রাজস্ব আয়ের অন্যতম পন্থা হচ্ছে ভ্যাট: কেনেথ কাং, ডেপুটি ডিরেক্টর, এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগ, আইএমএফ

Posted on July 15, 2017

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় ১২-১৩ জুলাই দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ইন্দোনেশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘এশিয়ায় আন্তর্জাতিক করব্যবস্থা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কর্মশালা। হোটেল মুলিয়ায় অনুষ্ঠিত কর্মশালাটি শুরুর আগের দিন গত মঙ্গলবার কর্মশালার অন্যতম অতিথি আইএমএফের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর কেনেথ এইচ কাং নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আইন কার্যকর পিছিয়ে যাওয়াসহ বাংলাদেশের অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন। 

কেনেথ কাং: ভালোই তো। সম্প্রতি দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিক উন্নতির পথে পা বাড়ানো দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ। এই মানের অনেক দেশই এ রকম প্রাক্কলন করতে পারছে না। অবশ্যই এটি ভালো দিক। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সেই প্রস্তুতির কিন্তু ঘাটতি রয়েছে।

প্রশ্ন: যেমন?

কেনেথ কাং: মধ্য আয়ের দেশ হতে গেলে বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি করতে হবে। এগুলোকে আধুনিক করতে হবে। এগুলোয় সংস্কার আনতে হবে। সবার আগে নজর দিতে হবে করব্যবস্থায়। কর-জিডিপি হার বাংলাদেশে এখনো ১০ শতাংশের মতো। এর ফলে বাংলাদেশই বঞ্চিত থাকছে।

প্রশ্ন: তারপরও তো বাংলাদেশে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে।

কেনেথ কাং: তা হচ্ছে মানলাম। স্বাভাবিক কাজ তো কিছু হবেই। কিন্তু ওই যে বললাম মধ্য আয়ের দেশ হওয়া, সে জন্য বাংলাদেশকে অবকাঠামো খাতে অনেক বিনিয়োগ করতে হবে, সামাজিক খাতেও ব্যয় করতে হবে। টাকা আসবে কোথা থেকে? নতুন ভ্যাট আইনটা কার্যকর হয়ে গেলে ভালো একটা বিহিত হতো। সরকারও দম পেত।

প্রশ্ন: আইএমএফই তো নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়নের কথা বলেছিল, না?

কেনেথ কাং: আমরা সব সময়ই নতুন ভ্যাট আইনটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছি। কারণ, ভ্যাট হচ্ছে রাজস্ব সংগ্রহের অন্যতম পন্থা। এ জন্য অবশ্য আরও কার্যকর কর-প্রশাসনেরও দরকার বাংলাদেশের।

প্রশ্ন: কিন্তু সরকারের দিকটিও তো দেখতে হবে। আগামী বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত মাসে শেষ হওয়া বাজেট অধিবেশনে শুধু বিরোধীদলীয় নয়, সরকারদলীয় সাংসদেরাও নতুন ভ্যাট আইনের কিছু দিক নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, এই আইন এই সময়ে কার্যকর হলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে এবং সরকার জনপ্রিয়তা হারাবে।

কেনেথ কাং: রাজনৈতিক বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। শুধু এটুকু বলব যে বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েক বছর ধরেই আইনটি কার্যকর করবে বলে বলে আসছিল। কী বলব, উন্নয়নের কথা যদি বাদও দিই, সামাজিক ব্যয়ের বিবেচনায়ও তো বাংলাদেশ সরকারের অনেক টাকার দরকার।

প্রশ্ন: আয়কর থেকেও তো রাজস্ব আদায় কম। ভ্যাট-আয়কর কোনোটাই বাংলাদেশ তেমন আদায় করতে পারছে না কেন?

কেনেথ কাং: আমার মনে হয়, পদ্ধতিটা খুব জটিল। বাংলাদেশের কত লোক যে করের আওতার বাইরে! মাত্র ১ শতাংশ লোকের কাছ থেকে কর আদায় হয়, ভাবা যায়! অথচ এই বাংলাদেশই মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার পথে রয়েছে বলে বলা হচ্ছে।

প্রশ্ন: এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় কী?

কেনেথ কাং: বাংলাদেশের সব নীতি প্রণয়নই এখন এসডিজি মাথায় রেখে করা উচিত। তবে বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগী, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতকে সঙ্গে রেখে সরকারকে এগোতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে আইএমএফ কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, আরও দেবে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ কিন্তু ভালো করেছিল।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের এখন কী কী পদক্ষেপ হাতে নেওয়া উচিত বলে আপনার মনে হয়?

কেনেথ কাং: বিনিয়োগ-স্বল্পতা বাংলাদেশের একটা বড় সমস্যা। এ ছাড়া এখানে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে অর্থায়নের বড় অভাব। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের অর্থায়নের একটা বড় জায়গা হতে পারত পুঁজিবাজার। কিন্তু সেটা হয়ে উঠছে না। গত জুনে প্রকাশিত আইএমএফের আর্টিকেল ফোর মিশনের প্রতিবেদনেও আমরা এ কথাগুলো বলেছি। ব্যাংক খাতে সংস্কার আনাও জরুরি। তবে আমি আবারও বলব, কর আদায় বাড়াতে হবে। সরকার এত এত ভালো কাজ করবে ভালো কথা, ভালো কাজ করার জন্য ভালো পয়সাও তো লাগবে। নতুন ভ্যাট আইনটা যত দূর সম্ভব ভালো। এটাকে কাজে লাগানোর কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে পারে বাংলাদেশ সরকার।

প্রশ্ন: অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

কেনেথ কাং: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সৌজন্যে: প্রথম আলো