‘বস্ত্র আইন-২০১৮’, অভিভাবক পেল বায়িং হাউজ

Posted on October 27, 2018

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রফতানি খাত হচ্ছে পোশাক রফতানি। আশির দশকে উঠা পোশাক খাতের সাথে কাজ করতে থাকে বায়িং হাউজ। গড়ে উঠে হোম টেক্সটাইল ও টেরিটাওয়েল পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পও। কোন প্রকার সরকারি আইন ছাড়াই গত ৩০ বছরে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটেছে ।

বর্তমানে দেশে বায়িং হাউজের সংখ্যা ছয় শতাধিক। এছাড়া বিভিন্ন ক্রেতা ব্র্যান্ডের লিয়াজোঁ অফিস হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন বিনিয়োগ বোর্ড থেকে অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। সেই আলোকে তৈরি করা হয়েছে ‘বস্ত্র আইন-২০১৮’। ১ অক্টোবর প্রকাশ হওয়া ‘বস্ত্র আইন-২০১৮’-তে এ বিধান রাখা হয়েছে।

বস্ত্র আইনের ধারা ১৪-তে পৃথকভাবে বায়িং হাউজের নিবন্ধনের বিষয়ে উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, বায়িং হাউজের নিবন্ধন আবেদনের পদ্ধতি, নিবন্ধন সনদ প্রদান, নিবন্ধন স্থগিত ও নবায়ন, ফি নির্ধারণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় সরকার প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারণ করতে পারবে।

পাসকৃত নতুন আইন অনুযায়ি বায়িংহাউজগুলোকে এখন থেকে ব্যবসা পরিচালনায় বস্ত্র অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিতে হবে। বস্ত্র শিল্পের পোষক কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বস্ত্র অধিদপ্তর। পোষক কর্তৃপক্ষ বস্ত্র শিল্পকে সহায়তা ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যেকোনো কার্যাবলি সম্পাদন করবে। আর পোষক কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ছাড়া কোনো বস্ত্র শিল্প পরিচালনা করা যাবে না, যার মধ্যে বায়িং হাউজও রয়েছে। এ ধরনের সব প্রতিষ্ঠানকেই পোষক কর্তৃপক্ষ তথা বস্ত্র অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিতে হবে। এক্ষেত্রে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করবেন।

নতুন এ আইনে বস্ত্র শিল্পের সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বস্ত্র শিল্প বলতে তুলা, সুতা, ফ্যাব্রিকস, বস্ত্র বা তৈরি পোশাক, বস্ত্র খাতের মূলধনি যন্ত্রপাতি, কম্পোজিট কার্যক্রম, অ্যালাইড টেক্সটাইল ও প্যাকেজিং উৎপাদন, বস্ত্র পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং, গুদামজাত, আমদানি-রফতানি, বিক্রয় ও বাজারজাত, বায়িং হাউজসহ সব কার্যক্রম এবং এ-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে।

গত কয়েক দশকে কোনো অভিভাবক ছাড়াই বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের করেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। এ আইনের ফলে এ শিল্পটি একটি অভিভাবক পেয়েছে। বিষয়টিকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

এর আগে সুনির্দিষ্ট কোনো পোষক কর্তৃপক্ষ না থাকায় বিনিয়োগ বোর্ডে ৫০ হাজার ডলার জমা দিয়ে লিয়াজোঁ অফিস হিসেবে অনুমোদন নিতো বিশ^খ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো। নতুন আইনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী, প্রজ্ঞাপন জারি করে বস্ত্র অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বিদেশী ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর লিয়াজোঁ কার্যালয়গুলোকে।

নতুন আইন অনুযায়ী, বস্ত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনও করা হবে পোষক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। পরিদর্শনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বস্ত্র শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী কারখানা পরিদর্শন করবেন। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে শিল্প মালিক কর্তৃপক্ষকে। সহযোগিতা না করলে তা হবে অপরাধ। পরিদর্শনের জন্য পোষক কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলগত সক্ষমতা অর্জনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমও গ্রহণ করবে সরকার। এছাড়া বস্ত্র শিল্পে ওয়ান স্টপ সার্ভিসও দেয়া হবে বস্ত্র অধিদপ্তরের মাধ্যমে।

অনুমোদিত আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে আরও এগিয়ে যাবে বায়িং হাউজসহ পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট সকল খাত-সেটাই প্রত্যাশিত।

আরো পড়ুন: ব্যাংকের টাকা গ্রাহকের পকেটে
বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা খেলাপি ঋণ আদায়ে বড় অন্তরায়