December 14, 2025 - 11:57 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeজানা অজানাসাহাবি আবু ওয়াক্কাস গড়েছিলেন লালমনিরহাটের ‘হারানো মসজিদ’

সাহাবি আবু ওয়াক্কাস গড়েছিলেন লালমনিরহাটের ‘হারানো মসজিদ’

spot_img

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ঐতিহাসিক ”হারানো মসজিদ” প্রাচীনতম মসজিদ গুলোর মধ্যে অন্যতম। যার নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘জামেয়’-আস্ সাহাবা জামে মসজিদ। বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের প্রাচীনতম নিদর্শন সমূহের মধ্যে অন্যতম লালমনিরহাটের জামেয়-আস্ সাহাবা জামে মসজিদ। প্রায় ১৪শ’ বছর আগে নির্মিত এশিয়া মহাদেশের সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে মনে করা হয়। রংপুর- কুড়িগ্রাম মহাসড়কের এক কিলোমিটার দক্ষিণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজায় অবস্থিত এ মসজিদ।

১৯৮৬ সালের দিকে আশ্চর্যজনক ভাবে লালমনিরহাটে পাওয়া যায় এ প্রাচীন মসজিদ, যা বাংলাদেশের মুসলমানদের আগমনের প্রারম্ভিক ইতিহাসের রাজসাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

উল্লেখিত মসজিদটির উদ্ধারের ঘটনা :
লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রামের একটি জঙ্গলের আড়ার মাঝে আবিষ্কৃত হয় এ হারানো মসজিদটি। এক সময় স্থানীয় লোকজন জীবজন্তু ও সাপ-বিচ্ছুর ভয়ে এ জঙ্গলের আড়াটির ভেতরে প্রবেশ করত না। পড়ে ১৯৮৩-৮৪ সালে স্থানীয়রা এ জঙ্গলের আড়াটি চাষাবাদের জন্য পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয়। পড়ে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে গিয়ে তারা দেখে জায়গাটি সমতল জমি থেকে উঁচু এবং সেখানে রয়েছে প্রায় সাত থেকে আটটির মতো মাটির উঁচু টিলা।

জায়গাটি সমতল করার জন্য খনন শুরু হলে সেখানে প্রাচীন কালের তৈরি প্রচুর ইট পাওয়া যেতে থাকে। যে ইটগুলোতে অঙ্কিত কিছু নান্দনিক ফুল। সবাই ভেবে নিয়েছিল পুরনো কোনো জমিদার কিংবা রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ হতে পারে এটি। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ১০ মহররমের একটি ঘটনা তাদের স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলে।

আইয়ুব আলী (৫৭) নামের এক ব্যক্তি অন্য অনেকের মতো ইটের স্তূপ থেকে ইট কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে দেখেন ইটের ওপর কিছু একটা লেখা। পড়ে লেখা স্পষ্ট ভাবে দেখার জন্য পানিতে ভালোমতো ধুয়ে দেখতে পান এটি কোনো প্রাচীন শিলালিপি। যাতে লেখা আছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, হিজরি সন ৬৯।

পরে স্থানীয় লোকজন বুঝতে পাড়ে, এটি কোনো হারানো মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। পড়ে তারা সতর্কতার সঙ্গে মসজিদটির উদ্ধারকাজ চলাতে থাকে। পড়ে আবিষ্কার হয় মসজিদের মেহরাব, খুতবা দেওয়ার মিম্বার ইত্যাদি। এক পর্যায়ে ২১ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট একটি মসজিদের ভিত্তি সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়। যার দেয়ালের পুরুত্ব ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। এর একটি দরজা এবং ঘরের চারকোণে ৮ কোণবিশিষ্ট ৪টি স্তম্ভ রয়েছে। তাছাড়াও তলিয়ে যাওয়া মসজিদের ধ্বংসস্তূপ থেকে কারুকার্যময় ইট এবং গম্বুজের চূড়া পাওয়া যায়। পরে সেখানকার লোকজন মসজিদটিতে টিন দিয়ে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করে নামাজ আদায় করা শুরু করেন।

মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ১৩শ বছর আগে ৬৯ হিজরিতে। ধারণা করা হয়, হজরত আবু ওয়াক্কাছ (রা.) এ অঞ্চল দিয়েই চীনে পাড়ি জমিয়েছিলেন আর যাতায়াতের সময় এখানেই তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। বর্তমানে যার চীনের বিস্মৃত কোয়াংটা নদীর ধারে কোয়াংটা শহরে তাঁর নির্মিত মসজিদ ও তাঁর সমাধি রয়েছে। এ ধারণার থেকেই আরো ভালো করে বোঝা যায় এ হারানো মসজিদটি সাহাবি আবু ওয়াক্কাছ (রা.) নির্মাণ করেছেন, কেননা রোমান ও জার্মান ইতিহাসবিদদের লেখায় আরব ও রোমান বণিকদের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকাকে বাণিজ্যিক পথ হিসেবে ব্যবহারের কথা লিপিবদ্ধ আছে এবং বেশ কয়েকটি চলমান গবেষণায় ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার প্রমাণও পাওয়া যায়।

ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক টিম স্টিল দাবি করে বলেন, খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পার ধরে সিকিম হয়ে চীনের মধ্য দিয়ে আরব ও রোমান বণিকদের বাণিজ্য বহরের যাতায়াতের অনেক প্রমাণ রয়েছে তাঁদের কাছে।

এ মসজিদটি ৬৯০ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৬৯ হিজরিতে নির্মিত হয়। এ প্রাচীন মসজিদ পুনঃনির্মাণে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এ দিন অনুষ্ঠিত হয় ইসলামি মহাসম্মেলন। নতুন করে এ মসজিদের ভিত্তিস্থাপন করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা হজরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বংশধর ও ফিলিস্তিনের মসজিদে আকসার র্গ্যান্ড ইমাম শায়খ আলি উমর ইয়াকুব আল-আব্বাসি। সাহাবা মসজিদকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে তোলা হবে আস-সাহাবা কমপ্লেক্স।

উল্লেখ্য যে, ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে স্থানীয়রা মসজিদটি আবিষ্কার করে। ইসলামিক লেখক মতিউর রহমান বসনিয়া রচিত ‘রংপুরে দ্বীনি দাওয়াত’ নাম বইতে এ মসজিদের কথা তুলে ধরা হয়। রংপুর জেলার ইতিহাস গ্রন্থ থেকেও জানা যায় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আম্মা বিবি আমেনার চাচাতো ভাই হজরত আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ৬২০ থেকে ৬২৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে আসেন। এছাড়াও ১৯৯০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত দেশর গণমাধ্যমসহ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ মসজিদের সংবাদ প্রচার হয়েছে। বর্তমানে

প্রতিদিন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে বহু পর্যটক এ মসজিদটি দেখতে আসেন। অনেকেই এখানে এলে অন্তত এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

ওসমান হাদির অবস্থা অপরিবর্তিত : মেডিকেল বোর্ড

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ মো. ওসমান...

এমবিবিএস ভর্তির পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬৬.৫৭

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এবার পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। রোববার...

হাদির ওপর হামলাকারী মূল আসামি দেশেই আছে: ডিএমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকারী মূল আসামি দেশেই আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা...

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ৩৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে...

নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে পুলিশ

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়া হবে। এই প্রটোকলে রাজনৈতিক...

সূচকের পতনে লেনদেন শেষ

পুঁজিবাজার ডেস্ক: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার...

এন্টারপ্রাইজ কানেক্টিভিটি ও ডিজিটাল সল্যুশনে পিটিসি-এক্সেনটেকের কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি

কর্পোরেট ডেস্ক: পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি (পিটিসি)-এর সাথে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এক্সেনটেক পিএলসি। করপোরেট সার্ভিস, সিম-ভিত্তিক এন্টারপ্রাইজ সল্যুশন এবং ডিজিটাল সক্ষমতা...

গ্রাহক সন্তুষ্টির প্রত্যয় নিয়ে দেশের ১৬ অঞ্চলে ইউসিবির টাউনহল

কর্পোরেট ডেস্ক: একই দিনে, একই সময়—দেশের ১৬টি অঞ্চলে একসাথে টাউনহল। কোথাও ব্যাংকের চেয়ারম্যান, কোথাও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোথাও এএমডি, ডিমডি কিংবা সিনিয়র কর্মকর্তারা। পুরো দেশের...