৫ বছরে সাফল্যের অনুকরণীয় মাইলফলক এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক

Posted on August 13, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংকিং খাতে বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড । ২০১৩ সালে ৫৩ জন স্বপ্নদ্রষ্টা প্রবাসী উদ্যোক্তার উদ্যেগে প্রতিষ্ঠিত হয় এনআরবিসি ব্যাংক । যাত্রা শুরুর বছর চারেক পর ব্যাংকের অভ্যন্তরীন নানা অনিয়মের কারনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে ধুকতে থাকা এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদ আবারো ঠেলে সাজানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বায়িত্ব পান এস এম পারভেজ তমাল। ২০১৭ সালে চেয়াম্যান এস এম পারভেজ তমাল দ্বায়িত্ব প্রাপ্তির পর কোম্পানির হারিয়ে যাওয়া ভাবমূর্তি এবং আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রত্যয়ে নতুন করে শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম । মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটি এখন অন্যান্য ব্যাংকগুলোর কাছে সাফল্যের অনুকরণীয় মাইলফলক।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, ২০১৮ সালে ব্যাংকের ব্যালেন্সশিটের আকার ছিল ৮৬ হাজার ৫৯৮ দশমিক ১২ মিলিয়ন টাকা। ৫ বছরের ব্যবধানে তা প্রায় ৩ গুন বেড়ে ২০২২ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৫৬ দশমিক ০৬ মিলিয়ন টাকায়।

ব্যাংকটির আমানতের পরিমান ২০১৮ সালে ছিলো ৫,৪০৮ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা ২০২২ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ১৬,১১৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকায় । অন্যদিকে বিতরনকৃত ঋণের পরিমান ২০১৮ তে ছিলো ৪,৮১৫ কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকায় । যা ২০২২ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ১৩,৬১৭ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ।

প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও সুশাসন বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে ২০২১ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাবদ্ধ হয় এআরবিসি ব্যাংক লিমিটেড । ২০২১ সালে ১ হাজার কোটি টাকা আইপিও অনুমোদিত মূলধন সাপেক্ষে পুঁজিবাজারে তালিকাবদ্ধ হওয়া এই ব্যাংকের বর্তমান পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ৮২৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা । কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৮২ কোটি ৮৬ লাখ ৪৯ হাজার ৫৩৪ টি । এরমধ্যে ৭৩.৪৯ শতাংশ শেয়ার স্পন্সর পরিচালকদের , প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ২.৯৫ শতাংশ এবং ২৩.৫৬ শতাংশ শেয়ার সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছে ।  

বিগত কয়েক বছর থেকে মুনাফায় থাকায় বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে আসছে ব্যাংকটি । বিগত ৩ বছরে কোম্পানিটি লভ্যাংশ প্রদান করেছে যথাক্রমে ২০২০ সালে ৭.৫০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস, ২০২১ সালে ৭.৫০ শতাংশ নগদ ও ৭.৫০ শতাংশ বোনাস এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে ৭.৫০ শতাংশ নগদ ও ৪.৫০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ।

এছাড়া চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকটির আমানতের পরিমান সাড়ে ১৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৫ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিতরণকৃত ঋণের পরিমান ১১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।

এখানেই শেষ নয়, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে শুধু এনআরবিসি ব্যাংকের চাকরি করছেন কয়েক হাজার মানুষ। গত ২০১৭ সালে যা ছিল মাত্র ৬১৭ জন। বর্তমান সময়ে ব্যাংকটিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ।এবং  অর্থায়নের মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য আর্থিক সূচকগুলোতেও অগ্রগতি হয়েছে।

মুলত আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণ সব ব্যাংকেরই প্রধান কাজ। তবে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার বাইরে নতুনত্ব এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারের ইউটিলিটি সেবা আদায়, ভূমি রেজিস্ট্রেশন ফি আদায়ে সারা দেশে উপ-শাখা চালু করেছে ব্যাংকটি । এছাড়াও বিআরটিতে গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের ব্যাংকিং সেবা একই সঙ্গে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি'র) সঙ্গে মিলে সেবা দিচ্ছে। এভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনে পুরো অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করার চেষ্টা করছে এনআরবিসি ব্যাংক।

শুধু তাই নয়, রেমিট্যান্স খাতেও অভাবনিও সাফল্য দেখিয়েছে ব্যাংকটি। প্রবাসীর স্বপ্ন স্লোগানে এগিয়ে যাওয়া এনআরবিসি ব্যাংক বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনতে আরও মনোযোগ দিচ্ছে। এইফলস্বরূপ, রেমিট্যান্স আয়ের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ১০.৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল USD 124.17 মিলিয়ন যেখানে ২০২২ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় USD 137.33 মিলিয়ন।

এ পরিসংখ্যান অর্জনে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে একটি শক্তিশালী, নিরাপদ এবং ব্যবহারকারী বান্ধব রেমিট্যান্স চেইন সিস্টেম যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে শহুরে ও গ্রামীণ জনগণ সারা দেশে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সেবা গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে ।

এছাড়াও দেশের বেকার যুব সমাজকে এগিয়ে নিতেও কাজ করে যাচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংক। যুবদের কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আত্মকর্মী ও উদ্যোক্তা ঋণ হিসেবে যুবদের মাঝে ৪ শতাংশ হতে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হার সুদে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা দিচ্ছে ব্যাংকটি । এবং গ্রামের মানুষকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বিতরণ করছে সিঙ্গেল ডিজিটে ক্ষুদ্রঋণ ।

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন আর্ত সামাজিক উন্নয়নেও কাজ করে যাচ্ছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক । দেশের বিভিন্ন সময়ের প্রাকৃতিক দূর্যোগ সহ বিভিন্ন পরিস্থিতে সাধারন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকটি ।

সারাদেশে সেবা কার্যক্রমের পরিচালনার জন্য ৯৩টি শাখাসহ ৭৫০টি উপশাখা রয়েছে। উপশাখাগুলোর মধ্যে রয়েছে ভূমি রেজিস্ট্রেশন বুথ, বিআরটিএ ফিস কালেকশন বুথ ইত্যাদি।

এছাড়া সারাদেশে রয়েছে ৫৭১ টি এজেন্ট আউটলেট। এছাড়া দেশব্যাপী প্রায় ৮১ টি এটিএম বুথ ও সিআরএম বুথ থেকে তাৎক্ষণিক ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন ব্যাংকটির গ্রাহকরা। হাতের মুঠোয় ব্যাংকিং করতে রয়েছে প্লানেট অ্যাপ।

কর্পোরেট সংবাদ/এএইচ