ছাত্রী নির্যাতন: সানজিদাসহ ৫ শিক্ষার্থীকে ইবি থেকে বহিষ্কার

Posted on March 4, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক: কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফুলপরী নামে এক ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।

শনিবার (৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহাদাত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা (সেশন ২০১৭-১৮), চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার উর্মি (সেশন ২০২০-২১), আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম (সেশন: ২০২০-২১), ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম (সেশন ২০২০-২১) ও একই বিভাগের একই সেশনের মুয়াবিয়া জাহান।

এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। বাকিরা ছাত্রলীগের কর্মী। নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘দুপুর ১২টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত উপাচার্যের দপ্তরে শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম। সভা থেকে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের চূড়ান্ত বহিষ্কার করা হবে।’

প্রসঙ্গত, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে রাতভর র‌্যাগিং, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে হল তদন্ত কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি ও হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। পাশাপাশি নির্যাতনের প্রমাণ মিলেছে ছাত্রলীগ গঠিত তদন্ত কমিটিতেও। যার প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, কর্মী তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, হালিমা খাতুন ঊর্মি, ও ইশরাত জাহান মীমকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ।

এ বিষয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার ছাত্রী।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম রাত ৮টায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রজাপতি-২ রুমে যেতে বলেন। অসুস্থ থাকায় সেদিন তিনি যেতে পারেননি। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তাবাসসুম। ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথম দফায় র‍্যাগিং করে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে হলের প্রভোস্টের সহযোগিতায় তখন সেটা সম্ভব হয়নি।

পরদিন রোববার ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৭-৮ জন মিলে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে গণরুমে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। এ সময় তাকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারা হয় এবং মুখ চেপে ধরে গালিগালাজ করা হয়। এমনকি তাকে ময়লা গ্লাস মুখ দিয়ে পরিষ্কার করতে বলেন সানজিদা। পরে ওই ছাত্রীকে জামা খুলতে বলেন অভিযুক্তরা। জামা না খুললে পুনরায় মারতে থাকেন তাকে। এরপর জোর করে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেন তারা। এ ঘটনা কাউকে বললে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয় ভুক্তভোগীকে।

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, আমাকে গত রোববার গণরুমে ডেকে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেছে। আমার শরীরে এখনো ব্যাথা করছে। জীবন বাঁচাতে পরদিন সোমবার ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে আসি। আমি অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।