দিনাজপুরে ভবেশের মৃত্যুর ঘটনায় ভারতের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

Posted on April 20, 2025

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সকল ধর্মের নাগরিকদের সমান অধিকার নিশ্চিত করে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম দিনাজপুরে ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় ভারত সরকারের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) বাসসের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর ‘সংগঠিত নিপীড়নের ধারাবাহিকতার’ অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে’।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মুখপাত্র শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা এই ভিত্তিহীন দাবিকে প্রত্যাখ্যান করছি।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন দেশ নয়, যেখানে সংখ্যালঘুরা সরকারের সমর্থনে কোন বৈষম্যের শিকার হন।

প্রেস সচিব পুনরায় উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ সরকার সকল নাগরিককে তার ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে অধিকার রক্ষা করে।

তিনি বলেন, ‘এই নির্দিষ্ট ঘটনায়, আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে ভুক্তভোগী পূর্বপরিচিত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে বাইরে গিয়েছিলেন। তার পরিবার কারো সঙ্গে বাইরে যাওয়া নিয়ে কোনো সন্দেহজনক বিষয় জানাননি।’

শফিকুল আলম জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে শরীরে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

তবুও, মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে ভিসেরা বিশ্লেষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান এবং বলেন, ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

‘আমরা সব পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, ঘটনাটি নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার জন্য,’তিনি যোগ করেন।

শনিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবেশ চন্দ্র রায়ের হত্যাকে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর সংগঠিত নিপীড়নের ধারাবাহিকতা’ বলে মন্তব্য করে।

এক্স-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘু নেতা শ্রী ভবেশ চন্দ্র রায়ের অপহরণ ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

‘এই হত্যাকাণ্ড একটি ধারাবাহিক নিপীড়নের অংশ, যেখানে হিন্দু সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে এবং পূর্বের ঘটনাগুলোর অপরাধীরা বিনা শাস্তিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে,’ তিনি দাবি করেন। সূত্র-বাসস।

ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু নিয়ে যা জানা গেছে

৫৫ বছর বয়স্ক ভবেশ চন্দ্র রায় বিরল উপজেলার শহরগ্রাম ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত তারকানন্দ রায়ের ছেলে। তিনি ছিলেন পেশায় একজন কৃষক।

বিরল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবল রায় জানান, নিহত ভবেশ চন্দ্র রায় ওই পরিষদের সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাতে বিকেলে স্থানীয় দুই যুবকসহ চারজন দুটি মোটরসাইকেলে করে ভবেশের বাড়িতে আসেন। এরপর বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ী বাজারে যাওয়ার কথা বলে ভবেশকে তাদের মোটরসাইকেলে তুলে নেন। এরপর রাতে পান–বিড়ি খেয়ে তার অসুস্থতার খবর পায় পরিবার। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের ছেলে স্বপন জানান, ঘটনার দিন বিকেলে তার বাবাকে চারজন মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যায়। পরে রাতে মোবাইলে জানানো হয় যে তার বাবা অসুস্থ। পরে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পারিবারিকভাবে আলোচনা করে কি করা যায় সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, তার বাবার মৃত্যু অস্বাভাবিক। তবে এটি অসুস্থ হয়ে নাকি আঘাতের মাধ্যমে সেটি এখনো নিশ্চিত নন। তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, এমন কোন তথ্য প্রমাণ তাদের কাছে নেই।

এ বিষয়ে নিহত ভবেশের স্ত্রী স্বান্তনা রাণী জানান, রতন ও আতিকসহ আরও ৪ জনের সাথে তার স্বামী মোটরসাইকেলে যান। কিভাবে তার স্বামী মারা গেছে এখনো সঠিকভাবে বলতে পারছেন না তিনি। সুস্থ অবস্থায় বাড়ি থেকে বের হলেও পরে তার অসুস্থতা ও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মাসুদ রানা জানান, হাসপাতালে পৌঁছার আগেই ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও কর্তব্যরত চিকিৎসক ইজিসি করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর সবুর জানান, নিহতের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মরদেহ ময়নাতদন্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

এ ঘটনায় নিহত ভবেশ চন্দ্র রায়ের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোন অভিযোগও দায়ের করা হয়নি।