সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করবে কোরিয়ান কোম্পানী

Posted on January 27, 2023

সেলিম রেজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : যমুনা নদীর কোলঘেঁষে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে এক হাজার ৪১ একর জায়গায় গড়ে উঠছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখন চলছে অবকাঠামো ও ভূমি উন্নয়নের কাজ।

বুধবার দুপুরে ডিএস কোরিয়া বিডি লিমিটেড কোম্পানির কর্মকর্তারা অঞ্চলটি পরিদর্শন করে সারে ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পর্যায়ক্রমে ৬৭টি কারখানা গড়ে উঠবে। এতে কাজের সুযোগ পাবে ৫ লাখ মানুষ।

সরেজমিনে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে গিয়ে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু ও নির্মানাধীন বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর দক্ষিনে যমুনা তীরে গড়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে । এখানে কারখানা প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করেছে অনেক দেশী বিদেশী প্রতিষ্ঠান। এতে বিপুল পরিমান কাজের সুযোগ হবে স্থানীয় বেকার সমাজে। স্থানীয় অর্থনীতিতে আসবে আমল পরিবর্তন। দেশী ও বিদেশি ১৪টি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে যৌথভাবে ১১০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে। বাকি জমির জন্য সৌদি আরব, জাপান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া সহ কয়েকটি দেশের বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে ভূমি উন্নয়নের কাজে প্রকৌশলগত সহায়তা দিচ্ছে জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট। প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করছেন দেশ বিদেশের উদ্দ্যোক্তারা। এখানে সড়ক, রেল এবং নৌপথের সরাসরি যোগাযোগ থাকায় কাঁচামাল আনা ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে বাড়তি সুবিধা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। একারনে দক্ষিণ কোরিয়ার ডিএস কোরিয়া বিডি লিমিটেড সারে চারশত কোটি টাকা বিনোয়াগ করবেন বলেন জানান তারা।

দক্ষিণ কোরিয়ার ডিএস কোরিয়া বিডি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হো ইয়াং বায়েক এই অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে যে কয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে তার মধ্যে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে। আমরা ডিএস কোরিয়া বিডি লিমিটেড এইখানে টেক্সটাইল, ডাইং কেমিক্যাল ও গার্মেন্স স্থাপন করবো। আমরা মোট সারে চারশত কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়েছি। আশা করছি সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে চলতি বছরেই জায়গা বুঝিয়ে নিয়ে কাজ শুরু করবো।

ডিএস কোরিয়া বিডি লিমিটেড ভাইস চেয়ারম্যান মহসিন খান বলেন,উত্তরবঙ্গ সহ দেশের অর্থনীতিতে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন একটি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখবে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ নিশ্চয় দেশ ও মানুষের উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে। সে জন্য আমরা এখানে টেক্সটাইল, ডাইং কেমিক্যাল ও গার্মেন্টস স্থাপন করবো। আমাদের পুরো টিম এসে আজ দেখে গেলাম এর আগেও আমরা দেখেছি এই অঞ্চলটি। আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে। আমরা এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সিদ্দিক আহম্মেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলায় মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা যে হারে উন্নতি হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হয়ে ওঠেনি। তবে এটি সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের বেকার সমস্যা অনেকাংশেই দূর হবে।

আমেরিকার আইটি ইন্ডাষ্ট্রি অ্যামাজান ওয়েব সার্ভিসের ক্লাউড বিশেষজ্ঞ শামীম আশরাফি বলেন, সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনে আইটি শিল্পের বিপুল সম্ভবনা রয়েছে। গবেষণা, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়নে দেশের রোল মডেল হবে বৃহৎ এ ইকোনমিক জোন। এতে উত্তরবঙ্গের মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌছে যাবে আইটি ও টেকনোলজি শিল্প।,

অষ্টেলিয়া টেলিওয়াস এর সিইও লিয়াজাহাঙ্গীর আলম বলেন, উত্তরবঙ্গ সহ দেশের অর্থনীতিতে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন একটি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখবে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ নিশ্চয় দেশ ও মানুষের উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে। আমরাও এসেছি এখানে বিনিয়োগ করতে। আশাকরি দেশকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারবো এখান থেকে।

সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অবহেলিত উত্তরবঙ্গের মানুষরে স্বপ্নের কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ দিনকে দিন দৃশ্যমান হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ৪০০টি প্লট হবে। প্লটগুলোতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে পর্যায়ক্রমে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদনের জন্য অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তাদের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ পানিসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করা হবে। সবমিলিয়ে এটি হবে একটি বাণিজ্যিক এলাকা।