একজন সাদামনের আলোকিত মানুষ আলহাজ আবদুল মজিদ

Posted on October 12, 2022

জাকির হোসেন আজাদী: আদিকাল থেকেই চলে আসছে সাদা আর কালোর পার্থক্য। জীবনের প্রতিটি কর্মকান্ডে মানুষের সাদা-কালো মনের পরিচয় সহজেই মেলে। ভাল কাজ যেমন মানুষকে আনন্দ দেয় তেমনি মন্দ কাজ করে ব্যাথিত। আমাদের এ সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক সাদামনের আলোকিত মানুষ। তাদের কর্মের মাঝে তারা যেমন নিজেদের করেছেন আলোকিত তেমনি তাদের ছোয়ায় অন্যরা খুঁজে পেয়েছেন আলোর পথ। আর এমনই একজন মানুষ হচ্ছেন আলহাজ মো. আবদুল মাজিদ।

তিনি শুধু একজন ব্যক্তিই নয়, একটি প্রতিষ্ঠানও। সারা জীবন তিনি মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনে দুস্থ রোগীদের সেবায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন, ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে ওষুধ দান করার জন্য। মো. আবদুল মজিদ ১৯৩৪ সালের ৬ জানুয়ারি তৎকালীন খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহাকুমার দেবহাটা থানার সন্দ্বীপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ধর্ণাঢ্য মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মেনহাজ উদ্দিন এবং মাতার নাম রওশন আরা বেগম।

ছাত্র জীবনে তিনি খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি বিভিন্ন খেলায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি সখীপুর মাঠে ফুটবল ও ব্যাডমিন্টনের মতো বড় বড় খেলা পরিচালনা করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। সাদা মোজা, পরিপাটি টি-শার্ট ও হাফপ্যান্ট পরে যখন মাঠে রেফারি হিসেবে বাঁশি বাজাতেন, তখন ক্রীড়ামোদিরা আগ্রহী হয়ে উঠতেন। তিনি অত্যন্ত নীতিবান ও রাশভারী মানুষ ছিলেন, যে কারণে কোনো অন্যায় আবদার নিয়ে তার সামনে কেউ যেতেন না। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন
ছোট। তার বড় ভাই আবদুল করিম ১৯৪৩ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্তসসখীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

আবদুল মজিদ ১৯৭৭ থকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সখীপুর ইউনিয়ন পরিষদে সুনামের সঙ্গে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সখীপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিস, বিভিন্ন ব্যাংক ও পোস্ট অফিস স্থাপনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং জমি দান করেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় হাইস্কুল, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায়ও সার্বিক সহযোগিতা ও জমি দান করেন দেবহাটাবাসীকে জ্ঞানে পরিপূর্ণ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে এলাকার কিছু মানুষের সহযোগিতায় ১৯৮৫ সালে নিজ জমিতে গড়ে তোলেন খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা কলেজ, যা আজ জ্ঞানে গরিমায় শিক্ষাদীক্ষায় আলো ছড়িয়ে চলেছে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়, সহশিক্ষা কার্যক্রম, বিজ্ঞানবিষয়ক প্রদর্শনী সব কিছুতেই উপজেলা, জেলা, বিভাগ পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে স্থান করে নিয়েছেন খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। কলেজটি আজ মহিরুহ আকার ধারণ করেছে।

অনার্স ডিগ্রি, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিএম সব বিষয় চালু আছে। কলেজটি আজ সরকারিকরণ হয়েছে। তিনি আমৃত্যু সখীপুর দীঘিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি, সখীপুর আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি, সখীপুর হাইস্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য, নিজ বাড়িতে নির্মিত মসজিদের সভাপতি এবং সখীপুর উদয়ন সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। সর্বোপরি তিনি অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারক, সাহিত্যিক, দার্শনিক, সুফি-সাধক আলহাজ হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রহ.) প্রতিষ্ঠিত "স্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টের সেবার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনে আমৃত্যু ২৭ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর ৮৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এক পুত্র ও চার কন্যাসন্তানের জনক। তার একমাত্র পুত্র ইকবাল মাসুদ ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের হেলথ সেক্টরের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। তার জামাতাদের মধ্যে দুইজন ইঞ্জিনিয়ার, একজন শিক্ষা কর্মকর্তা ও একজন নৌবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

আমরা যদি এইসব আলোকিত মানুষের থেকে দীপ্তি নিয়ে পথ চলতে পারি তাহলে আমাদের চলার পথ হবে মসৃন ও কণ্টকমুক্ত।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গীতিকবি।