নিজস্ব প্রতিবেদক: রেলওয়ের তিন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ হওয়া ৬৯ দশমিক ২০ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই রেলপথে রূপপুর (ঈশ্বরদী), শশীদল (কুমিল্লা) এবং জয়দেবপুর (গাজীপুর) স্টেশন থেকে ট্রেন চলবে।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী তার বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন।
তিনটি নতুন রেলপথের জন্য এ সময় তিনবার বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিন রেলপথের জন্য তিনবার বাঁশি ফুঁকলাম।’ এর পাশাপাশি হাতে সবুজ পতাকাও প্রদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যানজট নিরসনে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরী একটি ভিন্ন রেল যোগাযোগের সাক্ষী হবে।
তিনি বলেন, “ইনশাল্লাহ ২০৩০ সালের মধ্যে এই ঢাকা শহরেই রেল যোগযোগের একটা আলাদা পরিবেশ তৈরী হবে। এতে মানুষের যোগাযোগ, যাতায়াত এবং আমাদের তেলের খরচ-অনেক কিছুই বাঁচবে। ঢাকা শহর যানজটও মুক্ত হবে। সেভাবেই আমরা আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছি- যেটা পরবর্তীতে উত্তরা থেকে কমলাপুর রেলষ্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে আমরা পাতালেও যাচ্ছি। ইতোমধ্যে এমআরটি লাইন-১ এর অধীনে পাতাল রেলের নির্মাণ কাজেরও শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেল খাতে সকল প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় নব-দিগন্তের সূচনা হবে এবং রেল পরিসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থেকে মন্দবাগ ও কুমিল্লার শশীদল থেকে রাজাপুর পর্যন্ত ডাবল লাইনে ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ, একই সঙ্গে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ১১ কিলোমিটার ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল এবং পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় রূপপুর রেলস্টেশন, নবনির্মিত ও সংস্কার করা ২৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রেললাইন উদ্বোধন করেন।
সরকার প্রধান বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় যে সব রেল-লিংক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকার সেগুলো একে একে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি-১) এর অর্থায়নে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ (ডিটিজেডিএলপি)’- শীর্ষক প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। এই প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ১১ দশমিক ০৯ কিলোমিটার রুটে ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এই সেকশনে ডাবল লাইনে ট্রেন চালু করা হলে ধীরাশ্রম স্টেশনে ক্রসিং এর জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। ফলে সকল ট্রেনের যাত্রা সময় বাঁচবে এবং দুর্ঘটনার আশংকা হ্রাস পাবে।
এ সময় টঙ্গী-জয়দেবপুর অংশে উপস্থিত ছিলেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। অনুষ্ঠানের অপর প্রান্তে কুমিল্লার শশীদল থেকে রাজাপুর, পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর এবং টঙ্গী ও জয়দেবপুর সেকশনে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থেকে মন্দবাগ ও কুমিল্লার শশীদল থেকে রাজাপুর পর্যন্ত ডাবল লাইনে ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ, একই সঙ্গে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ১১ কিলোমিটার ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল এবং পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় রূপপুর রেলস্টেশন, নবনির্মিত ও সংস্কার করা ২৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রেললাইন উদ্বোধন করা হয়েছে।
ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন ৩৩ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার রুটে লুপ লাইনসহ ১১৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা।
এদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে রূপপুর স্টেশন। এই স্টেশন হয়ে কোনো যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে না। শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের মালামাল ও যন্ত্রপাতি আনা-নেওয়ার জন্য স্টেশনটি ব্যবহার করা হবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিংসহ রেললাইন সংস্কার ও নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় রেললাইন এবং স্টেশন রয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৩৩ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:
বঙ্গবন্ধু টানেলের ৯৬ শতাংশ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প: বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আত্মজীবনী অমূল্য সম্পদ : প্রধানমন্ত্রী