করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে

Posted on March 14, 2020

বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ও ভয়ঙ্কর শব্দটি হলো- নভেল করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাসের সঙ্গে পূর্বপরিচিত হলেও করোনা ভাইরাসের নতুন এই স্ট্রেইনটি অর্থাৎ কোভিড-১৯ সম্পর্কে কিছুদিন আগেও বিশ্ববাসীর কোনো ধারণা ছিল না। ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এ ভাইরাসটি মানবদেহে শনাক্ত হওয়ার পর চমকে যায় বিশ্ব। নভেল করোনা ভাইরাস বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের মানুষকে আক্রান্ত করেছে। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ রোগটিকে বৈশ্বয়িক মহামারী বলে ঘোষণা দিয়েছে।

করোনা ভাইরাস নিয়ে সারা দুনিয়ায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। এখন পর্যন্ত ১০৩ দেশে এই ভাইরাস কম-বেশি আক্রমণ করেছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে দ্রুত সময়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি লোক মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়া আরো লক্ষাধিক লোক চিকিৎসাধীন। বাংলাদেশেও তিনজন নাগরিক এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখনো করোনা আক্রান্ত রোগী তেমন সনাক্ত না হলেও, এটা মোকাবেলার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া একান্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সেব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। বিমানবন্দর, নৌবন্দরে বিশেষ নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে দেশি প্রকল্পে নিয়োজিত বিদেশি নাগরিকদের ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশে এসেছেন, এমন নাগরিকদের পর্যবেক্ষণে রাখছেন কর্তৃপক্ষ।

করোনা ভাইরাস সংক্রামন এড়াতে এবং করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহসব জেলা হাসপাতালে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২৫ শয্যার ইসোলেশন ইউনিট চালু করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওই ইউনিটের জন্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে চিকিৎসক। ইতিমধ্যেই নতুন ওয়ার্ডে স্থাপন করা হয়েছে ভেল্টিলেটিং মেশিনসহ যাবতীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৫ জনের একটি সেবিকা দল।

শুক্রবার (১৩ মার্চ) সকালে রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন ভবনের সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, দেশে নতুন কোনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। আক্রান্ত তিনজন রোগীর মধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সুস্থ দুজনের মধ্যে একজন বাড়ি ফিরে গেছেন। অন্যজন সুস্থ হলেও তার বাড়িতে কয়েকজন কোয়ারন্টাইনে থাকায় রোগীর অনুরোধে তাকে আপাতত হাসপাতালেই রাখা হচ্ছে।

তি‌নি আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুসা‌রে আক্রান্ত যেকোনো রোগীর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধা‌নে দুবার নমুনা পরীক্ষার ফলাফ‌লে ভাইরা‌সের উপ‌স্থি‌তি নে‌গে‌টিভ পাওয়া গে‌লে ক‌রোনামুক্ত ঘোষণা করা যায়। সে বি‌বেচনায় দুজন রোগী‌কে ক‌রোনামুক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। আক্রান্ত আরেক রোগীর একবার নে‌গে‌টিভ এ‌সে‌ছে, আরেকবার নে‌গে‌টিভ পাওয়া গে‌লে তা‌কেও ক‌রোনামুক্ত ঘোষণা করা হ‌বে।

স্বাস্থ্য অধিদফত‌রের মহাপ‌রিচালক অধ্যাপক ডা.আবুল কালাম আজাদ ব‌লেন, আক্রান্তদের তি‌নি রোগী বল‌তে রা‌জি নন। আক্রান্তরা করোনাভাইরা‌সে আক্রান্ত হ‌লেও শুরু থে‌কে সুস্থই ছি‌লেন। তা‌দের সামান্য জ্বর, হাঁচি ও কা‌শি ছিল।

এর আগে গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত করা হয়। আক্রান্তদের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। এর মধ্যে দুজন ইতালিফেরত। এদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।

আমরা বলতে চাই, এর আগে আমরা ডেঙ্গু ভাইরাস মোকাবেলা করেছি। অনেকটা সফলও হয়েছি। এবার করোনা ভাইরাস থেকেও আমরা সতর্ক থেকে মোকাবেলা করবো। এজন্য প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হতে হবে। সরকারের সঙ্গে আমাদের সবার সহযোগী মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। তবে কোনভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা সঠিক হবে না।

আশা করা যায়, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনার প্রকোপ কমে আসবে। বাংলাদেশ এখনো করোনার ঝুঁতিতে আছে এমন কোন তথ্য নেই। তারপরও সতর্ক থাকতে হবে। তবে শিশু এবং বৃদ্ধরা এই ভাইরাসের প্রভাবে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তারপরও এই মুহূর্তে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই ভাইরাস বাংলাদেশে বিস্তার ঘটাতে পারে। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে। সতর্কতাই আমাদের এই ভাইরাস থেকে প্রথমত দূরে রাখতে সাহায্য করবে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নিতেই হবে।

আমরা বলতে চাই, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে কোথাও কোনভাবে যেন আতঙ্ক ছাড়ানো না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।