বিডিআর বিদ্রোহের রায় পর্যবেক্ষণ অনুসরণ করুন

Posted on November 29, 2017

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের বিষয়ে নিম্ন আদালতের দেয়া রায়ের আপিল শুনানি শেষে সোমবার উচ্চ আদালতের রায় প্রদান করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদ বহাল রাখা হয়েছে, যাবজ্জীবন বহাল রাখা হয়েছে ১৮৫ জনের, আর ৪৫ জনকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। ৮ বছর ৯ মাস আগে ঘটে যাওয়া ওই মর্মান্তিক ঘটনার দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রমের পর উচ্চ আদালতের রায় হয়। এখন যদি কেউ আপিল বিভাগে আবেদন করেন, তাহলে এই মামলা শেষ ধাপ আতিত্রুম করবে। তবে অপরাধের যে ভয়াবহ মাত্রা তাতে আপিল বিভাগ রায়ে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। এত বড় বিচারিক কাজ এর আগে আর বাংলাদেশে হয়নি। তবে উচ্চ আদালত কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। যা অনুসরণ করতে হবে বলে আমরা মনে করি।

২০০৯ সালে ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর পর দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ বিডিআর বিদ্রোহ হয়। এর আগে সেনা বাহিনীর একটা অংশ বিদ্রোহ করেছিল ৭৫ সালে। যাতে রক্তপাত হয়। তারপরও কিছ সেনা বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। কিন্তু তাতে ব্যাপক রক্তপাত হয় না। বিডিআর বিদ্রোহ ছিল ইতিহাসের একটা ভয়াবহতম বিদ্রোহ, যাতে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। বিশ্বে অনেক বড় বড় যুদ্ধে এত বেশি সংখ্যাক সেনা কর্মকর্তা খুণ হয় না। বিদ্রোহীদের দাবি ছিল তাদের সেনা আদালতে বিচার না করে প্রচলিত আদালতে বিচার করতে হবে। সেনা বাহিনী পিলখানার বিডিআর ঘাঁটি অবরোধ করলেও কোন রকম যুদ্ধ ছাড়া বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে।

বিচারিক আদালতে বা উচ্চ আদালতে যে রায় হয়েছে তা প্রচলিত আইনের আওতায় হয়েছে। বিদ্রোহীদের শাস্তি না হলে অন্যরা এ ব্যাপারে উৎসাহিত হতে পারত। তবে উচ্চ আদালত কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, যেমন আদালত বলেছে, বিডিআরএ বৈষম্য ছিল। কর্মকর্তারা যে সব সুযোগ সুবিধা পেত তা সাধারন সিপাহিরা পেত না। এখন দেখতে হবে পুনর্গঠিত বিজিবি অথবা অন্য কোন বাহিনীতে বৈষম্য আছে কি না। থাকলে তা নিরসন করতে হবে। আদালত বলেছেন, সিপাহী-কর্মকর্তা পেশাদারিত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে শত শত মানুষের বিচার এভাবে আর হয়নি। যারা বিচারিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাতে হয় তারা একটা কঠিন কাজ করেছেন।