হাকালুকি হাওরে সরিষার বাম্পার ফলন

Posted on January 15, 2025

তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: এশিয়ার বৃহত্তম হাওড় মৌলভীবাজারের হাকালুকি পাড়ের পতিত অনাবাদি জমিতে সরিষার চাষাবাদ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ বছর প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওড় পাড়ের চাষিরা সরিষা চাষে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন।

প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে দেশের বৃহত্তম হাকালুকি হাওড়ের পানি সরে গেলে হাওড় পাড়ের উর্বর জমি অলস অনাবাদি পড়ে থাকে। এসব জমিতে বছরের পর বছর অলস চাষাবাদ বিহীন পতিত থাকে। তবে গত কয়েক বছরে কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার ফলে হাওড় পাড়ের পতিত জমি সরিষা চাষের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। প্রতি বছর সরিষা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এতে বদলে গেছে মৌলভীবাজারের হাওড় পাড়ের জনপথ। হাকালুকির বুক জুড়ে এখন শুধুই হলুদ সরিষার আবাদ। সরেজমিন হাওড় পাড়ে গেলে দেখা যায়, শীত শুষ্কতার এ মৌসুমে গাঢ় হলুদের মাখামাখি বিস্তৃত প্রান্তর। তা দেখে যে কারোরই মন ভরে যাবে মুগ্ধতায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় মৌলভীবাজারে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। শুধু হাকালুকির হাওড় পাড়ের বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলায় এ বছর ৪ হাজার ৩১৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। বিনামূল্যে সার ও বীজ পেয়ে চাষীরা উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি- ১৪, ১৫ ও ১৭ জাতের সরিষা চাষ করেন। এতে সরিষার খুবই ভালো ফলন পাওয়া গেছে।

এ বছর প্রতি হেক্টরে এক দশমিক ৪২ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে, বড়লেখার উপজেলার সুজানগর, তালিমপুর ও বর্ণি ইউনিয়ন। গত বছরের চেয়ে এ বছর হাওড়ে ৬১৩ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বাড়ানো হয়েছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রের বরাতে জানা যায়, সরিষা চাষের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে পতিত হাকালুকির হাওড়ের পুরো জমি এক সময় চাষের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটানো সহজ হবে। এছাড়া এ বছর জেলার সাত উপজেলায় এক হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে গত বছরের চেয়ে অতিরিক্ত সরিষা চাষ হয়েছে।

উপজেলার হল্লা গ্রামের সরিষা চাষি রুহেল আহমদ, সেলিম হোসেন, মাসুক আহমদ, ফয়জুর রহমান ও আব্দুস ছালাম-সহ একাধিক চাষিরা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তারা সরিষা চাষ করছেন হাওড়ের এসব পতিত জমিতে। চাষে ভালো লাভবান হওয়াতে দিনকে দিন সরিষার চাষ বদ্ধি পাচ্ছে। চাষিরা বাড়তি আয় রোজগারের পাশাপাশি ভোজ্য তেল নিজের পরিবারের চাহিদা মিটাতে পারছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, গত বছরের চেয়ে অতিরিক্ত ২ হাজার হেক্টর পতিত জমি সরিষা চাষের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় ৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হলেও, উৎপাদন ধরা হয়েছে- ৭ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন এমনটাই জানান তিনি।