জাতির ভবিষ্যৎ আগামী প্রজন্মের কথা ভাবুন

Posted on July 24, 2021

রায়হান আহমেদ তপাদার : দেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনা রোগী শনাক্ত হবার পর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে একই মাসের ১৭ তারিখ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়, যা আজও চলমান। শিক্ষা ব্যবস্থা সচল করার উদ্যোগ যে একেবারেই নেয়া হয়নি তা কিন্তু নয়। তবে কেন জানি তা আর আলোর মুখ দেখেনি। কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কখনো বলা হচ্ছে আক্রান্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। আবার কখনও বলা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান করার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। বর্তমানে আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে আক্রান্তের হার গড়ে ৪০ শতাংশ বা আরো বেশি। দেশের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে টিকা প্রদান করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া যেসব শিক্ষকের বয়স ৪০ বছরের কম তাদের টিকা কার্যক্রম এখনও শুরুই করা যায়নি। আবার যারা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন টিকা স্বল্পতার কারণে তাদের দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভারত নিজেদের ঘর সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে। তাই আপাতত তারা টিকা সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ফলে চুক্তি অনুযায়ী ভারতের কাছ থেকে সময়মত টিকা পাওয়া অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভারতের এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় অর্ধশত দেশে টিকা কর্মসূচি বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীকে সময়মত টিকা দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম সচল করা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। করোনা দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে স্থবির করে দিয়েছে। প্রায় ১৫ মাস হলো ক্লাসরুমে তালা। করোনা দেশের সকল ক্ষেত্রকে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণটা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে, গ্রাম অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা নাজুক। করোনা নড়বড়ে করে দিয়েছে শিক্ষার ভিতকে। কবে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেউ জানে না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে দেশে বড় ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বলতে গেলে দেশের সব কিছু সচল। রাস্তায় নিয়মিত যানবাহন চলাচল করছে। নদীতে লঞ্চ-স্টিমার সচল। বিপণিবিতানে দোকানীরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। ক্রেতারা নিয়মিত শপিংমলে যাচ্ছে। বিলাস বহুল শপিং মলের ফুড কোডগুলোতে ভোজনরসিক মানুষের প্রচন্ড ভিড়। পথেঘাটে মানুষ গিজগিজ করছে। হাটবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো তোয়াক্কা নেই। কলকারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক। মোটা দাগে বলতে গেলে দেশের সবকিছুই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক শুধু দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু কেন এতদিনও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল করা গেল না, তা দেশের প্রতিটি মানুষকে চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। বাংলাদেশের মানুষ শিক্ষা নিয়ে এমন সংকটে কোনদিন পড়েনি। এমনকি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও নয়। করোনা দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে এমন সংকট সৃষ্টি করবে তা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি।করোনার ভয়াবহতা সত্তে¡ও জীবন-জীবিকার তাগিদে শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হয়েছে। কলকারখানায় নিয়মিত শ্রমিক কাজ করছে। কিন্তু কেন জানি কোনো এক অজানা কারণে সবকিছু সচল থাকার পরও একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অচল করে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, মিছিল করছে ক্লাসে ফেরার দাবিতে। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে শঙ্কিত। তাদের বয়স বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ বৃদ্ধি করা হচ্ছে না চাকরিতে আবেদন করার বয়সসীমা। দেশে দিনদিন কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধনী-গরিবের ব্যবধান বাড়ছে। দেশের উচ্চবিত্ত ও হোমরা-চোমরা গোছের অধিকাংশ মানুষের সন্তানেরা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেনা বললেই চলে। তাদের সন্তানেরা বেগম পাড়া বা সেকেন্ড হোমের বিলাসবহুল বাড়িতে অবস্থান করে উন্নত দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। অথচ, দেশের দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত গ্রামীণ ও শহুরে শিক্ষার্থীরা আজ এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যদিয়ে দিনাতিপাত করছে। চাকরি নেই। বেকারত্ব বাড়ছে।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে যে সমস্ত শিক্ষার্থী টিউশনি করে বা খন্ডকালীন চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করত বা তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করত, করোনা তাদের সে পথও রুদ্ধ করে দিয়েছে। মূলত গ্রাম অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই ভঙ্গুর। প্রযুক্তির অপ্রুতলতা, সচেতনতার অভাব, অভিভাকদের অসচেতনতা, প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণে গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের অনীহা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। সরকার গ্রামীণ জনপদে শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখার জন্য কোন উদ্যোগ যে গ্রহণ করেনি তা কিন্তু নয়। তবে সেটা সফল হয়নি প্রযুক্তির অপ্রতুলতা ও অভিভাবকদের আর্থিক অসঙ্গতির কারণে। শহর অঞ্চলের ছেলেরা এদিক থেকে কিছুটা ভাগ্যবান। তারা প্রযুক্তির কাছাকাছি থাকায় অনলাইনে ক্লাস বা পরীক্ষার সুযোগ পেলেও গ্রামীণ জনপদে এই সুযোগ একেবারেই অপ্রতুল।

