বেনাপোলে ঈদকে ঘিরে টুং-টাং শব্দে ব্যস্ত কামার শিল্পীরা!

Posted on June 12, 2024

মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোর জেলার শার্শা বেনাপোল পৌরসভা গ্রামীণ প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প নানা সংকটে আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, কারিগরদের মজুরী বৃদ্ধি, তৈরি পণ্যসামগ্রী বিক্রয় মূল্য কম, কয়লার মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের স্টীল সামগ্রী আমদানি সহ চরম আর্থিক সংকট ও উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কম থাকায় ও বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারণে এ উপজেলা কামার শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে আসছে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এখন কিছিটা ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আর মাত্র কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আযহা (কোরবানীর ঈদ) আর এই ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলা শার্শা ও বেনাপোল কামার শিল্পীরা।

ঈদ মানে কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে এখন দম ফেলারও সময় নেই কামার পাড়ার শিল্পীদের। দিনরাত সমান তালে লোহার টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রতিটি ইউনিয়ন ও উপজেলার কামার পাড়ায়।
বিভিন্ন গ্রামে কামার পাড়া ঘুরে দেখা গেছে, এখনও প্রায় দেড় শতাধিক কামার পরিবার খেয়ে না খেয়ে তাদের বাপ-দাদার পৈতিক পেশা ধরে রেখেছে। সারা বছর অলস সময় পার করলেও কোরবানীর ঈদ আসলেই অধিক শ্রম দিয়ে বেশি আয়ের স্বপ্ন দেখে কামার পরিবার গুলো। কিন্তু কয়লা ও লোহার দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় সেই স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে কামার শিল্পীদের। ছুরি, বটিসহ লোহার সরঞ্জামাদি তৈরিতে ব্যায় বেশি হলেও উপযুক্ত মূল্যে ক্রেতারা তা ক্রয় করবে কিনা তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত তারা।

ঈদকে ঘিরে কামার শিল্পীরা দা, বটি, চাকু, দাসা, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি তৈরি করতে এখন ব্যস্ত। স্থানীয় বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো আগুনে পুড়ে দা, বঁটি, চাপাতি, চাকুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে বাজারজাত করছেন। বর্তমানে আকৃতির আকারে একটি

ছুরি ১শত টাকা থেকে ১ হাজার ৫শত টাকা, দা আকৃতির সরঞ্জাম ৩শত থেকে ১ হাজার ২শত টাকা, হাড় কোপানো চাপাতি ৫শত থেকে ১ হাজার ৫ শত টাকা। তবে লোহার আকৃতির কারণে এর দাম কম বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া পুরোনো দা, বটি, ছুড়ি শান দিতে বা লবণ-পানি দিতে ১ শত টাকা থেকে ২ শত টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়ে থাকে। নতুন আধুনিক অনেক সরঞ্জাম আসাতে দেশীয় জিনিসে ক্রেতা সাধারণ আগের থেকে অনেক কমে গেছে।

কামার শিল্পীরা জানান, বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখলেও চাহিদানুযায়ী সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পশুর হাট গুলোয় ঈদের আমেজ থাকলেও এখনও কামারদের দোকানে মানুষের পদচারণা নেই বললেই চলে। তবে শেষ মুহুর্তে কোরবানীর মাংস কাটার সরঞ্জাম কিনতে কামারদের কাছে ভিড় জমাবে মানুষ এমন আশায় বুক বেধে আছে কামার পরিবার গুলো।
উপজেলার বেনাপোল বাজারে ডাবলু মার্কেট কামার শিল্পি জেলহাস হোসেন ও ভেলাবাড়ীর কামার
বদিয়ার রহমান বলেন, এক সময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে। হয়তোবা এক সময় এই পেশা আর থাকবে না। তবে কুরবানির ঈদের সময় আমরা একটু আশাবাদী হই। তিনি আরো বলেন, আমাদের তৈরি দেশীয় এসব ব্যবহার্য জিনিস স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন।

কামার শিল্পী শ্রী সপন বিশ্বাস ও কামার শিল্পী আকাশ কর্মকার বলেন, বংশ পরসপর আমরা এই কাজ করে আসছি। আমাদের পূর্ব পুরুষরা এ কাজ করতেন। আগে দেখতাম সারা বছর আমার বাপ- দাদারা এই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো কিন্তু এখন সারা বছর তেমন কোনো কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদ আসলে আমাদের কাজের চাহিদা একটু বেড়ে যায়।

কামার শিল্পীরা শ্রী রবিন কুমার আরোও বলেন, বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখলেও চাহিদানুযায়ী সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পশুর হাট গুলোয় ঈদের আমেজ থাকলেও এখনও কামারদের দোকানে মানুষের পদচারণা নেই বললেই চলে। তবে শেষ মুহুর্তে কোরবানীর গোস্তো কাটার সরঞ্জামাদি কিনতে কামারদের কাছে ভিড় জমাবে মানুষ এমন আশায় বুক বেধে আছি। কেন না এই পেশা ছেড়ে অন্য কোন ভাল পেশায় যাব এই রকম আর্থিক সংগতি আমাদের নেই। তবে সরকারি ভাবে এবং এনজিওর মাধ্যমে কামাদেরকে সুদ মুক্ত ঋন দিলে পাইকারি মূল্যে উপকরণ কিনতে পারলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার শিল্প পূর্বের ন্যায় ঘুড়ে দাড়াবে।

কামার শিল্পিরাআরো বলেন, আমাদের বাপ-দাদাদের মূল পেশা ছিল এটা। তারা গত হওয়ার পর ওই সূত্রে ধরে আমরাও জীবনের শেষ মূহুর্তে এই পেশা ধরে রেখেছি। আগামীদিনে হয়ত আমাদের ছেলেরা এই পেশা ধরে রাখার চেষ্টা করবে। কিন্তু এখন যা অবস্থা তাতে করে সেটা হবে কিনা তা জানা নেই। সারা দিন চাকু, বটি তৈরি
করে যা আয় হয় তা দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে কোন রকম বেচে আছি।#