প্রফেশনে হঠাৎ ছন্দপতন! উন্নয়ন ও বৈষম্যহীন ঐক্যে প্রয়োজন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

Posted on February 6, 2025

মো. মিজানুর রহমান, এফসিএস || সিএস এ্যাক্ট-২০১০ এর অধিনে নির্বাচনে প্রথম কাউন্সিলে একটি সার্বজনীন চাওয়া ছিল মি. মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ যেন নবগঠিত সিএস কাউন্সিলের প্রথম প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু নবগঠিত কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হতে তিনি তখন অস্বীকৃতি জানান। ফলে প্রথম প্রেসিডেন্ট হন মি. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। সিএস এ্যাক্ট-২০১০ অর্জনে মি. মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ এর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তাকে গোল্ড মেডেল দিয়ে সম্মানিত করেন তখনকার কাউন্সিল ও প্রেসিডেন্ট। ২০১২ সালে মি. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ এর লিডারশীপে ঐ কাউন্সিলের বড় অর্জন হয় বিএসইসির সিজি অডিটে সিএস প্রফেশনের অর্ন্তভুক্তি।

তারপর ২০১৩ সালের নির্বাচনে সবার অনুরোধে মি. মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হন মি. এম. নাসিমুল হাই। তখন ঐ কাউন্সিলের লিডারশীপে সিএস ক্যাম্পাস কাকরাইল থেকে চলে আসে রাজধানীর প্রাইম লোকেশন বাংলামটরে। ফলে সবাই দ্রুত জানতে ও চিনতে থাকে আমাদের সিএস প্রফেনশনকে। ২০১৪ সালে ঐ কাউন্সিলের দৃঢ়তায় এবং মি. মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ ও মি. এম নুরুল আলমের সাহসী উদ্যোগের কারণে আরেক নতুন মাইল ফলক, শুরু হয় কর্পোরেট গর্ভনেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম। যার মাধ্যমে সিএস প্রফেশন পৌছে যায় এক অনন্য ও ঈর্ষানীয় উচ্চতায়।

২০১৬ সালে কাউন্সিল নির্বাচনে মি. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ পুনরায় প্রেসিডেন্ট ও মি. মোহাম্মদ বুল হাসান সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এবং মি. মোহাম্মদ বুল হাসান সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ থেকে ২০১৮ সালে পদত্যাগ করেন। ফলে বিদ্যমান কাউন্সিলদের মধ্য থেকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের শূণ্য পদে আসীন হন মি. মো: শাফিয়ার রহমান। আর মোহাম্মদ বুল হাসান হয়ে যান শুধু কাউন্সিল সদস্য। এভাবেই চলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত, তবে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের কারণে তখন কিন্তু তার কাউন্সিল পদ শুণ্য হয়নি, যে বির্তক এখন হচ্ছে সেটা কিন্তু তখন দেখানো হয়নি। আইনের ধারা তখন যা ছিল এখনও কিন্তু তাই আছে শুধু আইনের প্রয়োগ বদলানো হচ্ছে। যারা কাউন্সিলে আছেন তাদের এ ব্যাপারে আরো দায়িত্ব নিয়ে উদার হওয়ার দরকার ছিল, নেতিবাচক না হয়ে ইতিবাচক হওয়া প্রয়োজন ছিল।

২০১৯ সালে কাউন্সিল নির্বাচনে মি. মোহাম্মদ বুল হাসান সর্বাধিক ভোটে প্রথম হন। আমাদের সবার চাওয়া ছিলো বুল হাসান হবেন সিএস প্রফেশনের প্রথম ইয়াং ও তারুণ্যদীপ্ত প্রেসিডেন্ট। কিন্ত না, এবারও সিনিয়রদের সম্মানে বুল হাসান নিজে প্রেসিডেন্ট না হয়ে সরে আসেন। ফলে পুনরায় দীর্ঘদিন পর কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হন মি. মুজাফফর আহামে¥দ এবং মি. মোহাম্মদ বুল হাসান সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। উল্লেখ্য যে, ২০১৯ এর নির্বাচনে পারশর্^পারিক সমঝোতা ছিল অফিস বেয়ারার প্রতি বছর চেঞ্জ হবে। তাদের স্থলে নির্বাচিত কাউন্সিল থেকে নতুন অফিস বেয়ারার হবেন।

এরপর ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করে মি. মোহাম্মদ বুল হাসানকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন এবং কাউন্সিলের সিন্ধান্ত সকল সদস্যদের জানিয়ে ই-মেল করেছিলেন। মি. মোহাম্মদ বুল হাসান পরে নিজেকে ইনস্টিটিউটের নব-নিযুক্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে সকল সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ই-মেইলও করেছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার বুল হাসানকে হস্থান্তর করতে গড়িমসি করলে মি. মোহাম্মদ বুল হাসান একরাশ অভিমান নিয়ে নিজের ভুলের খেসারত দেন এবং কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, তখনও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অজুহাত দেখিয়ে প্রেসিডেন্ট স্ব-পদে বহাল থাকেন। অথচ তখন কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করার কারণে কাউন্সিলে তার পদ শুণ্য ঘোষণার প্রয়োজন পড়েনি। বরং প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ পত্র কাউন্সিলে গৃহীত হবার পরও শেষমেশ মি. বুল হাসানকে কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। খুবই দুঃখজনক ব্যাপার, প্রফেশন নিয়ে সিনিয়রদের পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন ছিল।

২০২২ এর কাউন্সিল নির্বাচনে মি. মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ প্রথম হলে তিনি পুনরায় ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বর্তমান কাউন্সিলে তার নেতৃত্বেই ইনকাম ট্যাক্স আইন-২০২৩ এ সিএ ও সিএমএ এর পাশাপাশি সিএস প্রফেশনালদের পেশাগত স্বীকৃতি তৈরি হয় যা বিগত ১২/১৩ বছর ঝুলে ছিল।

৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্টের পদ থেকে মি. মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ পদত্যাগ করেন। ১৭ অক্টোবর ২০২৪ কাউন্সিল মিটিংয়ে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। নিয়ম অনুযায়ী শূণ্য পদে নির্বাচিত কাউন্সিলের মধ্য থেকে যে কোনো একজন প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা। কিন্তু কেউ কথা রাখেন নি, আবার শুরু হয় সেই পুরনো খেলা, ফলে আমাদের প্রাণের সিএস প্রফেশন ফের কলুষিত হচ্ছে। এবারও সবার পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন ছিল।

নির্বাচিত কাউন্সিলরগণ নিজে বা কেউ একজন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব না নিয়ে কাউন্সিলে মি. মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহর কাউন্সিল সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করার জন্য আবারও বল ছেড়ে দেয়া হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরাসরি কাউন্সিলে আসাদ উল্লাহর পদ শূণ্য ঘোষণা না করে এ বিষয়ে সিএস এ্যাক্ট-২০১০ এর ৯ ধারা অনুযায়ী সিন্ধান্ত না দিয়ে ১০ (২) ধারা অনুযায়ী সিন্ধান্ত নেয়ার জন্য কাউন্সিলকে চিঠি দেন।

কিন্তু কাউন্সিল মিটিংয়ে ২০১৮ সালে মি. মোহাম্মদ বুল হাসানের পদত্যাগের বিষয়টি সামনে উঠে আসলে এবং সে সময় তার কাউন্সিল সদস্য পদ পূর্ণ মেয়াদে বহাল থাকায়, কতিপয় কাউন্সিল সদস্যের বাঁধার মুখে কোন সিন্ধান্ত ছাড়াই বিষয়টি আবার বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সিন্ধান্তের জন্য পাঠানো হলে তা নতুন কোন নির্দেশনা ছাড়াই ফেরত আসে এবং ১৬/০১/২০২৫ তারিখে ৮ জন সদস্য একমত হয়ে কাউন্সিলে মি. মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহর পদ শূণ্য ঘোষণা করে নতুন নির্বাচনের জন্য সিন্ধান্ত নেন।

কেন এবং কি উদ্দেশ্যে বর্তমান কাউন্সিল সদস্যগণ বৈষম্যহীন সরকারের সময় এমন বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন তা নিয়ে সাধারণ সদস্যদের মধ্যে যেন জল্পনার শেষ নেই। সিএস এ্যাক্ট-২০১০ অর্জনে বিশেষ অবদানের জন্য মি. মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ কে আপনারাই স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন অথচ তাকেই আবার এখন এভাবে কাউন্সিল থেকে বের করে দিলেন। প্রফেশনে তার অবদানের কথা মাথায় রেখে সিন্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন ছিল।

এদিকে ২০২৫ সালের জন্য ১লা জানুয়ারী যে মেম্বার্স ডিরেক্টরী ছাপানো হয়েছে সেখানে একজন কাউন্সিল সদস্য কম দেখানো হয়েছে অর্থাৎ মি. মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহর কাউন্সিল পদ নেই। এখানে প্রশ্ন হলো, যে বিষয়ে ১৬/০১/২৫ তারিখে সিন্ধান্ত হয়, সেটি ১লা জানুয়ারী ২০২৫ এর মেম্বার্স ডিরেক্টরীতে বাস্তবায়ণ হলো কিভাবে? কোন পরিচালক যদি চেয়ারম্যান বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তখন কি আমরা পরিচালকের পদেও শুণ্যতা দেখাই, নাকি পরিচালকদের মধ্যে থেকে নতুন কাউকে এমডি/চেয়ারম্যান করা হয়।