প্রায় ১৫ মাস যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান পুরোপুরি বন্ধ। ক্লাসরুম তালাবদ্ধ। মাঝে পরীক্ষা চালু হলেও তা আবার বন্ধ করে দেয়া হয়, যা আজও চালু করা সম্ভব হয়নি। আশার কথা হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্থগিতকৃত পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার প্রস্ততি নেয়া শুরু করে দিয়েছে। ক্লাস পরীক্ষা না হবার কারণে ইতোমধ্যেই সেশনজট বেশ খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।দেশের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে আর যাই হোক শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের অনেক শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। ইউনিসেফের মতে, বিশ্বের প্রায় ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনা মহামারীর কারণে ক্ষতির শিকার হয়েছে। করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব ও লকডাউনের কারণে প্রায় ১৬০ কোটি শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি, অপুষ্টি, পরিবারের আয় কমে যাওয়া বা বন্ধ হওয়া, স্থূলতা, শৃঙ্খলা বোধ ও খেলাধুলার অভাব, শিক্ষা হতে ঝরে পড়া, বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাসের জড়িয়ে পড়া সহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

এতদসত্বেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঢালাওভাবে খুলে দেওয়া না হলেও পরীক্ষামূলক ভাবে খুলে দেওয়ার ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষা জীবন নিয়ে চরম উৎকণ্ঠিত।গ্রামীণ জনপদের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা সামগ্রী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনেকটাই দূরে। শিক্ষার্থীরা এর পরিবর্তে বেছে নিয়েছে মোবাইল ফোন। দেশে বর্তমানে ৪৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সকল ধরনের পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতিক্রম। তারা শুরু থেকেই নিজেদের মতো করে পরীক্ষা নিচ্ছে। ফলে একই শিক্ষা বর্ষে ভর্তি হওয়া সত্বেও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে।

অথচ, ইউজিসি দু’ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়কেই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যদিও এসব পরীক্ষার গুণগতমাণ নিয়ে সমাজে ব্যাপক আলোচন- সমালোচনা রয়েছে। আমরা কথায় কথায় দেশের প্রযুক্তির উন্নয়ন নিয়ে গর্ববোধ করে থাকি। অথচ, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে আজও অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ করার একটা সার্বজনীন পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে পারলাম না, যা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হতাশাজনক। তবে যে যাই বলুক না কেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। জাতির ভবিষ্যৎ আগামী প্রজন্মকে কর্মক্ষম, দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা পরীক্ষাগুলো পুনরায় চালু করতে হবে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সচল করতে হবে। এটি করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়বো। সকল বাধা ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে দেশের সকল শিক্ষাঙ্গনকে দ্রুত সচল করা না গেলে দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কোভিড বৈশ্বিক মহামারি হলেও তা প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। তা ছাড়া কোভিডের প্রকোপও বিভিন্ন দেশে অনেকটা ভিন্ন হয়েছে।

সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে বাংলাদেশে এর প্রকোপ ভারত, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ব্রাজিলের মতো হয়নি। যদিও তার সপক্ষে গবেষণাভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ রেখে করোনা মোকাবিলার সুদূরপ্রসারী প্রভাবের লাভ-ক্ষতির বিচারে ক্ষতির অঙ্কটা সহস্রগুণ বেশি হবে, তা যুক্তিশীল কোনো মানুষের অজানা নয়।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ রেখে করোনা মোকাবিলার সুদূরপ্রসারী প্রভাবের লাভ-ক্ষতির বিচারে ক্ষতির অঙ্কটা সহস্রগুণ বেশি হবে, তা যুক্তিশীল কোনো মানুষের অজানা নয়।টিকার বর্তমান বাস্তবতায় চাইলেও আঠারো বছরের বেশি সব মানুষকে আগামী তিন বছরের মধ্যে টিকার আওতায় আনা যাচ্ছে না। আর শিশুদের টিকার আওতায় আনা তো সুদূরপরাহত। উল্লেখ্য, চীন তিন বা তদূর্ধ্ব শিশুর জন্য টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে এবং ফাইজারসহ আরও কিছু টিকার শিশুদের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। তাতে কি আমাদের দেশের শিশুদের আশ্বস্ত হওয়ার কোনো সুযোগ আছে? এসব টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফল হলে এবং বাণিজ্যিকভাবে বাজারে এলে আমাদের মোট টিকা লাগবে প্রায় ৩০ কোটি ডোজের বেশি, যা আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাহলে কি আগামী তিন বছর আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখব? এ বাস্তবতা যখন বুঝতেই পারছি, তখন আমরা কি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকব? নাকি বিষয়টি নিয়ে ভেবে কোনো উপায় বের করার চেষ্টা করব? কোনো উদ্ভাবনী পদ্ধতি বের করতে হলেও তো দু-এক মাস সময় লাগে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এ বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা আমাদের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আছে বলে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি।প্রকৃতির এই অমোঘ নিয়মের খেলা কত দিন চলবে, তা কারও এ মুহূর্তে জানা নেই। টিকাই একমাত্র ভরসা। কিন্তু শিশুর জন্য একদিকে টিকার প্রচলন এখন যেমন হয়নি, অন্যদিকে টিকা প্রাপ্তির ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। আর দেশে টিকা তৈরির কার্যকর চিন্তা তো এখন শুরুই হয়নি। তাহলে কি এই রোদ-বৃষ্টি খেলায় রোদ পরাজিত হতে যাচ্ছে? আর তাই যদি হয়, তবে দেশ এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে যাচ্ছে, যে পরিণতির মাশুল জাতিকে আগামী দশকে দিতে হবে।

গত দুই দশকে আমরা জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অভুতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি। মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছি। বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। পদ্মা সেতু বা মেট্রো রেলের মতো বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশে একাধিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি আজও এমন কোন প্রযুক্তির সন্ধান দিতে পারেনি, যার মাধ্যমে দেশের স্থবির শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল করা যায়। বন্ধ পরীক্ষা পুনরায় গ্রহণ করা যায়। বিষয়টি নিয়ে আর কালবিলম্ব না করে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমস্যা সমাধানে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে আল্লাহ না করুক করোনার তৃতীয় ডেউ এলেও যেন আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল রাখতে পারি। আর দেরি নয়, শিক্ষার্থী মূল্যায়নে উন্নত বিশ্বের ন্যায় দেশে বিকল্প পদ্ধতির প্রচলন করতে হবে। করোনাকালে বিশ্বের কোনো দেশে অটোপাশ দেয়া হয়েছে কিনা বা এত দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে কিনা সে বিতর্কে না গিয়ে শুধু বলতে চাই, অনেকটা ক্ষতি ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে। আর সময়ক্ষেপণ না করে শিক্ষাঙ্গন সচল করার সম্ভাব্য সকল উদ্যোগ এখনই গ্রহণ করা উচিৎ। তা করা না গেলে আমরা একটি মেধাহীন জাতিতে পরিণত হবো।যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খোলা না হয়, বন্ধ পরীক্ষা দ্রুত শুরু করা না যায়, তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে যে দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে তা পূরণ করা আর হয়ত কোনদিনই সম্ভব হবে না। শুধু এখানেই শেষ নয়, আমাদের মনে রাখতে হবে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের মনস্তত্বের ওপর আঘাত পড়ছে এছাড়াও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকেও ঝরে পড়ছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। তৃতীয় ঢেউ আসবে কি আসবে না তা এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তৃতীয় ডেউ যদি আসে তাহলে কতদিন তা কন্টিনিউ করবে এসব নিয়ে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরাই এখনো নিশ্চিত করে বলতে কিছু বলতে পারছেন না। এমন একটি জটিল পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট