সন্ত্রাসীদের কোনো দেশ নেই, ধর্ম নেই: প্রধানমন্ত্রী

Posted on August 13, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো দেশ নেই, ধর্ম নেই। কিছুলোক ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদ কার্যক্রম করছে। সন্তান যাতে বিপথে না যায় সেজন্য তাদের প্রতি খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান কুসংস্কার, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ নির্মুলে সবার সহযোগিতা চান।

রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার পুরস্কার ও সম্মাননা ক্রেস্ট বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

কোমলমতি ছেলেদের বিপথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামের দুর্নাম করা হচ্ছে। টেরোরিস্ট শুধু ইসলাম ধর্মে না। সব ধর্মেই আছে। তাদের আসলে কোনো ধর্মই নেই। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। অপরাধীদের কোনো ধর্ম নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে অন্যান্য ধর্মের জনগণ আছে, তারাও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করবে। আওয়ামী লীগ সবসময় ইসলামের খেদমত ও উন্নয়নে কাজ করে। দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করে।

তিনি বলেন, আপনাদের সকলের কাছে আমার অনুরোধ আমাদের ধর্মের মানইজ্জতটা রক্ষা করবেন। কেউ যেন বিপথে না যায়। একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত যারাই কাজ করছেন, কার ছেলে-মেয়ে কোথায় কার সঙ্গে মেশে, কোথায় যায় এগুলো দেখতে হবে। এই যে ইসলামের নামে বদনাম, সেটা ঘোচাতে হবে। সামান্য মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শান্তির ধর্ম ইসলাম, তার সঙ্গে কেন সন্ত্রাসী নাম যুক্ত হবে?

কারবালার ঘটনার আরেকটি পুনরাবৃত্তি ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে ঘটেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কারবালায় নারী-শিশুদের হত্যা করা হয়নি। কিন্তু ১৫ আগস্ট ঘাতকরা আমার মা, আমার ভাইয়ের স্ত্রীদের ছাড়েনি। চার বছরের শিশুকেও ছাড়েনি। সবাইকে হত্যা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই রাতে আমি ও আমার ছোট বোন দেশের বাইরে ছিলাম। স্বজনহারা আর্তনাদ আর ঘর বাড়ি ছাড়া ছয়টি বছর আমাদের কাটাতে হয়েছে। '৮১ সালে আমরা দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আমি সেই চেনা মুখগুলো পাইনি। যারা আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়েছিল। আমি পেয়েছিলাম বনানীতে সারি সারি কবর। পেয়েছি বাংলাদেশের মানুষ। কাজেই সে মানুষগুলো আমার পরিবার, তারাই আমার আপনজন। তাদের মাঝেই ফিরে পেয়েছি আমার বাবার ভালোবাসা, মায়ের স্নেহ।

তিনি আরো বলেন, আমি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, আস্থা, বিশ্বাস পেয়েছি। যা আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছে, শক্তি যুগিয়েছে, সাহস যুগিয়েছে। বারবার মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখেছি। কিন্তু আমি কোনোদিন ভয় পাইনি। কেন যেন মনে হতো আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করার জন্য। আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে কিছু সময় দেন, কিছু মানুষকে কিছু কাজ দেন, এই কাজটা আমি যতক্ষণ না পর্যন্ত শেষ করব, রাব্বুল আলামিন আমাকে রক্ষা করবেন। এ বিশ্বাস নিয়ে আমার পথ চলা।

ইমামদের উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবেন, যার যার কর্মফল সে সে ভোগ করবে। ধর্মের নামে খোদার ওপর খোদকারি করবেন না। ইসলামের মর্মবাণী মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেন। সন্ত্রাস করে ইসলাম সম্পর্কে যেন কেউ বদনাম করতে না পারে, সেদিকে সবাই খেয়াল রাখবেন।

‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজ এদেশের মানুষ দু’বেলা পেটভরে ভাত খেতে পারছে’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আজকে সকলকে আমরা ঘর তৈরী করে দিচ্ছি, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনা পয়সায় ৩০ প্রকার ওষুধ দিচ্ছি, মানুষকে শিক্ষা এবং কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় তারা দেশে-বিদেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি যাতে ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে পার্থিব শিক্ষা নিয়ে সকলে নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে, সে ব্যবস্থাটাই আমরা করে দিচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে বিজয়ী ৫ জন হাফেজের হাতে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, নগদ অর্থের চেক এবং সনদ তুলে দেন।

তারা হচ্ছেন- প্রথম হাফেজ আফফান বিন সিরাজ, দ্বিতীয় হাফেজ মো. ওসমান গণি, তৃতীয় হাফেজ মো. আবু জাফর শাকিল (দৃষ্টি প্রতিবন্ধি), চতুর্থ হাফেজ মো. খালিদ সাইফুল্লাহ এবং পঞ্চম হাফেজ মো. মোতাসিম বিল্লাহ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু.আ. হামিদ জমাদ্দার, বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক মাওলানা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। যার মধ্যে রয়েছেন আলহাজ্ব সুফী মো. মিজানুর রহমান এবং হযরত মাওলানা সালাউদ্দিন নানোপুরী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ও বাংলাদেশের দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আবুল কালাম আজাদ।

আরও পড়ুন:

‘বেদনায় ভরা দিন’

বিএনপি গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চায়: প্রধানমন্ত্রী

ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে: বাণিজ্যমন্ত্রী