বিগত ০৫-১০-২০২৪ তারিখে প্রেসিডেন্ট এর অনুপস্থিতিতে কাঙ্খিত সকল গেস্টদের নিয়ে এযাবৎকালের মধ্যে সেরা একটি সফল কর্পোরেট গর্ভনেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পরেও কেন হঠাৎ এমন ছন্দপতন? এই ইস্যুতে সাধারণ সদস্যদের মনে যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো বার বার কেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে একেক সময় একেকভাবে নেতিবাচক চিন্তাকে গুরুত্ত¦ দেয়া হয়েছে। এভাবে গর্ভনেন্স প্রফেশনালদের ইনস্টিটিউটে কেন বার বার নির্বাচিত কাউন্সিল সদস্যদের দ্বারা বির্তকের সৃষ্টি হচ্ছে, এমটাই প্রশ্ন আমার মতো সাধারণ সদস্যদের মনে।

মাত্র ২/৩ মাসের জন্য আরেকটি নির্বাচন! যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি সম্ভবত ১/২টি কাউন্সিল মিটিং পাবেন। নির্বাচনের শিডিউল কিনতে প্রার্থীর লাগবে ২৫ হাজার টাকা, আর ইনস্টিটিউটের খরচ হবে ৫/৬ লাখ টাকা। একজন নতুন প্রেসিডেন্ট ২/৩ মাসের জন্য আসবেন।

কেন এই চরম নেগেটিভি থেকে সবাই বের হয়ে সিএস প্রফেশনকে নিয়ে বৈষম্যহীনভাবে উদয় হতে পারছেন না? একই প্রেক্ষাপটে ২০১৮ তে এক সিন্ধান্ত, ২০২১ এ আরেক সিন্ধান্ত এবং ২০২৪ এ আবার ভিন্ন সিন্ধান্ত নেয়া ও বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন! আমরা কেউ কাউকে সম্মান করছি না কেন, আমি অধম বলিয়া আপনাদের উত্তম হতে বাঁধা কোথায়। প্লিজ প্রফেশন নিয়ে ইতিবাচক ভাবুন, নিজেরা ভাল থাকবেন আমরা সকল সিএস সদস্যগণ ভাল থাকবো, সম্মানিত হব।

প্রফেশনে সাধারণ সদস্যদের চাওয়া হলো ঐক্যের প্রফেশন, সাম্যের প্রফেশন, সর্বোপরি বৈষম্যহীন ও বিতর্কমুক্ত একটি গর্ভনেন্স প্রফেশন। এবং সেই লক্ষ্যে ২০১০ সালে সিএস প্রফেশনে নতুন দিগন্তের সূচনা হলেও কতিপয় নেতিবাচক কাউন্সিল সদস্যের আমি আমি’র কারণে ১ ধারা থেকে ২ ধারা এবং এখন সেটা ৩/৪ ধারায় প্রবাহিত।

গত ১৪/১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোক নিয়ে প্রথম সিপিডি হলো ২০২৫ এ, ইডরা নিয়ে সিপিডি সেমিনার কিছুই হল না গত ৮/১০ বছরে। খুবই দুঃখজনক যে, হাইকোর্ট ডিভিশনে কোম্পানি কোর্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিডা ও ইডরা সিএস প্রফেশনকে চিনেনা। বাংলাদেশে যে সিএস নামে একটি গর্ভনেন্স প্রফেশন আছে, ইনস্টিটিউট আছে তাই তারা জানেন না।

আশা করি, নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন যেভাবে প্রতি মাসে সিপিডি সেমিনার হচ্ছে আগামী নির্বাচনের পরেও সামনের দিনগুলোতে এভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক, ইডরা, বিসেক, বিডা ও কোম্পানি কোর্ট নিয়ে বেশি বেশি সিপিডি সেমিনার হবে এবং সংশ্লিষ্ট সবাই চিনবে-জানবে সিএস প্রফেশন সম্পর্কে। যার ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক, ইডরা ও কোম্পানি কোর্ট ডিসপিউটেড কোম্পানিতে বিএসইসির মত সিএ এর সাথে একজন সিএসকেও সতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিবেন। সর্বপরি সকল কোম্পানিতে সেক্রেটারি নিয়োগ বাধ্যতামূলক হবে সিএস প্রফেশনের সদস্যদেরকে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের সবার।

অতএব আসুন না, আপনারা-আমরা সিএস পরিবারের ছোট-বড় আমরা সবাই ঐকান্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সামনে আগাই আমি আমি থেকে বের হয়ে চলুন না আমরা হয়ে যাই। সিএস প্রফেশনকে নিয়ে যাই অনন্য উচ্চতায়।

লেখক: সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক।