সড়ক দুর্ঘটনারোধে কমিটি হয়, সুপারিশ হয়, বাস্তবায়ন নিয়ে থাকে সংশয়

Posted on March 24, 2019

সড়কপথে বিশৃঙ্খলা বা নৈরাজ্য বন্ধের জন্য সুপারিশ আর প্রতিশ্রুতির শেষ নেই, তবুও সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামেনি। এমন বাস্তবতায় সরকারের আরো একটি কমিটি এবার ১১১ দফা সুপারিশ দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সুপারিশ আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা? এ প্রসঙ্গে কমিটির প্রধান সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, বর্তমান কমিটির সুপারিশ এবং আগেকার সুপারিশের মধ্যে 'পার্থক্য আছে।' সে অর্থে এবারের সুপারিশ বাস্তবায়নে কোন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হবে না।

গত বছরের জুলাই মাসে ঢাকায় দু'জন কলেজ শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার ঘটনায় সারা দেশে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে অনেক প্রতিশ্রুতি এসেছিল। এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নেতা, গবেষক, পুলিশ এবং বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে ২২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সুপারিশ তৈরির জন্য। সেই কমিটি ১১১ দফা সুপারিশ দিয়েছে।

আমাদের দেশে যখন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তখন অনেক কমিটি হয়ে যায়, অনেক সুপারিশ আসে। কিন্তু আসলে বাস্তবায়নের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায় না। সর্বশেষ কমিটির সুপারিশ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাস্তবায়ন একদম হচ্ছে না। এটা যথেষ্ট আন্তরিক হতে হবে। আগের বিভিন্ন কমিটির সুপারিশের সাথে এখনকার কমিটির সুপারিশের পার্থক্য কতটা, সেই প্রশ্নও এখন অনেকে তুলেছেন।

কারণ ২০১১ সালে গঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড: আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটির সুপারিশমালা বিবেচনায় নিয়ে এখনকার কমিটি সুপারিশ তৈরি করার কথা বলেছে। কিন্তু এখনকার কমিটির প্রধান শাজাহান খান বলেছেন, তাদের সুপারিশ আগের থেকে অনেক ক্ষেত্রে আলাদা হবে। বড় পার্থক্য' হিসেবে তিনি বলছেন, অতীতে সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ, পুলিশ বা মালিক শ্রমিক সংগঠনের ওপর দায়িত্ব দেয়া হতো। সেখানে সমন্বয়ের অভাব থাকতো।

এবার তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে এক বা একাধিক টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সমন্বয়ের ভিত্তিতে বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। এতে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে বলে মনে করেন শাজাহান খান। ইতিপূর্বে অনেকে সুপারিশ হয়েছে, তার বাস্তবায়ন হয় নাই। সে কারণে এবার সরকারের টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই টাস্কফোর্স একটা নয়, প্রয়োজনে একাধিক টাস্কফোর্সও গঠন করা হবে।

জানা গেছে, সুপারিশ বাস্তবায়নের মেয়াদকে জরুরীভিত্তিতে, স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে। তবে সুপারিশ তৈরির সরকারি কমিটির একজন সদস্য এবং নিরাপদ সড়ক চাই এর নেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, পরিবহন শ্রমিক মালিক প্রতিনিধিদের নেতৃত্বেই সুপারিশ তৈরি করার কারণে এবার তা বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ কম হবে।

কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে সাধারণত চালক এবং শ্রমিকদের মধ্যে থেকেই বেশি বিরোধিতা আসে, তবে এবারের কমিটি গঠনের মাধ্যমে সে বিরোধের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। পরিবহন সেক্টরকে যারা নেতৃত্ব দেন, এবং তাদের মাধ্যমে যখন এই সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে জমা হবে, তখন সেটা বাস্তবায়নের সময় অন্তত পরিবহণ সেক্টরের সাথে সম্পৃক্ত নেতৃবৃন্দ এর বিরোধিতা করতে পারবেন না। সুতরাং জনগণের প্রত্যাশা, অন্তত এবারের কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে আর কোনো সংশয় থাকবে না।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ, সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত