চিনি ও ভোজ্যতেলের নিয়ন্ত্রণ পরিশোধনকারীদের হাতে: মো. এনায়েত উল্লাহ

Posted on March 24, 2018

হাফেজ আলহাজ মো. এনায়েত উল্লাহ। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এবং পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি। ১৯৭৩ সাল থেকে মৌলভীবাজারে ব্যবসা করে আসা এ ব্যবসায়ী বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতিরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন তিনি। 

প্রশ্ন: আগামী রমজান সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি কেমন?

মো. এনায়েত উল্লাহ: ব্যবসায়ীদের সারা বছরই প্রস্তুতি থাকে। তবে রমজানে কয়েকটি পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এজন্য এ বছর যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বর্তমানে চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্য মজুদ আছে। সব পণ্যের দামই স্থিতিশীল রয়েছে। আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়ে। তবে এ বছর কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। সাদা ও কালো গোলমরিচ ও জায়ফলের দাম ২৫ বছরের সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।

প্রশ্ন: অভিযোগ আছে, ব্যবসায়ীরা প্রায়ই সিন্ডিকেট করে একচেটিয়া ব্যবসা করেন। এ কারণেই কি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়ে?

মো. এনায়েত উল্লাহ: পণ্যভেদে তা থাকতে পারে। চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজার মূলত পরিশোধনকারীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব পণ্যের দাম কম বা বেশি হওয়াটা তাদের উপরেই বর্তায়। সাধারণ ব্যবসায়ীরা এ দুটি পণ্য আমদানি করেন না। কয়েকজন পরিশোধনকারী বিদেশ থেকে কাঁচামাল এনে দেশে পরিশোধন করছেন। আমদানি, পরিশোধন, সরবরাহ ব্যবস্থা সবই মিলমালিকদের হাতে। এক্ষেত্রে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করলেও এ দুটি পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন না।

তবে অবাধে আমদানিযোগ্য পণ্য মজুদ রাখার সুযোগ নেই। কোথাও ঘাটতি দেখা দিলে বিদেশ থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে তা দেশে চলে আসছে। একজন আমদানিকারক তার লাইসেন্সের মাধ্যমে যেকোনো সময় যেকোনো পণ্য চাহিদামতো পরিমাণ আমদানি করতে পারেন। এতে কোনো বাধা-নিষেধ নেই। পণ্যভিত্তিক কোনো লাইসেন্স নেই।

প্রশ্ন: পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্যের দামে বিরাট ব্যবধান কেন?

মো. এনায়েত উল্লাহ: সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার থাকলে এ ব্যবধান কমে আসবে। ঢাকার ভেতরে ৫ শতাংশ মুনাফা করলেই যথেষ্ট। কিন্তু সরকারের নজরদারি না থাকায় খুচরা বিক্রেতারা সুযোগ নেন। যারা মৌসুমি ব্যবসায়ী, তারাই মূলত দাম বাড়ান। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মূলধারার ব্যবসায়ী নন। তারা বেশি মুনাফার লোভে ভেজাল ও মানহীন পণ্য বিক্রি করেন। তবে ভালো ব্যবসায়ীরা তাদের দীর্ঘদিনের সুনাম ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

প্রশ্ন: ২০১১ সালে পরিবেশক আইন করার পর ডিও প্রথা তুলে দেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা এখনো আগের ডিও প্রথার মতো এসও ব্যবসা করছেন...

মো. এনায়েত উল্লাহ: মিলমালিকরা পরিবেশকদের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে থাকেন। এক জাহাজ পণ্য দেশে আসার পর একদিনেই বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু চাহিদা বেশি থাকায় সরবরাহে জটলা তৈরি হয়। মিলমালিকরা পণ্য বাকিতে বিক্রি করেন না। তবে পরিবেশকরা বাকিতে করে থাকেন। এ কারণে পরিবেশকদের পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে।

প্রশ্ন: মৌলভীবাজারে বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?

মো. এনায়েত উল্লাহ: পুরান ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট ও যানবাহন প্রবেশে বাধা। রাস্তা যতটুকু রয়েছে তা-ও চালু নেই। নয় মাস ধরে সোয়ারীঘাট-চকবাজারের রাস্তাটি সংস্কারের জন্য পাইপ ফেলে রাখা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে বিএনপি নেত্রীকে পুরান জেলখানায় রাখায় কয়েকটি রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে মৌলভীবাজার, বেগমবাজার ও চকবাজারসহ আশপাশের ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি এখন চরমে। তারা পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না। বেচা-বিক্রিও অর্ধেকে নেমে এসেছে। দীর্ঘদিনের সংগ্রামের পর পুরান ঢাকা থেকে জেলখানা সরানো হলো। মানুষের স্বস্তি আসবে এমনটাই ভেবেছিল লোকজন। কিন্তু তা আর হলো না। অস্থায়ী আদালত করায় দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাঘাট প্রায়ই বন্ধ থাকছে।

প্রশ্ন: ছিনতাই-চাঁদাবাজি কিংবা অন্য কোনো হয়রানির শিকার হতে হয় কি?

মো. এনায়েত উল্লাহ: মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটছে না। এক্ষেত্রে একতাবদ্ধ শ্রমিক শ্রেণী। এছাড়া প্রশাসনও সার্বিক সহযোগিতা করছে। বস্তা বস্তা টাকা ব্যাংকে জমা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে না।

সৌজন্যে: দৈনিক বণিক বার্তা