তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার:মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা চা-বাগানে একটি অংশ জুড়ে ‘ছনখোলা’ নামে সুপরিচিত। ১০ একর আয়তনের ছনখোলা এলাকাটি বিরল ও বিপন্ন বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। সম্প্রতি চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ঘাস-গুল্ম ও ছন আচ্ছাদিত স্থানটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার করেছে। এতে মুনিয়াসহ অনেক বিরল ও বিপন্ন পাখির আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় ছনখোলা এলাকাকে জাতীয় স্বার্থে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে বন বিভাগ। স্থানটি সংরক্ষণে ‘মুনিয়া পাখির অভয়াশ্রম’ ঘোষণা করতে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের সহায়তা চেয়ে বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারে অবস্থিত সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) কুরমা চা-বাগানের ৮ নম্বর সেকশনের ১০ একর ছনখোলা এলাকা জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ছনখোলাকে মুনিয়া পাখির অভয়াশ্রম ঘোষণার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে গত ১৯ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ছনখোলা এলাকাটি ঘাস ও ছন আচ্ছাদিত একটি গোচারণ ভূমি। শুষ্ক মৌসুমে এই এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন কিছু ছন সংগ্রহ করলেও অধিকাংশ সময় গবাদিপশুর চারণভূমি হিসেবে পরিত্যক্ত থাকে। কয়েকজন প্রকৃতিপ্রেমীর মাধ্যমে জানা যায়, স্থানটি বেশকিছু বিচিত্র ও মূল্যবান বন্য প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র। এ ছাড়া ২০২১ সালের ২২ ও ২৭ জানুয়ারি বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী দিনব্যাপী সেখানে অবস্থান করেন। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন জাতের পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিচরণ দেখতে পান।সচরাচর অন্য স্থানে এসব পাখির দেখা মেলে না। এসব পাখির মধ্যে আছে বিভিন্ন জাতের মুনিয়া, গোল্ডেন হেডেড ক্রিস্টিকোলা, লাল রঙা আভাদাভাত (লাল মুনিয়া), সাইবেরিয়ান স্টোনচাট, বাটন কোয়েল এবং কয়েক প্রজাতির পেঁচা। স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে খরগোশ, শেয়ালও ছিল।
ছনখোলাকে মুনিয়া পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, মুনিয়াসহ বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির পাখি ও বন্য প্রাণী স্থানীয়ভাবে বিলুপ্তি থেকে রক্ষার স্বার্থে এনটিসিকে ২০২১ সালের ৩ মার্চ বন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ছন আচ্ছাদিত এই ভূমি সংরক্ষণ ও চা-গাছ লাগানোর মাধ্যমে ওই স্থানের কোনোরূপ পরিবর্তন না করার বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ছনখোলা সংরক্ষণ না করে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করেছে। মুনিয়াসহ বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির পাখি ও বন্য প্রাণী স্থানীয়ভাবে বিলুপ্তি থেকে রক্ষার স্বার্থে ছনখোলাকে মুনিয়া পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। জেলা প্রশাসকের সহায়তার মাধ্যমে ছনখোলাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হলে স্থানটি বিরল ও বিপন্ন প্রাণী সংরক্ষণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এ ছাড়া চিঠিতে বিরল ও বিপন্ন বন্য প্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে এনটিসিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বন্য প্রাণী আলোকচিত্রী খোকন থৌনাউজম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে গোল্ডেন হেডেড ক্রিস্টিকোলার একমাত্র প্রজননক্ষেত্র হলো "ছনখোলা"। দেশে আর কোনো দ্বিতীয় প্রজননক্ষেত্র এখনো পাওয়া যায়নি। পাখিটি খুবই বিরল। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চা-বাগান কর্তৃপক্ষ একমত হয়েছে, তারা ছনখোলায় আর চা-বাগান বা বনায়ন করবে না। এই অবস্থায় থাকবে। কিন্তু এর আগেও এনটিসিকে বলা হয়েছে। এবার জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হলো। স্থানটি আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সহায়তা দরকার।’
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান গত রোববার বলেন, ‘ওনার (বিভাগীয় বন কর্মকর্তা) সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে এখনো চিঠিটি দেখিনি। চিঠি দেখে এ বিষয়ে কথা বলব।’
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
ছনখলা এলাকাকে অভয়াশ্রম তৈরিতে বনবিভাগের উদ্যোগ https://corporatesangbad.com/3766/ |