স্বাস্থ্য ডেস্ক : এডিস নামক এক প্রকার মশার কামড়ে এ জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ালে মশার দেহে জীবানু প্রবেশ করে এবং পরবর্তীকালে অন্য সুস্থ লোককে কামড়ালে তার দেহে ভাইরাস প্রবেশ করে। এই মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়াই। বর্ষায় ও গ্রীষ্মের সময় এ মশা বংশ বিস্তার করে ও এ রোগের দ্রত বংশ বিস্তার করে। ডেঙ্গু জ্বর ম্যালেরিয়ার মতোই মশাবাহিত জ্বর। ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট –জনিত আর ডেঙ্গু ভাইরাস–জনিত। এডিস মশা প্রথমে আফ্রিকার জঙ্গলের গাছের কোটরে বাস করত। আজ সুদূরে আফ্রিকা থেকে ডেঙ্গু জ্বর আমাদের দেশে আমদানি হয়েছে সমুদ্রপথে, আকাশ পথে সড়ক পথে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রকার:
ডেঙ্গু ভাইরাস (RNA Haby Virus) –এর ৪ প্রকার সেরো টাইপ আছে। ডেঙ্গু-১, ডেঙ্গু-২, ডেঙ্গু-৩ , ডেঙ্গু-৪। কিন্ত ডেঙ্গু জ্বর প্রধাণত -২ প্রকার (১) ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর, (২) হেমোরোজিক ডেঙ্গু জ্বর। এছাড়া ডেঙ্গু জ্বর তীব্র হয়ে ডিঙ্গু হেমোরেজিক শক সিড্রোম হতে পারে।
কোথায় বংশ বৃদ্ধি করে ও ডিম পাড়ে :
এডিস মশা সাধারণত জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে ও বংশ বৃদ্ধি করতে পারে, যেমন ফুলের টপ, বৃষ্টির জমানো পানি, ফুলদানি, ফ্রিজের নিচে ট্রে, পরিত্যক্ত কাচের বোতল, পরিত্যক্ত টায়ার, ড্রাম, মাটির ভাঙা কলস, ডাবের খোসায় জমানো পানিতে, ছাদের কোনায়, পানির ট্যাংকে এবং কয়েক দিন ব্যবহার না করা বালতি।
কখন কামড়ায় :
সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। বিশেষ করে সকালের দিকেও বিকালের শেষে দিকে এই মশা বেশি কমড়ায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ:
ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণঃ
তীব্র জ্বর ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহ্ইাট পর্যন্ত হতে পারে। বমি, পেট ব্যথা ও মাথাব্যথা, কোমর, চোখের পেছনে ব্যথা, জয়েন্ট বা অস্তিসন্ধি ব্যথা, হাড়ের ব্যথা এতই প্রচন্ড যে মনে হয় হাড় ভেঙে গেছে। যে কারণে এই জ্বরকে ব্রেকবোন ফিবার বলা হয়। (হাড়সহ) ব্যথা হতে পারে। শিশুরা অসহ্য কষ্টে কান্নাকাটি করে ও খিটখিটে মেজাজের হয়। চার-পাঁচ দিনেব মধ্যে জ্বর ভালো হয়ে যায়। দেহের ত্বকে অ্যালার্জি র্যাশেক মতো র্যাশ দেখা দিতে পারে। দাগগুলোর কারণে চুলকানিও হতে পারে।
হোমোরেজিক বা রক্তক্ষরা ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ:
ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলোই এই অবস্থায় অনেক বেশি তীব্র দেখা যায় এবং সঙ্গে রক্তক্ষণ থাকে। বিশেষ করে রক্তবমি, পায়খানার সাথে কালো রক্ত, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত হয়, নাক দিয়ে রক্তপাত, ত্বকের নিচে লালভ চাকার মতো জমটি বাঁধা রক্তর নমুনা ইত্যাদি দেখা যায়। মস্তিস্ক ও হার্টের মধ্যেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ রক্তক্ষরণের ফলে রোগী হাইপোভলিউমিক শকে অর্থাৎ অজ্ঞান হয়ে গিয়ে রোগীর মৃত্যূ পর্যন্ত হতে পারে। এ অবস্থাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বলে।
চিকিৎসা :
সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে জ্বরের লক্ষণগুলো অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে করাতে হবে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা, যেমন- ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, বমির জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ (স্টিমেটিল) জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হয়। এ জ্বরে প্রচুর পানি পান করতে হয়। জ্বর শেষ রোগীর দুর্বলতা, ক্ষুধামন্ধা ,বিষণ্ণতা, দেখা দিলেও পরে আবার সেগুলো ভালো হয়ে যায়। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। প্রতিদিন রক্ত পরিক্ষা করে বিশেষ করে রক্ত প্লাটিলেট পরিক্ষা করে ডেঙ্গু জ্বরের তীব্রতা দেখতে হয়। কারণ, এই জ্বরে প্লাটিলেট অনেক সময় কমে যায়। যদি ৩০ হাজারের নিচে হয় তখন প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন করাতে হয়। আর বেশি রক্তক্ষরণ হলে রক্ত দিতে হয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে এসপিরিন দিলে রক্তক্ষরণের প্রবণতা বেড়ে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে এসপিরিন দিলে রাইসিন ড্রোম নামক মারাত্নক অবস্থার সৃষ্টি হয়। ঠিক সময়মতো চিকিৎসা করলে জ্বর ভালো হয়ে যায়।
প্রতিরোধ:
এডিস মশার উৎস নির্মূল করাই এর প্রতিরোধের একমাত্র উপায় যেসব জায়গায় ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা বংশ বৃদ্ধি করে সেসব জায়গায় পরিষ্কার করতে হবে। গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া ন্যাট, স্প্রে ব্যবহার করতে হবে এবং মশাড়ি টানিয়ে ঘুমাতে হবে দিনের বেলায়ও।
লেখক: ডা. মো: সোহরাব হাসান রুমান, রেসিডেন্ট ফিজিসিয়ান, ইন্টারন্যশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল।
আরও পড়ুন:
ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট নিতে হয় কেন? প্লাটিলেট বাড়ে যেসব খাবারে
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
ডেঙ্গুজ্বর প্রকোপ বাড়ছে, প্রতিরোধই সর্বোত্তম পন্থা https://corporatesangbad.com/45797/ |