নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলে দশম বারের মতো দলটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ওবাদুল কাদের।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত হন তারা। এই কাউন্সিলে অংশ নেন প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর এবং ১৪ হাজার প্রতিনিধি।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দীর্ঘ নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফেরার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা টানা ১০ম বারের মতো দলটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন।
অপরদিকে, ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের পদ পান ওবায়দুল কাদের। ২১তম কাউন্সিলে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন। ২২তম জাতীয় সম্মেলনে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন তিনি।
এর আগে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের শুরুতে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় সংগীত গাইতে দেখা যায়। তার সঙ্গে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীরাও জাতীয় সংগীতে সুর মেলান।
পরে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী পর্বে শোকপ্রস্তাব উপস্থাপন করেন দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ওবায়দুল কাদের।
সম্মেলনের প্রথম পর্ব শেষে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় বিকেল ৩টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। এ অধিবেশনেই দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। এ সময় দলের নেতৃত্ব নির্বাচনে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
এখন পর্যন্ত সভাপতি হয়েছেন আটজন। এর মধ্যে বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ ১০ বার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তিনবার করে সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ছাড়া মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ দুবার এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও আবদুল মালেক উকিল একবার করে সভাপতি নির্বাচিত হন। আর সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন একবার নির্বাচিত হয়েছেন দলের আহ্বায়ক। এ ছাড়াও মহিউদ্দিন আহমেদ দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন নয়জন। সবচেয়ে বেশি চারবার করে হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান। এ ছাড়া তাজউদ্দীন আহমদ ও ওবায়দুল কাদের তিনবার এবং আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুবার করে এবং প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও আবদুল জলিল একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার রোজগার্ডেনে গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে ১৯৫৫ সালের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে সব ধর্ম-বর্ণের প্রতিনিধি হিসেবে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নাম করা হয় আওয়ামী লীগ।
শুরু থেকেই মাঠপর্যায় থেকে উঠে আসা নেতারা নেতৃত্ব দিয়েছেন দলটিতে। প্রভাবশালী বা অভিজাত হিসেবে পরিচিতরা সেভাবে আসেননি এ দলে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত দলটির ২২টি নিয়মিত জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মাধ্যমে দলটিতে এসেছে নতুন মুখ।