স্পোর্টস ডেস্ক : মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট স্ট্রাইকার্সকে হারিয়ে টানা দ্বিতীবারের মত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। টুর্নামেন্টের প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে কুমিল্লা ৪ উইকেটে হারিয়েছে সিলেটকে। টুর্নামেন্টের শুরুতে প্রথম তিন ম্যাচ হারের পর টানা ১১ ম্যাচ জিতে বিপিএলের ফাইনাল কুমিল্লা।
এ ম্যাচ হেরে যাওয়ায় দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে খেলবে সিলেট। দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে সিলেটের প্রতিপক্ষ রংপুর রাইডার্স। আজ এলিমিনেটর ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারের টিকিট পায় রংপুর। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে লড়বে সিলেট ও রংপুর। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিপিএলের ফাইনালে কুমিল্লার প্রতিপক্ষ হবে দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারের বিজয়ী দল।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে সিলেট। ১৬ রানে ৩ উইকেট হারায় তারা। দ্বিতীয় ওভারে সিলেটের ওপেনার আফগানিস্তানের শফিকুল্লাহ গাফারিকে ৫ রানে আউট করেন কুমিল্লার মিডিয়াম পেসার ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল। পরের ওভারে কুমিল্লার তানভীর ইসলামের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন তিন নম্বরে নামা তৌহিদ হৃদয়। খালি হাতে ফিরেন হৃদয়।
তৃতীয় ওভারের শেষ বলে কুমিল্লার ইংল্যান্ড স্পিনার মঈন আলির শিকার হন ২ রান করা জাকির হাসান। টপ-অর্ডারের ব্যর্থতায় তৃতীয় ওভারেই চাপে পড়ে সিলেট। এ অবস্থায় ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে উপরে তুলে পাঁচ নম্বরে নামেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। রাসেলের করা চতুর্থ ওভারে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ রান তুলেন আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের বলে দু’টি চার মারেন মাশরাফি। ৬ ওভার শেষে সিলেটের রান ৩ উইকেটে ৪৩।
সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে স্পিনার তানভীরের বলে ছক্কা মারেন মাশরাফি। মুকিদুল ইাসলামের করা অষ্টম ওভার থেকে ১৫ রান পায় সিলেট।
দশম ওভারের প্রথম বলে শান্ত-মাশরাফির জুটি ভাঙ্গেন রাসেল। ১৭ বলে ২৬ রান করা মাশরাফি শিকার হন রাসেলের। চতুর্থ উইকেটে ৩৭ বলে ৫৬ রান যোগ করে শুরুতে বিপদে পড়া সিলেটকে লড়াইয়ে ফেরান শান্ত-মাশরাফি।
মাশরাফির আউটের পর মিনি ধস নামে সিলেটের ইনিংসে। ১১তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন তানভীর। শান্তকে ৩৮ রানে ও জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্লকে খালি হাতে বিদায় করেন তানভীর। এতে ৭৮ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে সিলেট।
সপ্তম উইকেটে জুটি বেঁধে দলকে চাপমুক্ত করেন মুশফিকুর রহিম ও দক্ষিণ আফ্রিকার জর্জ লিন্ডে। তাদের জুটিতে ১শ রান পার করে সিলেট। ১৬তম ওভারে মুশফিককে শিকার করে জুটি ভাঙ্গেন মুকিদুল। বিদায়ের আগে ৪টি চারে ২২ বলে ২৯ রান করেন মুশফিক।
দলীয় ১১৭ রানে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে মুশফিকের আউটের পর সিলেটের লেয়ার-অর্ডারকে দাঁড়াতে দেননি মুস্তাফিজ ও নারাইন। ১৭ দশমিক ১ ওভারে ১২৫ রানে গুটিয়ে যায় সিলেট। তানভীর-রাসেল ও মুস্তাফিজ ২টি করে উইকেট নেন। মঈন-নারাইন-মুকিদুলের শিকার ১টি করে।
১২৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই ১টি করে চার-ছক্কায় ১৩ রান তুলেন কুমিল্লার ওপেনার নারাইন। বোলার ছিলেন সিলেটের পেসার শ্রীলংকার ইসুরু উদানা। পরের দুই ওভারে ৮ রান আসলেও, চতুর্থ ওভারে প্রথম দুই বলে ১টি করে চার-ছয় মারেন নারাইন। পেসার রুবেলের করা ঐ ওভারের শেষ বলে আউট হন কুমিল্লার আরেক ওপেনার লিটন দাস। ১০ বলে ৭ রান করেন তিনি।
লিটন ফিরলেও মারুমুখী মেজাজেই ছিলেন নারাইন। পঞ্চম ওভারে পেসার তানজিম হাসান সাকিবের প্রথম তিন বলে ৬,৬ ও ৪ মারেন তিনি। চতুর্থ বলে নারাইনের উইকেট উপড়ে ফেলেন সাকিব। ১৮ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৯ রান করেন নারাইন।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে রান আউট হন কুমিল্লার ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার জনসন চার্লস। ৪ রান করেন তিনি। নারাইনের ব্যাটিং ঝড়ে পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেটে ৫৮ রান করে কুমিল্লা।
ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক ইমরুল। ১৫ বলে ১৩ রান করে স্পিনার গাফারির শিকার হন ইমরুল। ১১তম ওভারে ৭৩ রানে ৪ উইকেট হারায় কুমিল্লা।
এ অবস্থায় পঞ্চম উইকেটে ২৪ বলে ৩৪ রান তুলে কুমিল্লার ম্যাচ জয়ের পথ সহজ করেন মোসাদ্দেক হোসেন ও মঈন। এই জুটি ১০ম ওভারে ভাঙ্গতে পারতো। স্পিনার লিন্ডের বলে মোসাদ্দেককে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন মুশফিক।
৬ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ৬ ওভারে ১৯ রান দরকার পড়ে কুমিল্লার। ১৫তম ওভারে কুমিল্লার শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন রুবেল। প্রথম বলে মঈনকে ২১ ও চতুর্থ ডেলিভারিতে জাকের আলিকে খালি হাতে বিদায় করেন রুবেল। মঈনের ১৩ বলের ইনিংসে ১টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো।
১৬তম ওভারে কুমিল্লার সপ্তম উইকেট পতনের সুযোগ পেয়েছিলো সিলেট। কিন্তু লিন্ডের বলে রাসেলের ক্যাচ ফেলেন মুশফিক।
শেষ ২৪ বলে কুমিল্লার ১২ রানের প্রয়োজন ১৭তম ওভারে দু’টি ছক্কায় পূরণ করেন রাসেল। রুবেলের চতুর্থ ডেলিভারিতে ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করেন তিনি। ১০ বলে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন রাসেল। ৩টি চারে ২৭ বলে অপরাজিত ২৭ রান করেন মোসাদ্দেক। সিলেটের রুবেল ৩৩ রানে ৩ উইকেট নেন।