তাড়াশে বিনা চাষে রসুনের বাম্পার ফলনের স্বপ্ন বুনছেন কৃষক

Posted on February 6, 2024

সাব্বির মির্জা, (তাড়াশ) প্রতিনিধি:  সিরাজগঞ্জের তাড়াশের বিভিন্ন এলাকায় এ বছর বিনা চাষে রসুনের ব্যাপক আবাদ করা হয়েছে। বন্যার পানি কার্তিকের শেষে অগ্রহায়ণের শুরুতে মাঠ থেকে নেমে যাওয়ার সাথে সাথে পলিমাটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই কাঁদা মাটিতেই এ রসুন চাষ করে থাকে। তখন কৃষকেরা কোনো রকম হালচাষ ছাড়াই রসুন বপনে ব্যস্ত সময় পার করেন।

আর এ পদ্ধতিতে মসলা জাতীয় ফসল রসুন উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন এলাকার শতশত কৃষক। বিনা চাষে রসুন আবাদ কৃষকদের কাছে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন বোরো আবাদের পাশাপাশি কৃষকরা বিনা চাষে রসুন উৎপাদনে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ ছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিসও তাদেরকে দিচ্ছেন বিনা চাষে রসুন উৎপাদনে নানা রকম পরামর্শ। বিনা চাষে রসুন আবাদ খরচ কম, বাজার মূল্য ভাল এবং লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা এ চাষের প্রতি দিন দিন ঝুঁকে পড়ছেন এমনটাই বললেন নাদোসৈয়দপুর গ্রামের বিল নাদো পাড়ার কৃষক আনিচ মোল্লা। তিনি আরো বলেন, এ পদ্ধতির চাষাবাদে চাষের পদ্ধতির চেয়ে দ্বিগুণ রসুন উৎপাদন হয়ে থাকে।

উপকেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ৪৭০ হেক্টর জমিতে বিনা চাষে রসুনের আবাদ হয়েছে। বোরো আবাদের চেয়ে রসুনের চাষ লাভ জনক হওয়ায় বোরো ধানের পাশাপাশি রসুনের আবাদ প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। রসুন একটা মসলা জাতীয় ফসল। রসুনের ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি অফিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত লোকজন সার্বোক্ষনিক কৃষকের পাশে রয়েছেন।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের নাদোসৈয়দপুর, চরহামকুড়িয়া, মাগুড়াবিনোদ, বিন্নাবাড়ি, বিলনাদো, কাটাবাড়ি, ধামাইচ, সগুনা ইউনিয়নের ঘরগ্রাম, দোবিলা, দেবীপুর, হামকুড়িয়া, নওগাঁ ইউনিয়নের ভাটড়া, নওগাঁ, মহিষলুটিসহ বিভিন্ন মাঠে এ বছর ব্যাপক রসুনের চাষ হয়েছে। এ সময মাঠে মাঠে কৃষকেরা রসুনের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন চলছে রসুন পরিচর্যায় ভরা মৌসুম। বিলের যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই নারী-পুরুষের পাশাপাশি ছোট ছোট ছেলেরা-মেয়েরাও রসুনের জমিতে আগাছা পরিস্কার ও পরিচর্যা করছে। আর যে সমস্ত জমির মাটিতে রস কমে গেছে সে সকল জমিতে শ্যালো মেশিন দ্বারা পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে ।

কুন্দইল গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, বোনা আমন ধান কাটার পর এলাকায় কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যায়। তাই ও সময় জমির মাটি নরম থাকা অবস্থায় পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও লাইন করে রসুনের বীজ বপন করেন। তারপর পুরো জমি খড় কিংবা নাড়া দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পরে সার, কীটনাশক, প্রয়োজন ক্ষেত্রে পানি ও পরিচর্যা করলে রসুনের ভাল ফলন হয়। সার ও কীটনাশক কম লাগে। শুধু ২ বার পানি সেচ দিলেই হয়। তিনি আরো বলেন, এক বিঘা জমিতে বীজ, শ্রমিক, সার, কীটনাশক, সেচসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বছর রসুনের বাজার অনেকটাই ভাল। রসুন উঠানোর সময় এ রকম বাজার দর থাকলে কৃষক বেশ লাভবান হবেন।

নাদোসৈয়দপুর গ্রামের আরেক কৃষক মো. জাকারিয়া আলম বলেন, একবিঘা জমিতে রসুন আবাদ করতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মণ রসুন লাগে। খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। আর রসুন বিঘায় উৎপাদন হয় ২৫ থেকে ৩০ মণ। খরচ বাদে বাজারে দাম ভালো পেলে বেশ লাভ হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্ষার পানি জমি থেকে নেমে গেলে স্থানীয় কৃষকেরা নরম মাটিতে বিনা চাষে রসুন চাষ করে থাকেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ মৌসুমে রসুনের ভাল ফলন হবে। তাছাড়া বিনা চাষে রসুন আবাদে খরচ কম এবং বাজারে দাম ভাল পাওয়ায় বোরো চাষের পাশাপাশি রসুন চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকেরা।