স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট : দেশের পুঁজিবাজারের সেরা ৮ মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পুরস্কার’ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি—এ তিন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেয়া হয়।
বুধবার (২২ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর প্যান পাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের হাতে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় বিএসইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০২৩ দেওয়া হয়।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী-রুবাইয়াত-উল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আব্দুর রহমান খান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। এ সময় বিএসইসির কমিশনার ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান, কমিশনার আব্দুল হালিম ও অধ্যাপক ড. রুমানা ইসলামসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।
স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড। দ্বিতীয় হয়েছে ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকার লিমিটেড। তৃতীয় হয়েছে শান্তা সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
মার্চেন্ট ব্যাংকার ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে প্রাইম ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। দ্বিতীয় হয়েছে ইসলামী ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও সন্ধানী লাইফ ফাইন্যান্স লিমিটেড। তৃতীয় হয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে একাশিয়া এসআর আইএম লিমিটেড। দ্বিতীয় হয়েছে আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বিএসইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২০২২-২৩ সালের জন্য তিনটি ক্যাটাগরিতে শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ২য়-৯ম গ্রেড ক্যাটাগরিতে অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রকিবুর রহমান, ১০-১৬তম গ্রেড ক্যাটাগরিতে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সমীর ঘোষ ও ১৭-২০তম গ্রেডে অফিস সহায়ক মো. সুজন আলম বিজয়ী হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশ পুঁজিবাজারের উন্নতি ছাড়া অর্থনীতির উন্নতি করতে পারেনি। ২০৪১ সালে স্মার্ট ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্যমাত্রা সেটিও পুঁজিবাজারের উন্নতি ছাড়া সম্ভব নয়। স্বল্প মেয়াদের পুঁজি নিয়ে ব্যাংকের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজার থেকে অর্থসংগ্রহের খরচ প্রায় শূন্য বলা যায়। আইপিওর মাধ্যমে টাকা নিলে সেটি কখনো ফেরত দিতে হয় না। অন্যদিকে ব্যাংকের কাছে টাকা নিলে আসলের সঙ্গে সুদও পরিশোধ করতে হয়। যে কোনো কারণেই হোক পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলো সেভাবে পারফর্ম করতে পারেনি। হয়তো আমরা ডিউ ডিলিজেন্স সঠিকভাবে করতে পারিনি। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে আইন ও বিধি বিধান মেনে কাজ করতে হবে। তাহলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিধি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, পুঁজিবাজারে জেন্ডার গ্যাপ দূর করতে হবে। তিনি বলেন, 'পুঁজিবাজার একটা বিশেষায়িত ক্ষেত্র। পুঁজিবাজারে নারীর অংশগ্রহণের সম্ভাবনা অপার। মেয়েরা যেভাবে সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে, পুঁজিবাজারেও তারা এগিয়ে আসবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।'
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আরো বলেন, বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে নারী ক্ষমতায়নের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে সমগ্র বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং লিঙ্গ সমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
স্পিকার বলেন, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে যেন নারীরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শক্ত অবিস্থান তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে নারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নারীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসকল প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়, সেগুলো দূর করতে হবে।
এর আগে 'পুঁজিবাজারে নারী' শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মডারেটর ছিলেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার। বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি সঙ্গীতা আহমেদ, অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্যাশন ডিজাইনার্স অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মানতাশা আহমেদ, ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক শামীমা আক্তার এবং অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের সহ-সভাপতি মনিজা চৌধুরী ডিশকাসনে অংশ নেন।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণ, টার্নওভার, ক্লায়েন্টস, ডিজিটাল বুথ, শাখা উদ্বোধন, প্রশিক্ষণসহ সব ইতিবাচক সূচককে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর বিএসইসির ৭৯৯তম সভায় এ পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য হলো- পুঁজিবাজারে কর্মরত বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত বিধি-বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন, সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
পুঁজিবাজারে কর্মরত জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি, বিনিয়োগকারীদের সেবার মান বাড়ানো এবং দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম প্রসারসহ পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও গতিশীলতা আনাও এই উদ্যোগের লক্ষ্য।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
বিএসইসির 'স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পুরস্কার' পেল ৮ প্রতিষ্ঠান https://corporatesangbad.com/85967/ |