একে ফিলিস্তিনি সহ সকল দেশ স্বৈরাচার ও দখলদার মুক্ত হবে এবং ইসলামের বিজয়ের পতাকা অচিরেই উড়বে।