করোনায় আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন

Posted on March 22, 2020

সম্পাদকীয় : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (2019-nCoV) সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। ১৮৩টি দেশে ছড়িয়েছে করোনা সংক্রমণ। বাংলাদেশেও করোনায় এ পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ২৪ জন।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগের সমালোচনা করলেও আমরা তা করতে পারছি না। আমরা এক্ষেত্রে সরকারকেই প্রশংসা করছি।

প্রথমত, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে মহাসমাবেশ স্থগিত করে সরকার। ওই কর্মসূচী বাতিলের মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পারে দেশে করোনা এসেছে এবং তা ঠেকাতে সরকার বদ্ধপরিকর। এরপর থেকে সরকার বসে নেই। একের পর এক উদ্যোগ গ্রহণ করেই যাচ্ছে। দেশবাসী এখন আশ্বস্ত হতে পারছে, যদি ব্যাপকভাবে কোভিট-১৯ দেখা দেয়ও তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এদেশের মানুষ চির সংগ্রামী। ভয় পাওয়ার মত কোনো অবস্থা হয়নি। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় জ‍াতি প্রস্তুত। 

বাংলাদেশের মানুষ সমালোচনা করতে পছন্দ করে। বিশেষ করে সরকারের সমালোচনা করতে পারলে যেন আমরা বর্তে যাই। প্রথমত ভীতি ছড়ানো হয়েছে, এরপর হলো না, হচ্ছে না করা হয়েছে। আমরা সমালোকদের নিরুৎসাহিত করতে চাই না, কারণ সোস্যাল মিডিয়াতে সমালোচনা করলে সরকার সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের সমালোচনা হওয়াই দরকার। তবে আশার কথা হচ্ছে আমাদের সরকার শুরু থেকে এই ক্ষেত্রে সঠিক পথে আছে। কেউ কেউ বলছেন, চীন থেকে বা ইতালি থেকে অথবা অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশিদের আসতে দেয়া উচিত হয়নি। এটা মোটেই যুক্তির কথা নয়। দেশের নাগরিক সে যে দেশেই থাকুক না কেন, বিপদে পড়লে রাষ্ট্র দায়িত্ব এড়াতে পারে না। বিশেষ বিমান পাঠিয়ে উহান থেকে ফিরিয়ে এনে সরকার সঠিক কাজই করেছে।

বিদেশ থেকে বেশি লোক আসাতে সরকার শিবপুর উপজেলাকে লক ডাউন করছে। লক ডাউন বলতে, মুদি, ওষুদের দোকান এবং কাঁচাবাজার ছাড়া সব বন্ধ করা হয়েছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, যাতে বাইরের লোক সেখানে যেয়ে অথবা সেখানকার প্রবাসীরা বাইরে এসে সংক্রমণ বাড়াতে না পারে।

বলা হয়েছে প্রয়োজনে মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলাকেও লক ডাউন করা হবে। সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে ৩টি বিশেষ চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। জেলা উপজেলা পর্যায়ে সকল সরকারি হাসপাতালে আলাদা করোনা ইউনিট ও বেড করা হয়েছে। ঢাকার ৪টি হাসপাতাল কোভিড চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

চীন থেকে আনা হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার সার্জিকাল মাস্ক। বেসরকারি সংস্থা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কোভিট-১৯ শনাক্ত করণের কিট উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি আজকালের মধ্যে ২ হাজার কিট আসছে চীন থেকে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আরো ১০ হাজার কিট, ১০ হাজার মেডিকেল প্রটেক্টিভ ড্রেস, প্রভৃতি আসছে।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার সরকার ১৪টি উদ্যোগ নিয়েছে। হতে পারে এতে যে উদ্যোগ আয়োজন করা হচ্ছে তা কোনো কাজেই আসছে না।

চীনা গবেষকরা বলেছেন, উষ্ণমন্ডলে করোনার প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। এখন পর্যন্ত দেখা গেছে ৫ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলিসিয়াসের মধ্যেই করোনা ব্যাপক বিস্তার খটিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ গ্রীষ্মমন্ডলে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে দিনের বেলা গড়ে ৩০ ডিগ্রির ওপরে থাকছে। রাতে সর্বনিম্ন ২১ ডিগ্রি পর্যন্ত নামছে। এ পরিস্থিতিতে বিদেশে আক্রান্তরা এবং তাদের সংস্পর্শে এসে আরো ২ একজন আক্রান্ত হতে পারেন। ওইভাবে ইতালির মত ব্যাপক বিস্তারের কোনো সম্ভাবনা নেই। তারপরও সরকার যে সব ব্যবস্থা নিয়েছে তা সন্তোষজনক। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলব, আতঙ্কগ্রস্ত নয়, সচেতন হোন, ভয়ের কিছু নেই।