পররাষ্ট্রনীতির দিন বদল

Posted on December 6, 2016

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে দ্বিপাক্ষীয় আলোচনা, সাক্ষাত, বিভিন্ন সভায় দেয়া বক্তব্য সর্বোপরি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণ একজন বিচক্ষণ ও দক্ষ রাষ্ট্রনায়কের দৃঢ়চেতা মনোভাব ফুটে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী স্থগিত জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের আহবান জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের প্রতি। নিউইয়র্কের হোটেল ওয়ালডর্ফ অ্যাসটোরিয়ায় বিজনেস কাউন্সিল অব ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের (বিসিআইইউ) উদ্যোগে আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজসভায় তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো ৫২টি দেশ ও জোট বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজারসুবিধা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রও তাদের মতো এই সুযোগ বাংলাদেশকে দিতে পারে। তাঁর ভাষণ, বক্তব্য নন্দিত হয়েছে বিশ্ব সমাজে। পররাষ্ট্রনীতি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে আরো বেশি পরিণত যুগোপযোগী বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ফলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। 

যে কোনো দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে বৈদেশিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গত সাত-আট বছর ধরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে যে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে তা নি:সন্দেহে স্বীকার্য। বিশ্ব সমাজে নিজের জন্য বিশেষ একটি অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে। প্রশংসিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গন ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে। 

চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কোনো কোনো ইস্যুতে বন্ধুত্বপূর্ণ, আবার দুই দেশের রয়েছে সীমান্ত নিয়ে জটিল সমস্যা। অথচ দুটি দেশই বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে নানাভাবে সাহায্য দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রতিশ্রুত ঋণ প্রদান আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেয়, তখন বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ সেতু নির্মাণে উদ্যোগী হয়। সেতুটির নির্মাণ কাজ পেয়েছে একটি চীনা প্রতিষ্ঠান। পদ্মা নদী নিয়ন্ত্রণের জটিল কাজটিও তারাই করছে। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। জাপানও আমাদের উন্নয়নের বড় অংশীদার। তাদের কাছ থেকে আসছে সবচেয়ে বেশি সহজ শর্তের ঋণ।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণ কিংবা এ ধরনের ফোরামের আলোচনা-বক্তব্য গতানুগতিক হলেও এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যতিক্রম থেকেছেন। তিনি একদিকে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জিএসপি ইস্যুতে মনোভাবের সমালোচনা করেছেন, অন্যদিকে বলেছেন দুই দেশের বন্ধুত্বের কথা। বাণিজ্য সম্পর্কের কথা। 

এক সময় হয়তো বাংলাদেশ উন্নত কোনো কোনো দেশের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে। কিন্তু দিন বদলে গেছে এবং তার প্রতিফলন আমরা দেখছি বর্তমান কূটনীতিতে।