স্ত্রীর সম্ভ্রমহানির প্রতিশোধ নিতে নৃশংস হত্যাকান্ড: মূল ঘাতকসহ সহযোগী গ্রেফতার

Posted on June 4, 2024

আহসান আলম, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার গ্রাম্য কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই শেখ হত্যাকান্ডের ঘটনার মূল ঘাতকসহ তার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমান। স্ত্রীর সম্ভ্রমহানির প্রতিশোধ নিতে নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।

হত্যাকান্ডের ঘটনার মূল ঘাতক চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সুবদিয়া পূর্বপাড়ার আব্দুর সেলিমের ছেলে রুবেল মিয়া (২৩) ও তার সহযোগী একই এলাকার আনিসের ছেলে সোহেল রানা (২০) কে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সাথে উদ্ধার করা হয়েছে ঘটনায় ব্যবহৃত ধারালো চাকু, মোটরসাইকেল, ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, টর্চ লাইট।

হত্যাকান্ডের ঘটনার পরদিনই অর্থাৎ ২ জুন রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে গেল ১ জুন সকালে সদর উপজেলার পুরাতন ভান্ডারদহ গ্রামের একটি মাঠে গ্রাম্য কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই শেখের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন সানোয়ার হোসের বাদি হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ সুত্রে যানা যায়, আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই শেখ অন্যান্য দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়ী থেকে বের হয়ে বিভিন্ন কাজ শেষে দোকান থেকে চা খেয়ে বাড়ী ফেরে। কিন্তু ঘটনার দিন গভীর রাত হলেও তিনি আর বাড়ী ফিরেনি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ১ জুন সকাল ৭টার দিকে লোকমুখে সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের যুগিরহুদা টু পুরাতন ভান্ডারদহ গামী পাকা রাস্তার পাশে জনৈক আপিল এর ফসলী জমির উপর আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই শেখ এর গলাকাটা লাশ পড়ে আছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নামে পুলিশ।

চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমানের দিকনির্দেশনায় নৃশংস হত্যাকান্ডের মূলরহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামী গ্রেফতারের জন্য জেলা গোয়েন্দা শাখা, সদর থানার পুলিশসহ জেলা পুলিশের একাধিক টিমকে নির্দেশনা দেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশনা ও পরামর্শক্রমে চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা শাখা, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল ও সদর থানাসহ জেলা পুলিশের একাধিক টিম নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন।

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামানের দিকনির্দেশনায় সদর থানা, জেলা গোয়েন্দা শাখা, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম সমন্বিতভাবে গোপন ও প্রকাশ্য তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িত আসামী রুবেল মিয়াকে তার নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে। আসামীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপর সহযোগী সোহেল রানাকে একই তারিখ রাত প্রায় ২টার দিকে তার নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
আসামীদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে আটকৃত আসামিরা নিজেকে এই খুনের ঘটনার সাথে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী যেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে নৃশংসভাবে খুন করা হয় আলামত হিসেবে সে ধারালো ছুরি ও ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়। রাজ্জাক শেখের খুনের নেপথ্যে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। আটককৃত আসামিদের গত ২ জুন বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ মোতাবেক স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই শেখ কবিরাজি করে মানুষের বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা দিত। রুবেল মিয়া ও তার স্ত্রীর শারীরিক চিকিৎসার জন্য তারা রাজ্জাক শেখের সরণাপন্ন হয়। গত ৩১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জ্বীনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে আসামী রুবেল ও তার স্ত্রী’কে সদর থানাধীন হোগলডাঙ্গা নবগঙ্গা নদীর ব্রিজের নিকট পান বরজের কাছে নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। এসময় রুবেল মিয়াকে সিগারেট আনতে দোকানে পাঠায় গ্রাম্য কবিরাজ রাজ্জাক শেখ। কিছুক্ষণ পরে রুবেল পানবরজে এসে রাজ্জাক ও তার স্ত্রীকে খুজে না পেয়ে স্ত্রীর মোবাইলে কল দিলে বন্ধ পায়। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে আনুমানিক ৩৫/৪০ মিনিট পরে রাজ্জাক শেখ ও রুবেলের স্ত্রী পানবরজের নিকট ফিরে আসে। এ সময় রুবেল তার স্ত্রীকে দেখে খারাপ কোন কাজ করেছে বলে সন্দেহ করে। পরবর্তীতে রুবেল বাড়ীতে এসে তার স্ত্রী’কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার স্ত্রী কান্নাকাটির একপর্যায়ে স্বীকার করে আব্দুর রাজ্জাক কবিরাজ চিকিৎসা দেয়ার নামে সম্ভ্রমহানি করেছে।

পরবর্তীতে একই দিন রুবেল তার সহযোগী আসামী সোহেল রানা’কে সাথে নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে রাজ্জাকের বাড়িতে যায়। রুবেল তার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীর জ্বীন তাড়ানোর কথা বলে কৌশলে সুবদিয়া সিপি বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানীর সামনে থেকে রাজ্জাক শেখকে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে পুরাতন ভান্ডারদহর দিকে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মোটরসাইকেলের পিছনে বসা রুবেল মিয়া তার কাছে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে রাজ্জাকের গলায় পোচ দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে রাস্তায় ফেলে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য জবাই করে ভিকটিমের মৃত্যুদেহ রাস্তার পাশে গাছপালা দিয়ে ঢেকে রেখে বাড়িতে চলে যায়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিমুদ্দিন আল আজাদ, সহকারি পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা, ডিআইও-১ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ সেকেন্দার আলী।