বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ নজিরবিহীন। এবারই প্রথম প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছুটিতে থাকাবস্থায় পদত্যাগ করে সে নজির রাখলেন। এর আগে এরশাদ সরকারের সময় একজন বিচারপতিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। দেশের সর্বোচ্চ বিচারাঙ্গনে এই একটিমাত্র নজির ছিল।কিন্তু বিচারপতি কিংবা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের কোন নজির ছিল না। এবার সে নজিরের সাথে এবার যুক্ত হলো প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা প্রথমে এক মাস পরবর্তীতে আরো সাতদিনের ছুটি নিয়ে অষ্ট্রেলিয়া যান।তাঁর সেই ছুটি মেয়াদ শেষ হয়েছিল গত শুক্রবার।ছুটি শেষে তিনি দেশের ফিরবেন কি-না তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল ধুম্রজাল। চলছিল আলোচনা-সমালোচনা।শেষ পর্যন্ত শনিবার জানা গেল রাষ্ট্রপতি বরাবরে তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন।
প্রধান বিচারপতি সিনহা ও সরকারের সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে। অসদাচরণ ও অযোগ্যতার কারণে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে দেওয়ার বিষয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত হাই কোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগ রায় দেয় জুলাই মাসে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয় গত পয়লা আগস্ট ।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে প্রধান বিচারপতির করা মন্তব্যকে ঘিরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা এবং তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তীব্র চাপের মুখে বিচারপতি এস কে সিনহা দেশ ছেড়ে যান বলে অভিযোগ করেছে বিরোধী পক্ষ।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের খবরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর মারাত্মক আঘাত। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে নাকচ করে দেয়া হচ্ছে।
যাই হোক, স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে কেউ যাতে কোন প্রকার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে না পারে এবং দেশের জনগণের বিচার বিভাগের প্রতি যে আস্থা রয়েছে, তা যেন অক্ষুন্ন থাকে সেদিকেই এখন সতর্ক দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।