২০৩০ সালের মধ্যে পরিকল্পিত ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী সম্প্রতি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেয়েছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
প্রশ্ন: অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অগ্রগতি জানতে চাই। নতুন কোনো পরিকল্পনা থাকলে জানাবেন।
পবন চৌধুরী: অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা একদিনে শেষ হওয়ার নয়। এগুলো খুব দ্রুত বাস্তব রূপ পাবে না। ইজেড উন্নয়ন শুরু থেকে উৎপাদনে যেতে তিন বছর সময়ের প্রয়োজন হয়। আশার কথা, এরই মধ্যে চারটি ইজেড উৎপাদনে গেছে। আগামী বছরে উৎপাদনে যাবে অন্তত ২০টি ইজেড। তারা যাতে উৎপাদনে যেতে পারে, তার সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে। ২০১৮ সালের মধ্যে আরও ২০টির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হবে। আগামী বছরের মধ্যে সব অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। যারা উৎপাদন শুরু করেছে, তারা যাতে সমস্যায় না পড়ে, তার জন্য আমাদের উদ্যোগ রয়েছে। আমাদের সরকারের সঙ্গে অন্য দেশের সরকারের যৌথ উদ্যোগে (জিটুজি) ইজেড উন্নয়ন করা হবে। অনেক ইজেডের জমি অধিগ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রশ্ন:১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে কয়েকটির স্থান নির্বাচন হয়েছে। বাকিগুলোর কী অবস্থা? বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা কেমন?
পবন চৌধুরী :২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে ৭৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বেজা গভর্নিং বোর্ডে অনুমোদন হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল পেতে আরও ১০টির বেশি আবেদন রয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে সব ইজেডের স্থান নির্বাচন করা হবে। পর্যায়ক্রমে সব ইজেডের উন্নয়ন হবে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রত্যাশা অনেক। এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। বিশেষ করে বিশ্বখ্যাত কোম্পানি হোন্ডা বিনিয়োগ করবে। জাপান, চীন, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশের কোম্পানি বিনিয়োগে আসছে। বিনিয়োগ হচ্ছে, আরও হবে। ইজেডগুলোর কাজ শেষ হলে প্রতিবছর চার হাজার কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হবে। আর এসব অঞ্চলে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
প্রশ্ন :ইজেড দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখবে?
পবন চৌধুরী :এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি অনেক কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে তারা অবদান রাখতে শুরু করেছেন। বেশ কয়েকটি ইজেডে শিল্পকারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। মেঘনা, আমান ও বে গ্রুপের ইজেডে একাধিক কোম্পানি উৎপাদন করছে। দিন যত যাবে, বিনিয়োগ তত বাড়বে। সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে অবদানও বাড়বে। ইজেডের কারখানাগুলোতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইজেডকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে অনেক পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প। যেসব এলাকায় ইজেড হচ্ছে, সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য নানাভাবে উপকৃত হবে।
প্রশ্ন:পর্যটন উন্নয়নের জন্য আপনাদের কয়েকটি ট্যুরিজম পার্ক স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে। পর্যটনকে কেন এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করলেন?
পবন চৌধুরী :দেশে চারটি ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে কক্সবাজার অঞ্চলে সাবরাং, সোনাদিয়া ও নাফ ট্যুরিজম পার্কের উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছে। পর্যটনে কাজ করার বেশি সুযোগ রয়েছে। এ জন্য ট্যুরিজম পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এসব পার্ক স্থাপিত হলে পর্যটন উৎসাহিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে শিল্পে কর্মসংস্থান কম হচ্ছে। সেবা খাতে এখনও অনেক জনবলের প্রয়োজন। এ ছাড়া দেশে পর্যটন খাতের বিকাশ সেভাবে হয়নি। এ খাত অনেক পিছিয়ে আছে। বেজা পর্যটন খাতকে আরও এগিয়ে নিতে চায়।
প্রশ্ন :চীন, ভারত, জাপানসহ বিদেশি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অগ্রগতি কেমন?
পবন চৌধুরী :চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে চুক্তি হয়েছে। এই ইজেডের স্থান নির্বাচন হয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ ভূমি উন্নয়ন হবে। জাপানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। স্থানও নির্বাচন হয়েছে। এখন জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। ভারতের অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
প্রশ্ন :ইজেডে কোন খাতে বিনিয়োগ বেশি আসছে। বিনিয়োগের জন্য কোন কোন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে? বিশেষ পণ্য ও সেবাভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল কতগুলো হবে?
পবন চৌধুরী :ইজেডে বিদেশি কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বেশি করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে দেশি কোম্পানিগুলো পণ্য উৎপাদনে বেশি বিনিয়োগ করছে। কিছু ইজেডে পোশাক খাতেও বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। মৌলভীবাজারের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৯ কোম্পানি পোশাক খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এই জোনে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ডিবিএল, পলমলসহ বিভিন্ন গ্রুপ অব কোম্পানি বিনিয়োগ করবে। এ বছরের শেষ নাগাদ শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
প্রশ্ন :ওয়ান স্টপ সুবিধা কবে থেকে পুরোপুরি পাবেন উদ্যোক্তারা?
পবন চৌধুরী :ইজেডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের একই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস দিতে আইন করা হচ্ছে। আগামী সংসদ অধিবেশনে এ আইন পাস হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান স্টপ সেবা দিতে শুরু করেছে বেজা। আইন পাস হলে পুরোপুরি কার্যকর করা হবে।
প্রশ্ন :গ্যাস ও বিদ্যুতের সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলছে বেজা। বর্তমানে দেশে গ্যাসের সংকট আছে। এ সুবিধা নিশ্চিত করতে কতটা প্রস্তুতি আছে?
পবন চৌধুরী :বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে সব ধরনের পদক্ষেপ এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে। যেসব ইজেডে কাজ শুরু হয়েছে, সেসব স্থানে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। গ্যাস পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার রয়েছে। আগামী দিনে গ্যাস সংকট মোকাবেলায় এলএনজির মাধ্যমে চাহিদা মেটানো হবে।
সৌজন্যে: সমকাল
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
আগামী বছরে উৎপাদনে যাবে ২০ অর্থনৈতিক অঞ্চল: পবন চৌধুরী, চেয়ারম্যান, বেজা https://corporatesangbad.com/470513/ |