রাসেল ভাইপার আতঙ্ক, হরিরামপুরে ফসল কাটতে পারছে না কৃষকরা

Posted on June 2, 2024

সাইফুল ইসলাম তানভীর, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চলে রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপের আতঙ্কে জমির ফসল ও গবাদি পশুর খাবার (ঘাস) সংগ্রহ করতে পারছেননা কৃষকেরা। পদ্মা নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের বসবাস করা মানুষ রয়েছেন সাপ আতঙ্কে। একের পর এক বিষধর রাসেল ভাইপার সাপের দেখা মিলছে উপজেলার চরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায়।

স্থানীয়রা জানান, লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের সেলিমপুর সংলগ্ন জেগে ওঠা কাঞ্চনপুর ও ফরিদপুর সদর উপজেলার সেলিমপুর চরে শতাধিক কৃষক জমি চাষ করা শুরু করেন। ওই চরটিতে ভুট্টা, বাদাম, তিল, আমন ও আউশ ধানের চাষ করে। গত বৃহস্পতিবার সকালে এক কৃষক তিল কেটে রেখে দেয়। পরে দুপুরে আটি বাঁধা সেই তিল তুলতে গিয়ে তিলের মধ্যে রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পায়। পরে তিল রেখে চলে যায় শ্রমিকরা। গরুর ঘাস কাটতেও আসছেনা অনেকে।

এ ছাড়া কয়েকদিন আগে আজিমনগর ইউনিয়নের পশ্চিমচরে আজ্জেম নামের এক কৃষক সাপকে কেটে দুভাগ করে। শিকারপুরে সাইদুল মোল্লা, রঘুনাথপুরের মুন্নু এবং লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের কাজিকান্দা গ্রামে আকিদুলও রাসেল ভাইপার সাপ মেরে ফেলে।

সেলিমপুর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, কাঞ্চনপুর চরে বৃহস্পতিবার এক কৃষকের কেটে আঁটি বেঁধে রাখা তিলে রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে শ্রমিকরা চলে যায়। এতো বড় চরে আমি ছাড়া আজ শনিবার কোন কৃষক আসেনি। শিকারপুরের সাইদুল মোল্লা জানান, তার জমির ধানের আটি গাড়িতে তোলার সময় এক শ্রমিক আটির নিচে রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেলে আমি লাঠি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলি।

লেছড়াগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নে গত মার্চে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চরাঞ্চলের ফরিদপুর জেলা সংলগ্ন পদ্মার চর এলাকায় কয়েকজনকে রাসেল ভাইপার সাপে দংশন করে। পাশের ইউনিয়নের বসন্তপুর এলাকায় একজন ও এনায়েতপুর এলাকায় আব্দুল্লাহ নামের এক যুবককে রাসেল ভাইপার সাপ দংশন করে। একজনের দংশনের জায়গা পঁচেও গেছে। চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়ন, সুতালড়ি ও আমার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পদ্মা পাড়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। কৃষকরাও আতঙ্কে। আমি বিষয়টা নিয়ে চিন্তায় পরে গেছি।
হরিরামপুর শ্যামল নিসর্গ নামের পরিবেশ সংগঠনের উপদেষ্টা তৈয়বুল আজহার বলেন, রাসেল ভাইপার সাপটি পৃথিবীর অন্যতম বিষধর ও ভয়ংকর। ইঁদুর, ব্যাঙ, টিকটিকি এই সাপের প্রধান খাদ্য। এই সাপের কামড়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন মারাও গেছেন। এই বিষধর সাপ থেকে মানুষজনকে রক্ষার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে গণসচেতনতা তৈরি করা জরুরি।

হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, হরিরামপুরের চরাঞ্চলে কৃষকদের ধান কাটার সময় সতর্কতার সঙ্গে ধান কাটতে হবে।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাসেল ভাইপারের মতো বিষধর সাপের কামড়ে চরাঞ্চলে কয়েকজন মারাও গেছে। এ বিষয়টা আমরা অবগত। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। উপজেলা পরিষদ থেকে প্রথম অবস্থায় চরাঞ্চলে কৃষকদের বিশেষ জুতার (গামবুট) ব্যাবস্থা করবো।

প্রশঙ্গত, গত ১ মার্চ রঘুনাথপুরে লালমিয়া নামের কৃষক ভুট্টা ক্ষেতে পানি দেওয়ার সময় রাসেলস ভাইপার সাপে কামড় দিলে হাসপবতালে ৫ দিন চিকিৎসার পর মৃত্যু হয়। গত বছরের ১০ নভেম্বর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বকচর মাঠের পাশে একটি রাসেল ভাইপার সাপ মেরে ফেলে এলাকার কয়েকজন। এর আগে উপজেলা সদরের বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পদ্মাপাড়ে একটি রাসেল ভাইপার ধরে এক বাল্কহেড চালক নিয়ে আসেন। এছাড়া চরাঞ্চলের লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে ফসলের ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে সাপের দংশনে এক কৃষক মারা যান। অনেকের ধারণা রাসেল ভাইপার সাপের দংশনে তার মৃত্যু হয়।