পর্নোগ্রাফিক আসক্তিরোধে আইনের পাশাপাশি দরকার সামাজিক আন্দোলন

Posted on November 21, 2018

বর্তমান অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে নানা ধরনের ইন্টারনেট সুবিধা জনজীবনে গতি এনে দিয়েছে, বেড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। শিক্ষা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, প্রত্যেকটি স্তরে তথ্য প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। আমাদের দেশে সহজলভ্য ইন্টারনেট সেবার কল্যাণে এগিয়ে চলছে দেশের অর্থনীতি, বেড়েছে শিক্ষার মান, অনেক প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত হয়েছে জবাবদিহিতা।

সহজলভ্য ইন্টারনেটের সুফল যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে এর বিপরীত চিত্র। দেশের তরুণ ও যুব সমাজের একটি অংশ আসক্ত হয়ে পড়ছে পর্নোগ্রাফি, প্রাণঘাতি গেমসহ নানা অপরাধমূলক সাইটে। এর মধ্যে বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে পর্নোগ্রাফিতে। রীতিমত মরণব্যধির মতো আসক্ত হয়ে পড়েছে তারা। এর ফলে সমাজে বাড়ছে ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন নীপিড়ন সহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড।

বিষয়টি বন্ধে রাষ্ট্রের একটা দায়বদ্ধতা আছে। এ সকল অপকর্মরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হয়। কিন্তু দৃশ্যত সরকারের পক্ষ থেকে এব্যাপারে তেমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত দেশের সচেতন নাগরিক মহল। এমন অবস্থায় হাইকোর্ট আগামী ছয় মাসের জন্য বাংলাদেশে সকল পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট বন্ধ করতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি) কে নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া হাইকোর্টের ঐ বিবৃতিতে বিটিআরসি’র কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছ, কেন ছয় মাসের পর আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য পর্নোগ্রাফিক ওয়েসাইট বন্ধ রাখা হবে না।

বিটিআরসি হাইকোর্টের এই আদেশ কতটা বাস্তবায়ন করতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়। কারণ, হাজার হাজার পর্নোসাইট বন্ধ করার সক্ষমতা বিটিআরসি’র নেই বললেই চলে। যদিও বিটিআরসি বলছে, তারা ৮০ শতাংশ পর্নোগ্রাফিক সাইট বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮০ ভাগ পর্নোসাইট বন্ধ করা অসম্ভব। হয়তো এক্ষেত্রে আমাদের দেশে যে সকল পর্নোগ্রাফিক সাইট বেশি ব্রাউজ হয়, সেগুলো বেছে বেছে বন্ধ করতে পারে। সেক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সমাজের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

এছাড়া বিটিআরসি প্রতি সপ্তাহে বা মাসে একবার পর্নোগ্রাফিক সাইটগুলো নিয়ে মনিটরিং এর মাধ্যমে বাছাই করে ক্ষতিকারক সাইট বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে পারে। আর এভাবে হয়তো পুরোপুরি বন্ধ না হলেও কিছুটা সুফলতা আসবে।

তবে দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে এই মরণব্যধি পর্নোগ্রাফিক সাইটের আসক্তি থেকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে বেশি দরকার সামাজিক আন্দোলন এবং পরিবারের সচেতনতা। অভিভাবক হিসেবে সন্তানের প্রতি যথাযথ খেয়াল রাখতে হবে। তার সাথে বন্ধুত্বের মতো আচরণ করতে হবে। যাতে করে মনে কোন প্রকার শূন্যতা অনুভব না হয়। সুস্থধারার বইয়ের প্রতি তাদের আকৃষ্ট করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তরুণ ও যুব সমাজকে পর্নোগ্রাফিকের কুফল বিষয়ে ব্যাপকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রযুক্তিভাবে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান আইন, সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিকভাবে করতে হবে।

আরো পড়ুন: আইসিএসবি’র ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড প্রদান; প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি