হরিরামপুরে রাসেলস ভাইপার অন্যান্য উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ার আশংকা

Posted on June 10, 2024

সাইফুল ইসলাম তানভীর, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: সম্প্রতি রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের বাসিন্দারাদের দিন কাটছে আতঙ্কের মধ্যে। চরাঞ্চলে কোনো হাসপাতাল না থাকায় সাপে কাটা রোগীদের প্রধান ভরসা ঝাঁড় ফুঁকে। অন্যতম বিষধর এ সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঝুঁকিটাও তাই বেশি। এদিকে সাপের আতঙ্কে চরাঞ্চলে জমির ফসল ও গবাদি পশুর খাবার (ঘাস) সংগ্রহ করতে পারছেননা কৃষকেরা। রাসেল ভাইপার ছড়িয়ে পড়া রোধে অতি দ্রুত প্রাণী সম্পদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জরুরী পদক্ষেপ না নিলে জেলার আশেপাশের অন্যান্য উপজেলায় এর উপদ্রব ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

মানিকগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছেন, রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে গত তিন মাসে হরিরামপুরে মারা গেছে পাঁচজন। স্থানীয়দের হাতে মারা পড়েছে বেশ কয়েকটি সাপ।

সম্প্রতি রাসেল ভাইপারের আক্রমণ থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন চরের এনায়েতপুর এলাকার এক কৃষক। ধান খেতে সাপটি দেখতে পেয়ে মেরে ফেলেন স্থানীয়রা।

কৃষক শেখ শমসের আলী বলেন, গত কয়েক দিন আগে আজিমনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামে ধান কাটার সময় একটি সাপ দেখতে পাই। দৌঁড়ে সেখান থেকে চলে আসি। পরে চার পাঁচ জনকে সঙ্গে নিয়ে সাপটিকে মেরে ফেলি। মারার পর জানতে পারি এটা বিষধর রাসেলস ভাইপার। অপরদিকে এক কৃষকের কেটে আটি বেঁধে রাখা তিলের মধ্যে রাসেল ভাইপার সাপ দেখে তিল রেখেই চলে আসেন। গরুর ঘাস কাটতেও আসছেনা অনেকে।

এ ছাড়া কয়েকদিন আগে আজিমনগর ইউনিয়নের পশ্চিমচরে আজ্জেম নামের এক কৃষক সাপকে কেটে দুভাগ করে। শিকারপুরে সাইদুল মোল্লা, রঘুনাথপুরের মুন্নু এবং লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের কাজিকান্দা গ্রামে আকিদুলও রাসেল ভাইপার সাপ মেরে ফেলে।

আজিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় সবার মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। আমার ইউনিয়নেই দুই জন সাপের কামড়ে মারা গেছেন। সচেতনতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, বর্তমানে হরিরামপুরের চরাঞ্চলের জমি গুলোতে ফসলের জমিতে ইঁদুরের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যাপ্ত খাদ্য ও বংশবিস্তারের পরিবেশ থাকায় এ সাপের উপদ্রব বেড়েছে। সবাইকে জমিতে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার অনুরোধ করছি।

হরিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, মনে হচ্ছে সাপটি উজানের কচুরিপানার সঙ্গে আসার সম্ভাবনা বেশি। পরে এই সাপ চরাঞ্চলে আবাস্থল গড়ে থাকতে পারে

হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেহেরুবা পান্না বলেন, বিষাক্ত সাপ কামড়ালে এন্টিভেনম দেওয়ার আগে বেশ আইসিইউ সাপোর্ট, ইন্টিভিশন, কার্ডিয়াক মনিটরের মতো কিছু সাপোর্টের প্রয়োজন হতে পারে। উপজেলা পর্যায়ে এসব সুযোগ-সুবিধা না থাকায় আমরা রোগীকে এমন সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতালে রেফার্ড করার পরামর্শ দেই। জেলার সমন্বয় মিটিংয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সরবরাহের কথা উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি চাহিদা অনুযায়ী ইনজেকশন পাব।

হরিরামপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন আজিমনগর, লেছড়াগঞ্জ ও সুতালড়ীর চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেশি। গত তিন মাসেই এই সাপের কামড়ে মারা গেছেন পাঁচ জন। সপ্তাহ খানিকের মধ্যেই দুই জায়গা থেকে খবর এসেছে দুটি সাপকে এলাকাবাসী মেরে ফেলেছেন। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ তিনটি ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছি।