স্পোর্টস ডেস্ক : নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পঞ্চমবারের মতো অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। তবে আগের চার আসরের মধ্যে শুধু ২০১৪ সালে দেশের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ জিতেছিল মেয়েরা। সেবার শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের মেয়েদের পরাজিত করেছিল টাইগ্রেসরা।
এরপর আরও তিনটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে কোনো আসরে জয়ের দেখা পায়নি লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে এবার সেই দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভাঙার লক্ষ্য নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) কেপটাউনে বাংলাদেশ সময় রাতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মেয়েদের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। তবে অল্প রানের পুঁজি নিয়েও ১৯ বছর বয়সী ডানহাতি পেস বোলার মারুফা আক্তারের ৩ উইকেটের বিধ্বংসী স্পেলের পরও পরাজয় এড়াতে পারেনি সালমা-জাহানারারা।
ডানহাতি টাইগ্রেস পেসারের শুরুর তোপ সামলে ওপেনার হারশিতা সামারাবিক্রমা এবং নিলাকশি ডি সিলভা ১০৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে শ্রীলঙ্কাকে এনে দিয়েছেন দারুণ জয়। ৭ উইকেটের হারে মেয়েদের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে টিম টাইগ্রেস।
এর আগে কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা লাল-সবুজের দল ৮ উইকেটে ১২৬ রানে আটকে যায়। জবাবে শ্রীলঙ্কা ১০ বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়।
হারশিতা ৫০ বলে ৮ চার এবং এক ছক্কায় ৬৯, নিলাশিকা ৩৮ বলে ২ চারে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। ১৭ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। অধিনায়ক চামারি আতাপাত্তু ১৫ রান করে মিডঅনে লতা মন্ডলের সহজ ক্যাচ হন।
ষষ্ঠ ওভারে পরপর দুই বলে উইকেট তুলে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান মারুফা। এক রান করা ভিশমি গুনারাত্নের ফিরতি ক্যাচ নেয়ার পর রানের খাতা না খোলা আনুশকা সঞ্জিবনীকে দারুণ এক বলে করেন বোল্ড। ব্যাটিং ধসে পড়া শ্রীলঙ্কা ২৫ রানে হারায় ৩ উইকেট।
শেষ ১০ ওভারে লঙ্কার মেয়েদের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৭৮ রান। চতুর্থ উইকেট জুটি বাংলাদেশের জন্য বাড়ায় শঙ্কা। নাহিদার করা ১৫তম ওভারের শেষ বলে ম্যাচসেরা হারশিতাকে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন জ্যোতি। পরের ওভারে হারশিতা ফিফটি তুলে নেন।
ঋতুমনি ১৬তম ওভারে খরচ করেন ১৭ রান। সেখান থেকে টিম টাইগ্রেসের হাত ফসকে ম্যাচ বের হতে শুরু করে।
এর আগে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নামা লাল-সবুজের দল শামিমা সুলতানার দুই বাউন্ডারিতে প্রথম ওভারে তুলেছিল ৮ রান। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে ঘটে বিপত্তি। রানাসিংহের বল মুর্শিদা খাতুনের ব্যাটের কানায় লেগে শর্ট ফাইন লেগে যায়। অলসভাবে দৌড়ানোর খেসারত দেন মুর্শিদা। লঙ্কান রানাবিরার সরাসরি থ্রোতে হন রানআউট। খুলতে পারেননি রানের খাতা।
শুরুতে উইকেট হারালেও চাপে পড়তে দেননি শামিমা। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে রান বাড়াতে থাকেন। তৃতীয় ওভারে সুগন্ধিকা কুমারীর বলে টানা তিন চার মারেন। পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে মারা চারগুলো ছিল দর্শনীয়।
বড় ইনিংস খেলার সম্ভাবনা অবশ্য নিজেই শেষ করেন শামিমা। রানাসিংহের করা অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে ধরা পড়েন। তার আগে ১৩ বলে ৪ চারে করে যান ২০ রান।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ২ উইকেট হারালেও ৪৮ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে ৩৫ রানের জুটি গড়েন সোবহানা মোস্তারি এবং অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। ৩২ বলে ৫ চারে ২৯ রান করা মোস্তারিকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন চামিরা আতাপাত্তু।
৭ থেকে ১৫ ওভারের মধ্যে ১ উইকেটের বেশি না হারালেও ৪৬ রানের বেশি তুলতে পারেনি জ্যোতির দল। কমে যায় রানের গতি। ১৬তম ওভারে রানাসিংহের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টাইগ্রেস অধিনায়ক। ৩৪ বলে করে যান ২৮ রান। একই ওভারে লতা মন্ডল ১১ রান করে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে ফিরলে বিপদ বাড়ে।
পরের ওভারে হাস্যকরভাবে রানআউট হন ঋতুমনি, ২ রান করে। বল ঠেলেই দৌড় দিয়েছিলেন, কিন্তু বল একদিকে ফিল্ডারের হাতে, আর তিনি অন্যমনস্ক হয়ে ভিন্ন দিকে তাকিয়ে দৌড়ান। তখন কুমারীর সরাসরি থ্রোতে ক্রিজ ছাড়েন।
এরপর চলতে থাকে ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিল। দিলহরির হাতে মিড উইকেটে ধরা পড়েন ৫ রান করা স্বর্ণা আক্তার। ৮ রানে আউট হন নাহিদা আক্তার।
ইনিংসের শেষ বলের আগের ৮৪ বলে বাংলাদেশ কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেনি। শেষ বলে বাউন্ডারি হলেও বাই-য়ের সংকেত দেন আম্পায়ার। রানের ধীরগতিতে ১২৬-এর বেশি ওঠেনি।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে রানাসিংহে তিনটি, আতাপাত্তু দুটি এবং রানাবিরা নেন একটি উইকেট।
আরও পড়ুন:
সিলেটকে হারিয়ে ফাইনালে কুমিল্লা