ভেজাল বন্ধে দরকার ভেজালমুক্ত মানুষ

Posted on February 4, 2019

‘ভেজাল’ শব্দটি আমাদের দেশে তথা সমাজে বহুল প্রচারিত একটি অতি পরিচিত শব্দ। কারণ, এই ভেজাল আজ আমাদের গোটা সমাজ ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। ভেজালমুক্ত কোনো পণ্য আজ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শিশু খাদ্য থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, সবজি, ফলমুল সহ এমন কোনো দ্রব্য নেই যেখানে ভেজাল দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানেও ভেজাল ঢুকে পড়েছে। যে কারণে, ভেজাল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না বরং দিন দিন অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। ফলে, দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের শরীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে নানা রকম রোগ বালাই। আবার এ সকল রোগ সারানোর জন্য সেবনকৃত ভেজাল ঔষধের কারণে রোগ নিরাময় তো হচ্ছেই না বরং নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। আর এভাবে কিছু সংখ্যক ভেজালযুক্ত মানুষের কারণে সমাজের সকল স্তরের প্রতিটি মানুষ নিরবে এগিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে।

এমনই এক বাস্তবতায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে খাদ্যে ভেজাল দেয়াকে এক ধরণের দুর্নীতি আখ্যায়িত করে গণমানুষের জীবন রক্ষার্থে তা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, এরই মধ্যে আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সেখানে সফলতা পেয়েছি। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। খাদ্যে ভেজাল দেয়ার বিরুদ্ধেও আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। কারণ কোনো বিষ খেয়ে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটা আমরা চাই না।

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। কারণ, দেশের প্রধান হিসেবে সকল মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাঁর ওপরই বর্তায়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে তখন, যখন দেখি এ ঘোষণা বাস্তবায়ন যাদেরকে দিয়ে করানোর কথা তারা নিজেরাই হয়ে আছেন ভেজাল মানুষ হিসেবে। বাহ্যিকভাবে মানুষের অবয়ব থাকলেও আত্মিকভাবে এরা সত্যিকার অর্থে দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। প্রধানমন্ত্রী খাদ্যে ভেজাল দেয়া ব্যক্তিদের চরিত্রগত বদাভ্যাস বলে অভিহিত করেছেন। এই চরিত্রগত বদাভ্যাস নামধারী ব্যক্তিদের আগে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। আনতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায়। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে জনগণ।

ভেজাল প্রতিরোধে সরকারের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি দায়িত্ব রয়েছে জনগণের। সরকার কর্তৃক ভেজাল প্রতিরোধে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেজালমুক্ত করতে হবে। ভেজাল সনাক্তকরণ পরীক্ষাগার দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলাসমূহে প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি জনগণকে সর্বাত্মক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, ভেজাল থেকে কোনো পরিবার তথা সমাজ ও রাষ্ট্র নিরাপদ না হলে নিজের এবং দেশের কোনো কল্যাণ হবে না।

বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে ‘পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা’র কথা বলা হয়েছে। এটি এখন সর্বাত্মকভাবে প্রতিরোধ করা সরকারের অঙ্গীকারাবদ্ধ দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করা সম্ভব “নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩” এর যথাযথ প্রয়োগ এবং দায়িদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার মাধ্যমে।

আরও পড়ুন: নির্ধারিত সময়ে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হোক