![]() |
মো: মিজানুর রহমান. এফসিএস।। এক সপ্তাহে আইসিএসবি থেকে ২টি ইমেল তাও আবার একই বিষয়ের উপর। প্রথমে কিছুটা অবাক হই কিভাবে হচ্ছে? দায়িত্বশীলদের ফোন দিলে তারা দুই ইমেলের প্রসঙ্গটা রেখে কাউন্সিলের চলমান সংকট ও সম্ভ্রাব্য সমাধান নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করেন। হ্যাঁ, বলছিলাম আইসিএসবির ইফতার পার্টি নিয়ে। প্রথম ইমেলে দেখলাম ইফতার পার্টি হবে ধানমন্ডিতে, ১৫/০৩/২৫ বিকাল ৫টা থেকে ভেন্যু ফরেস্ট লাউঞ্জ। এরপর ১২/০৩/২৫ তারিখে আবার নতুন ইমেল পাই তাতে লেখা ইফতার পার্টি হবে হোটেল সোনারগাঁয়, ঢাকা সময় বিকাল ৩টা থেকে। অর্থাৎ একদিন এগিয়ে শুক্রবার (১৪ মার্চ, ২০২৫)।
ইমেল পেয়ে যেমন অবাক হয়েছি, তেমনি খুশিও হয়েছি কারণ শনিবারে থাকতে পারতাম কিনা সন্দেহ ছিল। কিন্তু এখন থাকবো ইনশাআল্লাহ। আশা করি, আমার মতো অনেকেই খুশি হয়েছেন, কর্তৃপক্ষের এমন সিন্ধান্তে। ধন্যবাদ জানাই যারা এই সিন্ধান্ত নিয়েছেন তাদেরকে।
সুতরাং তারাও খুশি, আমি/আমরা বেজায় খুশি থাকতে পারবো এজন্য। আর ভাল লাগছে যে জন্য সেটা হলো- এক সময় প্রায় প্রতিবারই ইফতার পার্টি হত বিয়াম ফাউন্ডেশন ইস্কাটন, হোটেল পূর্বানী, মতিঝিল, তারপর ঢাকা ক্লাব, শাহবাগ, এবারই প্রথম ইফতার পার্টি হবে হোটেল সোনারগাঁ, ঢাকা।
গত সপ্তাহেই একজনের সাথে কথা হচ্ছিল সামনে আর ছোট-মোট ভেন্যুতে আমাদের ইফতার পার্টি হবে না কারণ মেম্বারস বাড়ছে। সদস্য এখন ৭’শ, যখন ১ হাজার হবে তখন বুঝেন অবস্থা। বড় কোন ভেন্যুতে নিতে হবে আইসিএসবির ইফতার পার্টি। যেমন চিন্তা তেমন কাজ পরের সপ্তাহেই ইফতার পার্টি হচ্ছে হোটেল সোনারগাঁয়ে। কি মজা, কি খুশি ঈদের আগেই ঈদ।
হঠাৎ আমাদের মধ্যে যেন ছন্দ ফিরে আসছে, প্রাণ ফিরে পাচ্ছে আইসিএসবি, এভাবেই হোক আমাদের মানসিক উন্নতি। মানসিক উন্নতি হলেই হবে প্রফেশনের উন্নতি। প্রফেশনের উন্নতি হলেই বাড়বে মর্যাদা। আমাদের সন্তানেরা এবং পরবর্তী প্রজন্ম যেন সিএস প্রফেশন নিয়ে গর্ব করতে পারে।
এই বিষয়ে যাদের সাথে কথা হয়েছে সবাই এই খুশির সাথে শেয়ার করেছেন তার নিজের সেরাটা। আমার পাঠকদের জন্য তুলে ধরলাম যাদের সাথে কথা হয়েছে তাদের মনের কথা, আবেগের কথা ও ভালোবাসার কথা। আশা করি, আপনাদেরও ভাল লাগবে। সাথেই থাকুন।
আইসিএসবি’র ইফতার পার্টির ভেন্যু পরিবর্তনসহ সার্বিক বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া এফসিএস বলেন, ইফতার পার্টির ভেন্যু পরিবর্তন প্রসঙ্গে আমি কিছুই জানি না। তবে এটা আমাদের জন্য খুবই ভাল খবর। ইনস্টিটিউট প্রাণ ফিরে পাচ্ছে, ছন্দে ফিরে আসছে। তবে সার্বিক বিষয়ে যদি বলি, ইতিপূর্বে অর্থাৎ ২৬-০১-২০২৫ তারিখে কাউন্সিল সভার আগে আইসিএসবি’র সিইও এবং সচিব সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও আইসিএসবির ল'ইয়ার ব্যারিষ্টার আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছ থেকে মোহাম্মদ আসাদউল্লাহ, এফসিএস এর কাউন্সিল পদ শূন্য হওয়া না হওয়ার লিগ্যাল অপিনিয়ন প্রাপ্ত হন যেখানে বলা হয়েছে “যেহেতু মোহাম্মদ আসাদউল্লাহ প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সে কারণে চার্টার্ড সেক্রেটারিজ এ্যাক্ট ২০১০ এর সেকশন ১০ ও সাব সেকশন ১০ এর ১ ও ২ অনুযায়ী তার প্রেসিডেন্ট পদ শূণ্য হবে এবং কাউন্সিলে তার কাউন্সিল সদস্য পদ বহাল থাকবে“।
তিনি আরো বলেন, এসভিপি ও সেক্রেটারি লিগ্যাল অপিনিয়ন কাউন্সিল সদস্যদের কাছে গোপন করেছেন। যা ছিলো প্রফেশনাল মিস কনডাক্ট। কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত বর্হিভূত আইসিএসবি থেকে আমার দেয়া লিগ্যাল নোটিশের জবাব যেভাবে নেগেটিভলি দেওয়া হয়েছে তা মোহাম্মদ আসাদউল্লাহ, এফসিএস এর জন্য অত্যন্ত মানহানিকর ও অমার্যাদাকর এটা মেনে নেয়ার মতো না। খুবই খারাপ ভাষায় তারা জবাব দিয়েছেন। যা জানতে চেয়েছি তা না বলে মোহাম্মদ আসাদউল্লাহকে ব্যক্তিগত আক্রমন করেছেন।
তিনি বলেন, কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ছাড়াই আইসিএসবি’র এসভিপি এবং সিইও নিজেদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে লিগ্যাল নোটিশের জবাব উদ্দেশ্যমূলকভাবে দিয়েছেন এবং ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে লিগ্যাল অপিনিয়ন নিয়েছেন মর্মে প্রতিয়মান হয়েছে। যা তাদের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিফলন। তাদের দ্বারা কাউন্সিলের অন্য সিনিয়র কাউন্সিল সদস্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রশে প্রভাবিত হয়ে মোহাম্মদ আসাদউল্লাহ, এফসিএস এর পদ শূণ্য ঘোষণার জন্য অন্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে অবৈধ ঘোষিত হয়েছে।
আইসিএসবি’র ইফতার পার্টি এগিয়ে আনা ও ইফতারের ভেন্যু পরিবর্তন তথা সার্বিক বিষয় নিয়ে কাউন্সিল সদস্য মোঃ হারুন আর রশীদ রুমন এফসিএস এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সাধারণ মেম্বারদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই এমন সিন্ধান্ত। তবে ইনস্টিটিউটের সার্বিক বিষয়ে যদি বলি, এই অবৈধ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথম হতেই তিনি প্রতিবাদ করেন।
তিনি বলেন, সিএস এ্যাক্টের ২০১০ এর ধারা ১০ (১) ও (২) এর অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জনাব আসাদউল্লাহর কাউন্সিলরশীপ বাদ দেওয়া হয়। এই ব্যাখার বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদের মুখে অধিকতর ব্যাখ্যা চেয়ে পুনরায় বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। কাউন্সিল সভায় এই বিষয় প্রতিবাদ করার জন্য একজন প্রবীন কাউন্সিলর তাদেরকে মন্ত্রণালয়ের এ্যাকশনের ভয় দেখান। অপর একজন প্রবীন কাউন্সিলর এই আইন নিজ হাতে ড্রাফট করার দাবী করে ব্যাখ্যা প্রদান করেন এবং বলেন জনাব আসাদউল্লাহর কাউন্সিলর পদটিও থাকবে না। তখনও আমি এই ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। উক্ত এজেন্ডাটি পাশ করতে গেলে আমি উক্ত এজেন্ডায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেই ও সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করি। কিন্তু মেজরিটির কাউন্সিল সদস্য একমত হয়ে কাউন্সিলে মোহাম্মদ আসাদউল্লাহ, এফসিএস এর কাউন্সিল পদ শূন্য ঘোষণার করেন। যা এখন উচ্চ আদালতে রায়ে বাতিল হল।
এই রায়ে জনাব মোঃ হারুন আর রশীদ রুমন সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সত্যের জয় হয়েছে ও সিএস এ্যাকটের অপব্যাখ্যা প্রতিহত হল। তিনি আরও বলেন, ইতিপূর্বে অনেক অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তিনি লাঞ্ছনা ও ক্ষতির শিকার হয়েছেন, যা অনেকেই জানেন। তিনি সকল সময় সত্যের ও সিএস পেশার উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও মনে করেন, সিএস পেশার উন্নয়নের জন্য অপশক্তিকে প্রতিহত করে আশু সংস্কার করতে হবে। এখনই সঠিক সময় সিএস এ্যাক্ট ও সিএস পেশাজীবীদের উন্নয়নের জন্য তরুণ্যদীপ্ত ইতিবাচক মনোভার সম্পন্ন নেতৃত্বের এগিয়ে আসতে হবে ও সকল সদস্যদের দলাদলি/ভেদাভেদ ভুলে এগিয়ে একত্রে কাজ করতে হবে। তিনি সকল সদস্যদের স্মরণ করিয়ে দেন, আইসিএসবি আমাদের, তাই আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য।
ইফতার পার্টির ভেন্যু পরিবর্তন ও আইসিএসবি’র চলমান সংকট নিয়ে কোন আশার আলো আছে কিনা জানতে চাইলে আইসিএসবি কাউন্সিলর এ এফ এম রুবাইয়াত জানান, ইফতার পার্টির ভেন্যু পরিবর্তনের বিষয়টি আকস্মিক, আশা করি ইফতার পার্টিতে উপস্থিতি বাড়বে এবং সবাই খুশি হবেন। সার্বিক বিষয়ে বলেন, মাননীয় আদালতের রায়ে আবারও সত্যের বিজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইসিএসবি কাউন্সিলর এ এফ এম রুবাইয়াত। তিনি এই নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই প্রতিবাদী হিসেবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তার লক্ষ্য আইসিএসবি-তে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা এবং সদস্যদের মধ্যে বিভেদ ও গোষ্ঠীবাদ বন্ধ করা। তিনি সর্বদাই সংস্থার সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন, এবারও তিনি সেই ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন। এই নির্বাচনে পাঁচবারের সভাপতি ও সর্বোচ্চ ভোটে বিজয়ী প্রার্থীকে অপমানিত করে আইসিএসবি থেকে কান্না করতে করতে বের করে দেওয়া হলে, তিনি তার পাশে দাঁড়ান। এর আগেও তিনি জনাব শরীফ ও জনাব হারুনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এবারও তিনি জনাব আসাদুল্লাহর পক্ষে অবস্থান নেন, যদিও তাকে মাত্র কয়েকজন কাউন্সিলর সমর্থন করেছিলেন। তার এই ন্যায়ের পক্ষের অবস্থানের জন্য তাকে শুধু কাউন্সিল সদস্যদের থেকেই নয়, বরং একজন কাউন্সিলরের অনুসারীদের থেকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাকে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থার মুখেও ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এক কাউন্সিল সদস্য মিনিটসে তার নাম লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেন, যাতে ভবিষ্যতে তাকে শাস্তি দেওয়া যায়। কিন্তু তিনি ভীত হননি। প্রায় সাত মাস ধরে তিনি ন্যায়ের জন্য তার প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন। আজ প্রমাণিত হয়েছে, সাহসী মানুষেরাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়।
তিনি মনে করেন আইসিএসবি’র সদস্যরা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিত ও শীর্ষস্থানীয় পেশাজীবী। তাদের উচিত সংস্থার ভেতরের স্বার্থান্বেষী ও অনৈতিক ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে এড়িয়ে চলা এবং সংস্থায় এক নতুন বিপ্লব ও রেনেসাঁ সৃষ্টি করা। ঐক্যবদ্ধভাবে সংস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং নতুন সূর্যোদয়ের দিকে পরিচালিত করাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আইসিএসবিকে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার এই সংগ্রামে আমরা সবাই একসাথে এগিয়ে যাব। একতা, ন্যায় ও উন্নতিই হোক আমাদের পথচলার মূলমন্ত্র।
আইসিএসবি’র ইফতার পার্টির তারিখ পরিবর্তন ও কাউন্সিলে সার্বিক কর্মকান্ড নিয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিল সদস্য মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, ইফতার পার্টি ভেন্যু পরিবর্তন একটি ভাল সিন্ধান্ত। আশা করি উপস্থিতি বাড়বে এবং মত বিনিময় সহজ হবে। আর সার্বিক বিষয়ে আমি বিশ্বাস করি যে মাননীয় আদালত তার বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এটি আইনের চেতনাকে সমুন্নত রাখে এবং অংশীদারদের মধ্যে অস্পষ্টতাও দূর করে। এই ঐতিহাসিক আদেশের মাধ্যমে এই বিষয়ে আমার যুক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আমি আনন্দিত।
লেখক: সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
এভাবেই প্রফেশনের উন্নতি হউক, আইসিএসবি হয়ে উঠুক সবার জন্য গর্বের https://corporatesangbad.com/505598/ |